১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থা: ৮ম পর্ব

হিল ভয়েস, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, বিশেষ প্রতিবেদক:

আভ্যন্তরীণ উপজাতীয় উদ্বাস্তু পুনর্বাসন

পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

পার্বত্য চুক্তির ‘ঘ’ খন্ডের ১ ও ২নং ধারা মোতাবেক তিন পার্বত্য জেলার আভ্যন্তরীণ উপজাতীয় উদ্বাস্তুদের পরিচিহ্নিত করে টাস্ক ফোর্সের মাধ্যমে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিধান থাকলেও আভ্যন্তরীণ উপজাতীয় উদ্বাস্তুদের এখনো পুনর্বাসন করা হয়নি।

২৭ জুন ১৯৯৮ তারিখ খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত টাস্ক ফোর্সের তৃতীয় সভায় পার্বত্য জেলার আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু বলতে যে সংজ্ঞা নির্ধারিত হয় তা নিম্নরূপ-

“১৯৭৫ সনের ১৫ আগষ্ট হতে ১৯৯২ সনের ১০ আগষ্ট (অস্ত্র বিরতির শুরুর দিন পর্যন্ত) পার্বত্য চট্টগ্রামে (খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান) দীর্ঘ অশান্ত ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে যে সকল উপজাতি নিজ গ্রাম, মৌজা, অঞ্চল ত্যাগ করে স্বদেশের মধ্যে অন্যত্র চলে গেছেন বা চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন তারা আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হিসাবে বিবেচিত হবেন।”

১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে টাস্ক ফোর্স সভায় আভ্যন্তরীণ উপজাতীয় উদ্বাস্তু পরিবারদেরকে রেশনসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা প্রদানের জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং উক্ত সিদ্ধান্ত সম্বলিত কার্যবিবরণী ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে অনুষ্ঠিত টাস্ক ফোর্স সভায় অনুমোদিত হয়। তবে উক্ত সিদ্ধান্ত এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।

উল্লেখ্য যে, ১৯৯৬-২০০১ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দীপঙ্কর তালুকদারকে টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। চুক্তিতে কেবলমাত্র আভ্যন্তরীণ উপজাতীয় উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের কথা বুঝানো হয়ে থাকলেও সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বসতিদানকারী সেটেলার বাঙালিদেরকেও আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হিসেবে গণ্য করে পার্বত্য চট্টগ্রামে পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পরিপন্থী এই উদ্যোগের প্রতিবাদে জনসংহতি সমিতি ও জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধিদ্বয় টাস্কফোর্সের নবম সভা চলাকালে ওয়াকআউট করেন।

পরবর্তীতে জনসংহতি সমিতি ও জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতে দীপঙ্কর তালুকদারের সভাপতিত্বে ১৫ মে ২০০০ অনুষ্ঠিত টাস্ক ফোর্সের অবৈধ একাদশ সভায় একতরফাভাবে ৯০,২০৮ উপজাতীয় পরিবার এবং ৩৮,১৫৬ অউপজাতীয় সেটেলার পরিবারকে আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অবশেষে পার্বত্যবাসীর প্রবল প্রতিবাদের মুখে তৎকালীন টাস্ক ফোর্সের কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়ে।

বস্তুত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির স্বাক্ষরের পর বিগত ২৭ বছরেও চুক্তির মৌলিক বিষয়সহ দুই-তৃতীয়াংশ ধারা অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে।

More From Author