হিল ভয়েস, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, রাঙ্গামাটি: পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি অত্যন্ত অস্বাভাবিক ও ভয়াবহ। পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৩ ভাষাভাষী ১৪টি আদিবাসী জনগোষ্ঠী আজ নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। পার্বত্যাঞ্চলের জুম্ম জনগণ একটা নিরাপত্তাহীন, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে বেঁচে আছে।
গতকাল শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগণের সামগ্রিক পরিস্থিতি আলোকে সমাজের ভূমিকা প্রসঙ্গে সুধী সমাবেশ ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সন্তু লারমা এসব কথা বলেন। রাঙামাটি শহরের নিউমার্কেট এলাকায় স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা আশিকা হলরুমে পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসী ফোরামের উদ্যোগে এ সভার আয়োজন করা হয়।
সন্তু লারমা বলেন, একটা গ্রাফিতি নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ৫১টি ভাষাভাষী আদিবাসী জাতির অস্তিত্ব এ দেশে অবাঞ্ছিত করা হয়েছে। কারণ, গ্রাফিতিতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, মুসলিম এবং আদিবাসী লেখা রয়েছে। সেখান থেকে আদিবাসী পাতাটি ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ যে একটি বহুত্ববাদের দেশ, সেটা স্বীকার করতে চায় না উগ্রবাদীরা। পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৩ ভাষাভাষী ১৪টি আদিবাসী জনগোষ্ঠী আজ নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। তাদের অস্তিত্ব শুধু ম্রিয়মাণ নয়, তারা অস্তিত্ব হারাচ্ছে। শাসকগোষ্ঠী আদিবাসীদের চাকমা, মারমা, খিয়াং, ত্রিপুরা ইত্যাদি জাতির নাম না বলে উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলে অপমানিত করছে। এই নামের মধ্যে অপমান অবজ্ঞা নিহিত আছে।’
তিনি আরও বলেন, শাসকগোষ্ঠী আদিবাসী শব্দটা ভয় পাচ্ছে। আদিবাসী শব্দ যদি জাতিসংঘের ঘোষিত নির্দেশ বা পরামর্শ অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার স্বীকার করে, তাহলে তাদের শব্দ মেনে নিয়ে আদিবাসী অধিকার সম্বলিত আন্তর্জাতিক চুক্তিতে অনুস্বাক্ষর করতে হবে। তাদের ভাবনা-দুর্ভাবনা হলো আদিবাসীদের জাতিসংঘের ঘোষিত অধিকারগুলো দিতে হবে। আসলে আদিবাসী কোনো জাতিগোষ্ঠীর নাম নয়, আদিবাসী হচ্ছে জনগোষ্ঠীর শব্দ। তারা আদিবাসী, যারা বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে জীবনধারণ করে। এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো আপনাদের জানা আছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য অঞ্চল আদিবাসী ফোরামের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কেএস মং মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক অংচ মং মারমা, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মধু মঙ্গল চাকমা, সাহিত্যিক শিশির চাকমা, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সভাপতি থোয়াই অং মারমা, পার্বত্য অঞ্চল আদিবাসী ফোরামের ছাত্র ও যুববিষয়ক সম্পাদক লেলুং খুমি, আইনজীবী দীননাথ তঞ্চঙ্গ্যা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মনোজ বাহাদুর গুর্খা, পার্বত্য অঞ্চল আদিবাসী ফোরামের সদস্য নমিতা চাকমা, সাধারণ সম্পাদক ইন্টুমনি তালুকদার প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ বছর ধরে চুক্তি বাস্তবায়নের কোনো কাজ করেনি। সরকার জনসংহতি সমিতিকে (জেএসএস) মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে।