১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থা: ৪র্থ পর্ব

হিল ভয়েস, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, বিশেষ প্রতিবেদক:

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি

পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

পার্বত্য চুক্তির ‘ক’ খন্ডের ৩নং ধারায় চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পরিবীক্ষণ করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী কতৃর্ক মনোনীত একজন প্রতিনিধিকে আহ্বায়ক এবং এই চুক্তির আওতায় গঠিত টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতিকে সদস্য করে একটি চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করার বিধান অনুযায়ী এ কমিটি এ যাবৎ গঠিত হয়ে আসছে।

কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির স্বতন্ত্র কোন দপ্তর নেই, কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালনে কোন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়নি এবং কমিটির সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোন তহবিল প্রদান করা হয়নি। ফলে চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ করার কোন সুযোগ নেই।

আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটিসহ বিভিন্ন কমিটি পুনর্গঠিত করা হয়েছে বটে, কিন্তু এসব কমিটির সিদ্ধান্তবলী বাস্তবায়নে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির অধিকাংশ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। পক্ষান্তরে সরকার কমিটির সিদ্ধান্তের বিপরীতে চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে।

ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর আজ অবধি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি পুনর্গঠিত হয়নি। ফলে এই কমিটির কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে বলে বিবেচনা করা যায়।

এপ্রেক্ষিতে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের স্বার্থে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক জনসংহতি সমিতির সাথে আলোচনা করে অচিরেই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক পদে একজন সুযোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া জরুরী বলে বিবেচনা করা যায়। আহ্বায়ক পদে নিয়োগ দেয়ার পর চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি সভায় বসে চুক্তির অবাস্তবায়িত বিষয়সমূহ নির্ধারণ করা যেতে পারে। অবাস্তবায়িত বিষয়সমূহ বাস্তবায়নের জন্য চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটিতে সময়সূচি ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) গ্রহণ করা অতীব জরুরী। সেই রোডম্যাপ অনুসারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে পারে।

এছাড়া চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ও চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া দ্রুত ও যথাযথ করার্থে কমিটির জন্য নিজস্ব কার্যালয়, জনবল ও তহবিল ব্যবস্থা করা আবশ্যক এবং একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক পদে নিযুক্ত করা বাঞ্ছনীয়।

বস্তুত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির স্বাক্ষরের পর বিগত ২৭ বছরেও চুক্তির মৌলিক বিষয়সহ দুই-তৃতীয়াংশ ধারা অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে।

More From Author