মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা

হিল ভয়েস, ৫ নভেম্বর ২০২৪, রাঙ্গামাটি: আজ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকাল ১০ ঘটিকায় মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির উদ্যোগে রাঙ্গামাটিতে উদ্যোগ রিসোর্স সেন্টারে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় সাংগঠনিক সম্পাদক মনি চাকমা সঞ্চালনায় এবং কেন্দীয় সদস্য নতুন মালা চাকমা সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার।

অন্যান্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব শিশির চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি জিকো চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এলি চাকমা প্রমুখ।

আলোচনা শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অঞ্জলী চাকমা।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে শ্রী ঊষাতন তালুকদার বলেন, যুগ যুগ ধরে সমাজে নারীদের ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে দেখা হতো এবং নারীদের সর্বক্ষেত্রেই পশ্চাদপদ করে রাখা হয়েছে। মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জুম্ম নারী সমাজে জাগরণ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। সমাজের সবকিছুর মূলে রাজনীতিই জড়িত। অর্থনৈতিক উৎপাদন, সামাজিক সুরক্ষা, সম-অধিকার সবকিছুর মূলে রাজনীতি প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। এক্ষেত্রে সর্বক্ষেত্রে নারীদের সমমর্যাদা অর্জনের জন্য নানামূখী সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়। তাই নারীদের নিজ বলে বলীয়ান হয়ে সমস্তকিছু বাধা ডিঙিয়ে আন্দোলনে এগিয়ে আসতে হবে।

এছাড়াও তিনি আরো বলেন, শাসকগোষ্ঠী জুম্ম জনগণকে বাঙালি হিসেবে অভিহিত করে জুম্ম জনগণের জাতিগত পরিচয়কে চরম অবহেলা করে যা তীব্র প্রতিবাদ এম এন লারমা করেন। এম এন লারমা তিনি কখনো বিভেদের কথা বলেননি। জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে জুম্ম জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে ভিন্ন ভাষাভাষী জাতিসমূহকে এক পতাকাতলে সামিল করেছিলেন। পরিশেষে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে জনসংহতি সমিতি বসে নেই এবং সর্বদা সবখানে, যেকোন পরিস্থিতিতে আন্দোলন সুসংগঠিত করতে পার্টি সর্বদা প্রস্তুত বলে মন্তব্য করেন।

বিশেষ অতিথি বক্তব্যে প্রকৃতি রঞ্জন বলেন, আজকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান পরিস্থিতির পেক্ষাপটে এম এন লারমার চিন্তা ও দর্শন আরো বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। আমরা তাকে স্বরণ করতে বাধ্য। আমরা জুম্ম জনগণ যখন জাতীয় জীবনে নানান সমস্যায় জর্জরিত হই, জাতীর ভবিষ্যতে কালো অধ্যায়কে আঁচ করি তখন এম এন লারামা অকপটে ভেসে উঠেন। কারন তিনিই যে বিজাতীয় শাসন-শোষন থেকে মুক্তির পথকে দেখিয়েছেন।

বিশেষ অতিথি শিশির চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ এতোই সহজ সরল যে তারা ৫০ বছর পর কি হবে তারা তা ভাবতে পারেনি। এই সহজ সরল মানুষদের সাথে রাষ্ট্র বারংবার ঠকবাজি করছে। এটা বন্ধ করতে হবে। তিনি আরো বলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের আন্দোলনের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার এবং অতিশ্রীঘ্রই চলমার দ্বন্দ্ব –সংঘাত বন্ধ করা প্রয়োজন।

পরিশেষে নতুন মালা চাকমা সভাপতির বক্তব্য প্রদানের মধ্য দিয়ে আলোচনা সভা সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

More From Author