হিল ভয়েস, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলাধীন জুরাছড়ি উপজেলার ৪নং দুমদুম্যা ইউনিয়নের বড়কলক গ্রামে বিলাইছড়ি উপজেলাধীন ৩২ বীর দীঘলছড়ি জোনের অধীনে থাকা শহীদ আতিয়ার ক্যাম্পের(বরকলক) সুবেদার মোহাম্মদ সাইদ এর নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জনের একটি সেনা টহল দল কর্তৃক এক নিরীহ জুম্মকে মারধর ও এক জনের বাড়িতে তল্লাশি এবং হুমকি প্রদান করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
গতকাল, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার আনুমানিক রাত ৭:৩০ টার দিকে বিলাইছড়ি উপজেলাধীন ৩২ বীর দীঘলছড়ি জোনের অধীনে থাকা শহীদ আতিয়ার ক্যাম্পের(বরকলক) সুবেদার মোহাম্মদ সাইদ এর নেতৃত্বে উক্ত ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল আনুমানিক সন্ধ্যা ৬:০০ টার দিকে বিলাইছড়ি উপজেলাধীন ৩২ বীর দীঘলছড়ি জোনের অধীনে থাকা শহীদ আতিয়ার ক্যাম্পের(বরকলক) সুবেদার মোহাম্মদ সাইদ এর নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জনের একটি সেনা টহল দল বরকলক বাজারে আসে। সেখানে স্থানীয় দোকানদার ব্যতীত অন্য কোন লোকজন না পেয়ে দোকানদারদের জিজ্ঞাসা করে যে, প্রতিদিন এখানে অনেক লোকজন থাকে আজকে কেউ নেয় কেন? দোকানদারেরা প্রতিউত্তরে শীত বেশি তাই হয়তো সবাই তারাতাড়ি বাড়িতে গিয়েছে বলে উত্তরে বলেন। তারপর ভাগ্য চাকমাকে চিনেন কিনা জানতে চায় সেনাবাহিনী। এরপর কিছুক্ষণ দোকানে বসার পরে সেখান থেকে সুর্য্যসেন চাকমার বাড়ির দিকে রওনা দেয় সেনা টহল দল।
তারপর সুর্য্যসেন চাকমার বাড়ির দিকে যাওয়ার পথিমধ্যে বিমল চাকমাকে (বড়পেদা) পেয়ে জিজ্ঞেসা করে যে, সুর্য্যসেন চাকমার বাড়ি কোথায়? তাকে চেনে কিনা? উত্তরে বিমল চাকমা (বড়পেদা) চিনিনা বলায় তাকে বেধরক মারধর করে সেনা টহল দলের সদস্যরা।
মারধরের শিকার বিমল চাকমা (বড়পেদা); পিতা: মেঘনাথ চাকমা; জুড়াছড়ির, ৪নং দুমদুম্যা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড বড়কলক পাড়ার বাসিন্দা।
এরপর আনুমানিক রাত ৭:৪৫ টার দিকে সুর্য্যসেন চাকমার বাড়ি ঘেরাও করে এবং বাড়ির ভিতরে ঢুকে ব্যাপক তল্লাসি চালিয়ে জিনিসপত্র তছনছ করে দেয়। তল্লাসির সময় ভুক্তভোগী সূর্যসেন চাকমা বাড়িতে না থাকায় তার স্ত্রীকে হুমকি দেন যে ৩ দিনের ভেতরে ক্যাম্পে গিয়ে দেখা না করলে বড় ধরনের অঘটন ঘটবে বলে হুমকি প্রদান করে টহল দলটি ক্যাম্পে ফিরে যায় বলে জানা গেছে।
এছাড়াও জুরাছড়ি উপজেলাধীন ৪নং দুমদুম্যা ইউনিয়নের ২নং, ৩নং ওয়ার্ডের বেশ কয়েকজনকে খোঁজ নিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে জানা যায়। খোজ নেওয়া ব্যক্তিরা হলেন :- সুমিত চাকমা ভাগ্য; সুর্য্যসেন চাকমা ও তার ছেলে মিঠুন চাকমা; রাবণ চাকমা(২৮), পিতা: কল্প চাকমা, সাং- হরিণ হাট ছড়া; বাজা চাকমা(৩০), পিতা- সোনায় চাকমা, সাং- হরিণহাট ছড়া; অমর কান্তি চাকমা(৩৩), পিতা- রুবেন্দ্র চাকমা, সাং- পাগুজ্জে চুক মং ছড়ি; মাইকেল চাকমা (২৮), পিতা- সম্মবু চাকমা, সাং- হরিণ হাট ছড়া; লক্ষীধন চাকমা(৩২), পিতা- আনন্দ লাল চাকমা, সাং- হরিণ হাট ছড়া; ভদ্র চাকমা(২৫), পিতা- মরতচ চাকমা, সাং- বামেছড়া গবছড়ি; পরানধন চাকমা(২৬), পিতা- দয়া কুমার চাকমা, সাং- হরিণ হাট ছড়া; অমরধন চাকমা(৩৫), পিতা- মতিলাল চাকমা, সাং- লাম্বাবাক; হুদয় চাকমা(৩০), পিতা- দাবারাম চাকমা, সাং- হরিণহাট ছড়া; সুন্দর মুনি চাকনা, পিতা- জানক ধন চাকমা, সাং- শালবাগান ৭নং ওয়ার্ড, ১নং বিলাইছড়ি ইউনিয়ন; প্রমেশ চাকমাসহ উক্ত ব্যক্তিদের গ্রামবাসীদের কাছ থেকে খোঁজ নিচ্ছে বলে জানা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক গ্রামবাসী জানান, বেশ কয়েকদিন ধরে সেনাবাহিনীরা গ্রামে টহল অভিযান পরিচালনা করছে আর যাকে সন্দেহজনক হিসেবে মনে করে তাকে নানা ধরনের জিজ্ঞাসা করে হয়রানি করে। এতে গ্রামবাসীরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে বলে জানান তিনি।