হিল ভয়েস, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, রাজশাহী: আজ (২৫ নভেম্বর) “জুম্ম জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ঐক্য ও সংহতি গড়ে তুলি, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে ছাত্রসমাজ অধিকতর সামিল হউন” স্লোগানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর রাজশাহী মহানগর শাখার ২৩তম বার্ষিক শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নিপন ত্রিপুরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক জিকো চাকমা ও অধিকারকর্মী রিয়েল দেওয়ান। কাউন্সিল অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন পিসিপি রাজশাহী মহানগর শাখার দপ্তর সম্পাদক উজ্জ্বল তঞ্চঙ্গ্যা এবং সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের রাজশাহী মহানগর শাখার তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বিজয় চাকমা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সদস্য প্রাচুর্য্য চাকমা।
পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নিপন ত্রিপুরা তার বক্তব্যে বলেন, মানুষ স্বভাবতই রাজনৈতিক জীব। কেউ রাজনীতি পরিবেশের বাইরে নয়। আমাদের চারপাশে যা কিছু সংঘটিত হয় তার সবই রাজনীতির অধিভুক্ত। রাজনীতি হল এমন একটা পন্থা যার মাধ্যমে নিজস্ব মতাদর্শের আলোকে সিস্টেম পরিচালনা করা যায়। আজকে পার্বত্য চট্টগ্রামে গোটা সিস্টেমটাই নিয়ন্ত্রণ করছে রাজনীতি। পার্বত্য সমস্যার মূলে যেমন রাজনীতি, সমাধানের মূলটাও রাজনীতিভাবে হতে হবে। কাজেই আমাদের রাজনীতি করে যেতে হবে। রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে একমাত্র রাজনৈতিক সংগঠন হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। যার নীতি আদর্শ ও উদ্দেশ্য লক্ষ্য আছে।
তিনি আরও বলেন, একদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সেটেলার সমস্যা, ভুমি বেদখল, সেনাশাসনের নির্বিচারে চলছে অপরদিকে চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পরিষদ থেকে সন্তু লারমাকে হটাতে ব্যস্ত। আসলে ইউপিডিএফ কি চায় পাহাড়ের জনগণ জানে না। তারা মূলত চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে ব্যাহত করতে মরিয়া হয়েছে। পাহাড় ছাড়িয়ে তারা এখন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে তারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই অপপ্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু তাদের অপচেষ্টা সফল হবে না। শাসকগোষ্ঠীর “ভাগ কর শাসন কর” নীতি প্রয়োগ করে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী সৃষ্টি করে নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে তিনি জুম্ম শিক্ষার্থীদের সচেতন থাকার আহ্বান জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক জিকো চাকমা বলেন, পাহাড়ের একজন সচেতন শিক্ষার্থী হিসেবে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থা জানতে হবে। রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাস জানতে হবে। এ জন্য অধ্যয়নের প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের লড়াই করতে হবে। লড়াইয়ের জন্য ঐক্যের একমাত্র আদর্শিক ভিত্তি জুম্ম জাতীয়তাবাদ। তারই ভিত্তিতেই জুম্ম জনগণ ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। সচেতন ছাত্র সমাজ এটিকে ধারণ করে ঐক্য মজবুত ও টেকসই করবে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানান।
আলোচনা সভায় অধিকারকর্মী রিয়েল দেওয়ান বলেন, ছাত্র সমাজকে আরও বেশি সুসংহত ও সুসংগঠিত হতে হবে । তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিরোধিতাকারীদের ঐক্য নিয়ে নাটক বন্ধ করে প্রকৃত রাজনৈতিক আন্দোলন করার আহবান জানান। সর্বোপরি জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
আলোচনা সভা শেষে বিজয় চাকমাকে সভাপতি, সুমন চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও সজীব চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট নবনির্বাচিত পিসিপি, রাজশাহী মহানগর শাখাকে শপথ বাক্য পাঠ করান পিসিপি,কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক জিকো চাকমা।
সভাপতির বক্তব্যে বিজয় চাকমা বলেন, কেউই নিরপেক্ষ নয়। সচেতন এবং অবচেতনভাবে ব্যক্তি কারো পক্ষপাত সে নিবেই। তিনি বিভেদ সৃষ্টিকারীদের প্রতি সকলকে সচেতন থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।