প্রথমবারের মতো রাবিপ্রবিতে বিপ্লবী নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জুম্ম জাতীয় শোক দিবস পালন

হিল ভয়েস, ১০ নভেম্বর ২০২৪, রাঙ্গামাটি: প্রথমবারের মতো রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপ্লবী নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জুম্ম জাতীয় শোক দিবস পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীরা।

আজ ১০ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার সকাল ১০.০০ ঘটিকার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় এক স্মরণসভাও অনুষ্ঠিত হয়।

স্মরণসভার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার অস্থায়ী শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়াতে গিয়ে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। স্মরণসভার শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ম ব্যাচের ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী জ্যাকশন চাকমা। শোক প্রস্তাব পাঠ করার পর ১৯৮৯ সালের ১০ নভেম্বরে বিভেদপন্থী গিরি প্রকাশ দেবেন পলাশ চক্রের ষড়যন্ত্রে নিহত মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ও ৮ সহযোদ্ধার স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ব্যক্তি হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বংশোদ্ভূত হলেও তিনি কখনো জাতিগত সংকীর্ণ পরিসরে আবদ্ধ থাকেননি। তিনি পাহাড়ের অধিকার বঞ্চিত জুম্ম জনগণের দাবিদাওয়ার পাশাপাশি সারা বাংলাদেশের অবহেলিত, বঞ্চিত ও নিপীড়িত সাধারণ মানুষের কথা সংসদের ভেতরে ও বাইরে বলিষ্ঠ কন্ঠে তুলে ধরেছিলেন। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা স্বপ্ন দেখেছিলেন, দেশের সংবিধান জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে দেশের আপামর জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করবে এবং সকল প্রকারের জাতিগত-শ্রেণিগত নিপীড়ন, শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটবে এবং উপনিবেশিক অপশাসনের সকল কালাকানুন ও দমনপীড়নের চির অবসান হবে। কিন্তু তার সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি।

বক্তারা আরো বলেন, ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের সময় গণপরিষদে আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠার প্রবল সমুদ্রে দাঁড়িয়ে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা নির্ভীক চিত্তে বলিষ্ঠ কন্ঠে দেশের ভিন্ন ভাষাভাষী জাতি সমূহের ওপর বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে একাই লড়াই করে গিয়েছিলেন, প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি একটা অভাবহীন, ভেদাভেদহীন, হিংসা-বিদ্বেষহীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার স্বপ্ন বাস্তবায়নে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে বক্তারা আহবান জানান।

তারা আরো বলেন, দেশের স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের হীন তৎপরতা চলমান রয়েছে। সেগুলো অবসানের লক্ষ্যে দেশের তরুণ সমাজকে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার জীবন ও সংগ্রাম পাঠ করা অত্যন্ত জরুরী এবং তার সেই চিন্তাকে আমাদের সবার মনে ধারণ করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে বলে জানান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১ শিক্ষাবর্ষের ফিসারিশ ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী স্বাধীন ত্রিপুরার সঞ্চালনায় স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী সুফল চাকমা, রাবিপ্রবি জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের সভাপতি ও ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী হৃদয় চাকমা। উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষার্থী ডায়না চাকমা।

More From Author

+ There are no comments

Add yours