পিসিপি রাঙ্গামাটি শহর শাখার ২৬তম বার্ষিক শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিল সম্পন্ন

হিল ভয়েস, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, রাঙ্গামাটি: আজ ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে সকাল ১০ ঘটিকায় “সকল প্রকার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে জুম্ম ছাত্র সমাজ অধিকতর সামিল হউন” স্লোগানে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ রাঙ্গামাটি শহর শাখার ২৬তম বার্ষিক শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।

পিসিপি রাঙ্গামাটি শহর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুরেশ চাকমার সঞ্চালনায় এবং সভাপতি ম্যাগলিন চাকমার সভাপতিত্বে উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী অরুণ বিকাশ ত্রিপুরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি রাঙ্গামাটি সদর থানা কমিটির সভাপতি রিতেশ চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুমেন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সহ-সভাপতি কবিতা চাকমা।

আলোচনা সভার শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আত্মবলিদানকারী বীরদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন পিসিপি রাঙ্গামাটি শহর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সনেট চাকমা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অরুণ বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, যুগে-যুগে, অঞ্চলে-অঞ্চলে জাতীয় অস্তিত্ব সংকটে প্রতিবারই ছাত্রসমাজ একত্রিত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসেও যেকোন সমস্যা মোকাবিলায় ছাত্র ও যুবসমাজের অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান তরুণ ছাত্র সমাজকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি নিয়ে অনুধাবন করতে হবে। তারা যদি চুক্তি সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত না থাকে তবে তারা ভুল পথে ধাবিত হতে পারে। তাদের পিসিপির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও তার নীতি-আদর্শও জানা থাকতে হবে। আমাদের আজকের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার যে আন্দোলন সেই আন্দোলনের ইতিহাস, সর্বোপরী পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিষয়ে আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত জুম্মদের মাঝে ব্যাপকভাবে আলোচনা করতে হবে।

ছাত্রনেতা রুমেন চাকমা বলেন, শিক্ষিত তরুণ সমাজ যেকোনো আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে । একইভাবে জুম্মদের স্বার্থরক্ষায় আমাদের তরুণ জুম্ম ছাত্রসমাজের অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। লড়াই সংগ্রাম ব্যতিত আমাদের জাতীয় মুক্তি ও আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে জুম্মদের উপর যে সাম্প্রদায়িক হামলা করা হয় তার বিচার আমরা এখনও দেখতে পাইনি যেটা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিচার ব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাস ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। বর্তমানে ইউপিডিএফ ভাড়াটে লোক লেলিয়ে দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে নিয়ে যে নানাবিধ ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে সেটা ছাত্রসমাজকে প্রতিহত করার আহ্বান জানান। তিনি জুম্মদের আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে তরুণ জুম্ম ছাত্র-যুবসমাজকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।

যুবনেতা রিতেশ চাকমা বলেন, ব্যক্তিস্বার্থ পূরণ করার লক্ষ্যে শিক্ষিত জুম্ম সমাজ ভাগ হয়ে যাচ্ছে। এই বিষয়ে শিক্ষিত জুম্ম ছাত্র সমাজ ভাবতে হবে। তরুণদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাজনৈতিক জ্ঞানে এগিয়ে আসতে হবে।

সুমন চাকমা বলেন, রাজার শাসনামলেও আমরা আত্মমর্যাদা ও স্বাধীনভাবে চলতে পেরেছি। কিন্তু বেজাতীয় শাসনামলে আগের মতো বর্তমানেও জুম্মদেরকে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই সংগ্রাম করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই অঞ্চলে যে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এবং ট্রাইবেল কনভেনশন স্থাপন করা হয়েছে সেগুলোও এই অঞ্চলের স্থায়ী অধিবাসীদের সুফল বয়ে আনতে পারেনি। পার্বত্য অঞ্চলে একমাত্র সমাধান আসতে পারে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কবিতা চাকমা বলেন, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারকে প্রতিহত করতে এদেশের ছাত্র-জনতা অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছে। তেমনি জুম্মদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের জুম্ম ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের সামিল হতে হবে।

আলোচনা সভা শেষে সুরেশ চাকমাকে সভাপতি, অনন্ত চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক এবং প্রেমর কান্তি চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ রাঙ্গামাটি শহর শাখা কমিটি গঠন করা হয়। নবগঠিত কমিটির শপথবাক্য পাঠ করান পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি খোকন চাকমা।

More From Author