রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজে শহীদ ভরদ্বাজ মুনি স্মৃতি ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট-২০২৪ এর সমাপনী ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সম্পন্ন

হিল ভয়েস, ৭ জানুয়ারি ২০২৫, রাঙ্গামাটি: আজ ৭ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন, রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার যৌথ উদ্যোগে রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত জুম্ম শিক্ষার্থীদের মধ্যেকার পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ ও ঐক্য সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে আয়োজিত “শহীদ ভরদ্বাজ মুনি স্মৃতি ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট – ২০২৪” এর সমাপনী ও পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠান কলেজ মাঠে সম্পন্ন হয়েছে।

উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক উইন মং জলি।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অনির্বাণ বড়ুয়া, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি জিকো চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সহ-সভাপতি কবিতা চাকমা।

টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটি ২০২৪ এর আহ্বায়ক পলক চাকমার সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব এলি চাকমার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির সদস্য করুণ জ্যোতি চাকমা। এছাড়াও অনুষ্ঠানে পিসিপি ও এইচডব্লিউএফ এর কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন শাখার নেতৃবৃন্দ এবং রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের জুম্ম শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদ ভরদ্বাজ মনিসহ জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আত্মবলিদানকারী শহীদদের স্মরণে ১মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উইন মং জলি বলেন, “ভরদ্বাজ মুনি চাকমার মতো জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন সংগ্রামে যারা আত্মবলিদান দিয়েছেন তাদের আত্মত্যাগের কথা আমাদের স্মরণে রাখতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ববর্তী সময়ে অপারেশন দাবানাল ও এর পরবর্তী সময়ে অপারেশন উত্তরণ নামে সেনাশাসন জারি রয়েছে। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা, সেটেলার বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামে পুনর্বাসনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী বাসিন্দাসহ জুম্ম জনগণকে জাতিগতভাবে নির্মূলীকরণ করা ইত্যাদি কার্যক্রম এখনও বিদ্যমান। এসবের প্রতিবাদের জন্য ছাত্র সমাজের সৎ সাহস দরকার। কারণ যুগে যুগে ছাত্র সমাজ জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।”

তাই তিনি ছাত্র সমাজকে জুম্মজাতির ইতিহাস সঠিকভাবে অধ্যয়ন করে, বুকে সৎ সাহস নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন তথা জুম্মজাতির অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন সংগ্রামে শামিল হওয়া আহ্বান জানান।

তিনি আরো বলেন, ‘খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয়। তাই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার কোন বিকল্প নেই। পার্বত্যাঞ্চল থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক প্রতিভাবান জুম্ম খেলোয়াড় নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছেন। পাহাড়ে যদি যথাযথভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয়, তাহলে আরো এরকম প্রতিভাবান উঠে আসবে।’
বিশেষ অতিথি অনির্বাণ বড়ুয়া বলেন, ‘ভরদ্বাজ মুনির মতো জুম্মা জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন সংগ্রামে যারা নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের মহান আদর্শকে শিক্ষার্থীদের মনে ধারণ করতে হবে। ছাত্ররাই হল ভবিষ্যৎ সুন্দর জাতি গঠনের কান্ডারী।’

তাই ছাত্র সমাজকে এ ধরনের আন্দোলন সংগ্রামে সর্বাগ্রে থাকার প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার মাধ্যমেও নিজের মেধা, প্রতিভাকে বিকশিত করার প্রচেষ্টা রাখতে হবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুমিত্র চাকমা বলেন, ‘খেলাধুলা মানসিক প্রশান্তির প্রধান সহায়ক। খেলাধুলার মাধ্যমে শরীর ও মন দুটোই সতেজ থাকে। আর খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ, একে অপরের মধ্যে সম্পর্ক গভীর ও সুদৃঢ় করা ও নেতৃত্ব প্রদানের গুণাবলী সহ বিভিন্ন গুণাবলী অর্জন করা যায়।’

তিনি ছাত্র সমাজকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘খেলাধুলা, পড়াশোনা আর বিভিন্ন মানবিক গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমে সমাজ জাতি ও দেশ সুন্দরভাবে গঠনের জন্য ছাত্র সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।’

বিশেষ অতিথি জিকো চাকমা বলেন, ‘জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার লাভের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রথম শহীদ ভরদ্বাজ মুনির আত্মত্যাগ জুম্ম ছাত্র সমাজকে জেনে নেওয়া দরকার। শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করতে খেলাধুলার বিকল্প নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে ভরদ্বাজ মুনির মতো শহীদদের স্মৃতিতে এ ধরনের টুর্নামেন্ট আয়োজন একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। আর এ ধরনের টুর্নামেন্ট ভবিষ্যতে আরো আয়োজন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’

বিশেষ অতিথি কবিতা চাকমা বলেন, ‘জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার লাভের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রথম শহীদ ভরদ্বাজ মুনি চাকমার মতো ছাত্র ও যুব সমাজকে এই আন্দোলনে সামিল হওয়া দরকার। নিজের মেধাকে বিকশিত করতে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রয়োজন।’

তাই শিক্ষার্থীদের সবক্ষেত্রে নিজেকে সুশৃঙ্খল এবং পড়াশোনার পাশাপাশি এধরনের খেলাধুলায় অংশগ্রহণের করতে হবে বলে মন্তব্য করেন।

পরিশেষে, চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ টিমের সদস্যদের পুরষ্কার বিতরণ ও সভাপতি বক্তব্যের মাধ্যমে সমাপনী ম্যাচের সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

উল্লেখ্য, এই টুর্নামেন্টে ছাত্রদের মোট ২৪ টি টিম এবং ছাত্রীদের মোট ৮ টি টিম অংশগ্রহণ করে। ছাত্রদের চ্যাম্পিয়ন টিম পোতপোত্য ও রানার্সআপ টিম মুকুল এবং ছাত্রীদের চ্যাম্পিয়ন টিম ধনবিজ্ঞানী ও রানার্সআপ টিম শিরোপা।

স্মরণ করা যেতে পারে, পার্বত্য চট্টগ্রামের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রথম শহীদ ভরদ্বাজ মুনি চাকমা ১৯৯২ সালের ১৩ অক্টোবর পিসিপির আহুত সমাবেশে যোগদান করতে গিয়ে সেনাবাহিনী ও সেটেলার বাঙালিদের আক্রমণে শহীদ হন।

More From Author