হিল ভয়েস, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, রাবি: আদিবাসীদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কালচার একাডেমীর গবেষণা কর্মকর্তা বেনজামিন টুডু’র অপসারণের দাবি ও নবনিযুক্ত পরিচালক হরেন্দ্রনাথ সিং এর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগের প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে আদিবাসী ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, রাজশাহী মহানগর শাখার উদ্যোগে এই কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে সভাপতিত্বে করেন আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অনিল গজাড় ও কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য স্বপন তিগ্যার সঞ্চালনায় বক্তারা বলেন, ‘আমরা আদিবাসী’, ‘আদিবাসী হিসেবে সাংবিধান স্বীকৃতি চাই’, ‘ষড়যন্ত্রকারী বেনজামিন টুডুর শাস্তি চাই’, ‘বৃত্তির টাকা লোপাটকারি বেনজামিন টুডুর অপসারণ চাই’, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কালচার একাডেমির নাম আদিবাসী কালচার একাডেমি চাই’, ‘ সমতল আদিবাসীদের জন্য স্বাধীন ভূমি কমিশন ও পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে’ ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্লাকার্ড প্রদর্শন করা হয়।
বক্তারা বলেন আদিবাসী ছাত্র পরিষদ, ‘দীর্ঘদিন ধরে অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে আদিবাসী ছাত্ররা। হরেন্দ্রনাথ সিং এর বিরুদ্ধে যারা মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে এসেছেন তাদেরকে আমরা ধিক্কার জানায়। বেনজামিন টুডুর ছত্রছায়ায় আপনারা যারা একজন যোগ্য ব্যাক্তির বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছেন তারা কিসের ভিত্তিতে এসব করেন আমাদের সব জানা আছে।
এ সময় রাজশাহী জেলা আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি উপেন রবিদাস বলেন,’আমরা যদি বৈষম্যহীন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই তবে এই বাংলাদেশের সবাইকে স্বীকৃতি দিতে হবে। আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। পাহাড়ে যেসব হামলা হয়েছে তার বিচার করতে হবে। সমতলে যে ভূমি সমস্যা রয়েছে সেজন্য ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে। আদিবাসীদের জন্য আমরা কালচারাল একাডেমি চেয়েছিলাম। সেই একাডেমির নাম দেয়া হয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কালচার একাডেমি। যার ফলে আদিবাসীরা সেখানে সম্পৃক্ত হতে পারছেন না। আমরা দাবি জানাই এর নাম আদিবাসী কালচার একাডেমি করা হোক।’
মানববন্ধনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাকিব হোসেন বলেন, ‘৫ আগষ্টের পূর্বের বাংলাদেশ আমরা আর দেখতে চাই না। স্বাধীনতা যুদ্ধে পাহাড়ী থেকে সমতল সকল স্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য যখন সংসদে দাবি জানানো হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমান তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
বর্তমান সময়ে দেশের সংস্কারের যে বন্দোবস্ত চলছে সেখানে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। হরেন্দ্রনাথ সিং আওয়ামী ফ্যাসিবাদি সময়ে নির্যাতনের শিকার একজন মানুষ। স্বাধীন দেশে সবাই মত প্রকাশের অধিকার রাখে এবং নিজস্ব মতাদর্শ লালন করতে পারে। হরেন্দনাথ সিং জাতির অধিকার আদায়ে সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই।’
এ সময় আরও বক্তব্য দেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক নকুল পাহান, সদস্য ও নিয়ামতপুর উপজেলার সভাপতি অজিত কুমার মুন্ডা, পোরশা উপজেলার সাধারণ সম্পাদক আইচন পাহান, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রাজশাহী মহানগর কমিটির সভাপতি বিজয় চাকমা, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শীত কুমার উরাও, দপ্তর সম্পাদক রমেন পাহান।
এছাড়াও মানবন্ধনে উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইন্দ্রজিত মুন্ডা, আদিবাসী ছাত্র রাবি কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিথী এক্কা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীনেশ সরদার, সহ-সাধারণ সম্পাদক দ্রৌপদী উরাও, দপ্তর সম্পাদক অন্তত কর্মকার, ক্রীড়া সম্পাদক দীপক কুমার সিং, প্রচার সম্পাদক সোহাগ বড়াইক, উন্নয়ন সম্পাদক পলাশ মাহাতোসহ প্রমূখ।