হিল ভয়েস, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, বিশেষ প্রতিবেদক:
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ
পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
পার্বত্য চুক্তির ‘খ’ ও ‘গ’ খন্ডের বিধানাবলীর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এবং রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সম্বলিত বিশেষ শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের বিধান করা হয়েছে। কিন্তু চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশেষ শাসনব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করতে পারেনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সংক্রান্ত চুক্তির ‘গ’ খন্ডের ১৪টি ধারার সবক’টি বাস্তবায়িত হয়েছে বলে বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সংক্রান্ত চুক্তির ‘গ’ খন্ডের গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো নিম্নে উত্থাপন করা গেল, যেগুলো সরকার ‘বাস্তবায়িত’ হয়েছে মর্মে দাবি করছে, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এসব ধারা বাস্তবায়িত হয়নি।
“পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্যগণের দ্বারা পরোক্ষভাবে আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান-সদস্য নির্বাচিত হবেন” মর্মে চুক্তির ‘গ’ খন্ডের ২নং ধারায় যে উল্লেখ রয়েছে তা বাস্তবায়িত হয়েছে বলে সরকার দাবি করছে। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর ২৭ বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনো তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি এবং নির্বাচিত পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠিত না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়নি।
আরো উল্লেখ্য যে, আঞ্চলিক পরিষদ কর্তৃক পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনে পরিচালিত সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড সমন্বয় সাধন করাসহ তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদের আওতাধীন ও ইহাদের উপর অর্পিত বিষয়াদি সার্বিক তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় করার বিধানাবলী আঞ্চলিক পরিষদ আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও আঞ্চলিক পরিষদের তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় করার ক্ষমতা কার্যকর করা হয়নি। এ যাবৎ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতার কারণে আঞ্চলিক পরিষদ কর্তৃক তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের উন্নয়ন কর্মকান্ডসহ যাবতীয় বিষয়াদি তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় সাধন করা যাচ্ছে না।
তিন পার্বত্য জেলার সাধারণ প্রশাসন, আইন শৃংখলা ও উন্নয়নের ব্যাপারে আঞ্চলিক পরিষদ সমন্বয় সাধন ও তত্ত্বাবধান করার বিধানটি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও কার্যকর করা হয়নি। অপারেশন উত্তরণের পাশাপাশি তিন পার্বত্য জেলার ডেপুটি কমিশনারগণ পার্বত্য অঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ১৯০০ অনুযায়ী পূর্বেকার মতো জেলার সাধারণ প্রশাসন সম্পর্কিত সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করে চলেছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত আইন প্রণয়নে আঞ্চলিক পরিষদের প্রাধিকার সংক্রান্ত চুক্তির ‘গ’ খন্ডের ১৩নং ধারা পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইনে সংযোজনের মাধ্যমে ধারাটিকে বাস্তবায়িত বলে মনে করে সরকার। বস্তুত চুক্তির এই ধারা অনুসরণ করা হচ্ছে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আইন প্রণয়নে সরকার আঞ্চলিক পরিষদের পরামর্শ গ্রহণ করছে না বা পরামর্শ নেয়া হলেও তা উপেক্ষা করা হচ্ছে। যেমন- পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন ২০১৪, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন ২০১৪ প্রণয়নের সময় আঞ্চলিক পরিষদের পরামর্শ/মতামত উপেক্ষা করা হয়।
বস্তুত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির স্বাক্ষরের পর বিগত ২৭ বছরেও চুক্তির মৌলিক বিষয়সহ দুই-তৃতীয়াংশ ধারা অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে।