আদিবাসী ছাত্র-জনতার উপর হামলার বিচারের দাবিতে চট্টগ্রামে সমাবেশ ও বিক্ষোভ

হিল ভয়েস, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, চট্টগ্রাম: সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতার এনসিটিবি ভবন ঘেরাও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে স্টুডেন্টস্ ফর সভারেন্টি নামক মুসলিম সেটেলার, উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠী কর্তৃক সন্ত্রাসী হামলার বিচারের দাবিতে স্বররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিমুখে শান্তিপূর্ণ মিছিলে বাধা প্রদান ও লাঠিচার্জ এর প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতারপূর্বক যথাযথ বিচারের দাবিতে “সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা চট্টগ্রাম”র উদ্যোগে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

আজ শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রামে চেরাগী পাহাড় মোড়ে, এই সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলটি আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন রিপুল চাকমা, শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সমাবেশে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন শুভ দেবনাথ সাধারণ সম্পাদক, ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলা সংসদ; মিরাজ উদ্দিন সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম জেলা; ছাত্রনেতা সুজন চাকমা ঝিমিট, শ্রমিকনেতা অনিল চাকমা এবং আল কাদেরী জয়, ইনচার্জ চট্টগ্রাম জেলা, বাসদ প্রমুখ।

ছাত্রনেতা সৌরভ চাকমার সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন বিনিময় চাকমা, শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

রিপুল চাকমা বলেন, পাহাড়ে জুম্ম জনগনের উপর সেটেলাররা হামলা চালিয়ে আসা এতদিন চাপা ছিলো আজ তারা ঢাকায় গিয়েও আদিবাসীদের উপর হামলা চালিয়েছে। ৫ আগস্টের পরে ভেবেছিলাম সকল জাতিসত্তারা নিজ নিজ অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকবে, স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যারা কিনা জুলাই অভ্যুত্থানের ম্যান্ডেড নিয়ে ক্ষমতায় তাদের আমলেও আদিবাসীরা নিগৃহিত। ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তির ২৭ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে কিন্তু কোন সরকারই-রাষ্ট্র তা বাস্তবায়ন করতে আগ্রহী নয়।

শুভ দেবনাথ বলেন, ঢাকায় আদিবাসীদের উপর যে হামলা করা হয়েছিল সেখানে পুলিশ প্রশাসন ছিল নিরব। এ দেশে বেঁচে থাকার অধিকার কেবল বাঙালিদের নয়, আদিবাসীদেরও রয়েছে। বাংলাদেশ কেবল এক জাতির দেশ নয়, এটা বহু জাতির দেশ। অনতিবিলম্বে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।

মিরাজ উদ্দীন বলেন, ১৬ বছর ধরে একটি ফ্যাসিস্ট দল ছিল। দেশে কেউ অধিকারের কথা বলতে পারেনি। ৫ আগস্টের পরে এ দেশের মানুষ ভেবেছিল তারা নিজেদের অধিকারের কথা বলতে পারবে। কিন্তু ঢাকায় আদিবাসীদের উপর যে পরিকল্পিত হামলা তাতে করে এ দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন। আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধানে তাদের অধিকারের কথা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

সুজন চাকমা বলেন, বাংলাদেশে বাঙালি জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষও বসবাস করে। তারা নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। এ দেশের একটি গোষ্ঠী মনে করে আদিবাসীরা দেশদ্রোহী, বিচ্ছিন্নতাবাদী, বাংলাদেশকে ভাগ করতে চায়, কিন্তু তা সত্য নয়। পাহাড়ে আদিবাসীদের অধিকার নিশ্চিত করতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সংবিধানে আদিবাসীদের অধিকার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

অনিল চাকমা বলেন, বিগত সরকারের আমলে আদিবাসীরা তাদের অধিকারের কথা বলতে পারেনি। আওয়ামীলীগের আমলে অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারের আমলেও আদিবাসীরা নিরাপদ নয়। ঢাকায় আদিবাসী জনতার উপর যে পরিকল্পিত হামলা, সে হামলা অত্যন্ত নিন্দাজনক। আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সরকারকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

আল কাদেরী জয় বলেন, পাঠ্য বইয়ে আদিবাসী শব্দ সম্বলিত গ্রাফিতি একটি গোষ্ঠী মেনে নিতে পারেনি। সেজন্য তারা ঢাকায় আদিবাসী জনতার উপর পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে। এদেশে বাঙালির পাশাপাশি আদিবাসীদেরও অধিকার রয়েছে। তারাও নিজের অধিকার নিয়ে এদেশে বেঁচে থাকতে চায়।

শুরুতে চেরাগী পাহাড় হতে প্রেসক্লাব হয়ে পুনরায় চেরাগী পাহাড়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশ শুরু হয় এবং সভাপতির বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশটি সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

More From Author