সহকারী কোম্পানি কম্যান্ডার মিটন চাকমার মৃত্যু নিয়ে ইউপিডিএফের অপপ্রচার

রবি ত্রিপুরা

 

হিল ভয়েস, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪: গত ১০ই নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মিটন চাকমার নেতৃত্বে ইউপিডিএফের এক সশস্ত্র গ্রুপ কর্তৃক চুক্তি পক্ষ গ্রুপের উপর সশস্ত্র হামলা করতে গিয়ে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হন ইউপিডিএফের মিটন চাকমা।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে যে, সেদিন রবিবার ইউপিডিএফের সহকারী কোম্পানি কম্যান্ডার মিটন চাকমা ১৮ জনের একটি সশস্ত্র গ্রুপ নিয়ে পানছড়ির ভারতবর্ষ পাড়ায় চুক্তি পক্ষ গ্রুপকে এ্যাম্বুশ করে। উক্ত এ্যাম্বুশে মিটন চাকমা ছিলেন অগ্রভাগে।

সেদিন সকালে চুক্তি পক্ষ গ্রুপের সদস্যরা ইউপিডিএফের সশস্ত্র গ্রুপের সদস্যদের এ্যাম্বুশ এলাকায় ঢুকে পড়লে প্রথমে মিটন চাকমা প্রতিপক্ষের উপর ব্রাশ ফায়ার করে। সাথে সাথে চুক্তি পক্ষ গ্রুপের সদস্যরা পাল্টা গুলি বর্ষণ শুরু করে। এতে মিটন চাকমাসহ ইউপিডিএফের ৬ জন আহত হয়। আহত হওয়ার কিছুক্ষণ পরই মিটন চাকমা মৃত্যু বরণ করেন।

এরপর মিটন চাকমার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইউপিডিএফ অপপ্রচার শুরু করে। মিটন চাকমা যে ইউপিডিএফের সশস্ত্র গ্রুপের সদস্য এবং সহকারী কোম্পানি কম্যান্ডার ছিলেন, তা আড়াল করে তাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ও ইউপিডিএফের সংগঠক হিসেবে প্রচার করতে থাকে।

মিটন চাকমাকে নিরস্ত্র, নিরীহ ও সাংগঠনিক কর্মী সাজিয়ে এবং তিনি যে একজন চুক্তি বিরোধী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সদস্য তা ধামাচাপা দিয়ে তার প্রতি সাধারণ মানুষের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করতে থাকে ইউপিডিএফ। অপরপক্ষে “সন্তু লারমার লেলিয়ে দেয়া অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলায়” নিহত হয়েছে বলে অপপ্রচার করে জনসংহতি সমিতিকে দোষারোপ করতে থাকে।

উল্লেখ্য যে, সেনাবাহিনীর সাথে সাম্প্রতিক বৈঠকের পর গত ১১ অক্টোবর ২০২৪ ইউপিডিএফ পানছড়ির ধুধুকছড়ার পার্শ্ববর্তী হাতিমুড়া এলাকার চুক্তি পক্ষ গ্রুপের উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এরপর আবার ১৩ অক্টোবর ২০২৪ পানছড়ির বাত্যা পাড়ায় দ্বিতীয় বার হামলা করে ইউপিডিএফ। এতে করে সশস্ত্র সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠে।

শুধু তাই নয়, ১৪ অক্টোবর ২০২৪ ইউপিডিএফের একটি দল সুভলং হয়ে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ দিকে বরকল ও জুরাছড়ি সীমান্তবর্তী গ্রাম বেতছড়িতে গিয়েছিল চুক্তি পক্ষ জনগণের উপর হামলা করতে।

এর আগে ৯ জুন ২০২২ সরকারের নিকট পেশ করার জন্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল হক নামক একজন মধ্যস্থতাকারীর কাছে তথাকথিত দাবিনামা পেশ করার পর পরই ১১ জুন ২০২২ ইউপিডিএফের সশস্ত্র সদস্যরা খাগড়াছড়ির পানছড়িতে পার্বত্য চুক্তি পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের উপর সশস্ত্র হামলা শুরু করে। এভাবেই ইউপিডিএফ সেনাবাহিনীর পৃষ্টপোষকতায় ও মদদে জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে তাদের সশস্ত্র তৎপরতা চালিয়ে আসছে।

পক্ষান্তরে এর দায় জনসংহতি সমিতির উপর চাপানোর জন্য তথাকথিত “ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত” বন্ধের দাবিতে জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে মিটিং-মিছিল আয়োজন করতে সাধারণ নিরীহ নিরস্ত্র গ্রামবাসীদেরকে বাধ্য করে চলেছে। এমনকি এতে তারা অনৈতিক ও অবিবেচকভাবে শিশু-কিশোরদেরও অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করছে। সেই মিটিং-মিছিলে কোনো গ্রামবাসী যোগদান না করলে তাকে ১,০০০ টাকা জরিমানা, এক বান্ডিল হাঙ্গর মাছ ও একটা কোদাল নিয়ে তাদের কাছে হাজির হতে হবে বলে হুমকি দেয়।

More From Author