পলাশ খীসা
জনসংহতি সমিতির সদস্যরা অস্ত্র জমা দেয়ার পর পরই প্রসিত চক্রের সন্ত্রাসীরা শুরু করে সমিতির সদস্যদের অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়। সমিতির যে কোনো সদস্যকে পেলেই সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে মুক্তি দেয়। তাদের ক্ষোভের কারণ হলো সমিতির সদস্যরা তাদের পক্ষ না নিয়ে কেন সন্তু লারমার স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী অস্ত্র জমা দিয়ে সরকারের কাছ থেকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা অনুদান নিয়েছেন। ৫০ হাজার টাকা একটা পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য খুবই নগণ্য। সেই টাকায় জায়গা ক্রয় করা তো দূরের কথা চলনসই একটা বাড়ী বানানোর জন্যও যথেষ্ট নয়। ফলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সাথে সাথে নিত্য প্রযোজনীয় দ্রবাদি ক্রয় করার মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যায় সরকারের কাছ থেকে পাওয়া ৫০ হাজার টাকা। এমন পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে ৫০ হাজার টাকার দাবী মেটাতে সমিতির সদস্যদেরকে বাপ-দাদার ভিটেমাটি বিক্রি করে দেয়া ছাড়া অন্য কোন পথ ছিল না। এভাবে প্রসিত চক্রের সন্ত্রাসীদের অপহরণের টাকা যোগাড় করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় পার্টির অনেক অনেক সদস্য-পরিবার।
জনসংহতি সমিতির সদস্যদের অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের মধ্য দিয়ে খুব বেশীদিন সন্তুষ্ট থাকতে পারেনি প্রসিত চক্র। কিছুদিনের মধ্যে তারা শুরু করে হত্যার রাজনীতি। দু’ যুগের অধিক সশস্ত্র আন্দোলনে যারা সবচেয়ে সাহসী যোদ্ধা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে, যারা বিভিন্ন যুদ্ধে শত্রু সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে অস্ত্র গোলাবারুদ ছিনিয়ে এনেছেন তারাই ছিল সন্ত্রাসীদের সবচেয়ে টার্গেট। ফলে বীর যোদ্ধা শহীদ তার্জেন, অর্জিন, অরুণ, স্বাধীন, লাব্বেসহ মোট ৪১ জন জনসংহতি সমিতির সদস্যকে প্রসিত চক্র খুন করেছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই এই তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। যারা দীর্ঘ দু’ যুগ ধরে শত্রুর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে পরাজিত হননি, আর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক যুদ্ধে জয়ী হয়েছে সেই সকল বীর যোদ্ধারা অস্ত্র জমা দেয়ার পর নিজের জাতির বিপথগামী ও বেঈমানদের নগ্ন হাতে জীবন দিচ্ছেন এটা জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক ও মর্মান্তিক।
অস্ত্র জমা দেয়ার পর চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করতে থাকে জনসংহতি সমিতির সদস্যরা। কোনো কোনো সদস্য এলাকার গ্রামের বাড়ীতে থাকতে পারে না কখন সন্ত্রাসীরা এসে অপহরণ করে, খুন করে। রাঙ্গামাটি থেকে খাগড়াছড়ি, খাগড়াছড়ি থেকে রাঙ্গামাটি আসা-যাওয়া করা যায় না নিরাপত্তার অভাবে। কুতুকছড়িসহ দু’একটি জায়গায় সন্ত্রাসীরা গাড়ী তল্লাসী চালিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়। নিয়ে গেলে আর ফেরৎ আসে না। ফেরৎ আসলেও হাজার হাজার টাকার বিনিময়ে নিজের পরিবারকে নিঃস্ব করে। পানছড়ি থেকে খাগড়াছড়ি কিংবা খাগড়াছড়ি থেকে পানছড়ি যাওয়া যায় না পেরাছড়াস্থ গিরিফুল এলাকায় অস্ত্রের মুখে সন্ত্রাসীরা বাস থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। উঠিয়ে নিয়ে গেলে পরিণতি যা হবার তা হয়ে যায়।
নিজের জাতির ও জন্মভূমির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যারা বাংলাদেশ সরকারের প্রতিষ্ঠিত বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেছে, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে- প্রতিরোধ করেছে তাদের পক্ষে এধরনের একটা জীবন মেনে নেয়া সম্ভব হয়নি, হতে পারে না। ফলে প্রসিত চক্রের বিরুদ্ধেও তারা রুখে দাঁড়ায় নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য। আর তখনই প্রসিত চক্র বুঝতে পারে তাদের সন্ত্রাসীদের শক্তি সাহস কতটুকু। তাদের কেউ কেউ পালিয়ে যায় ইপিজেড-এ, কেউ যায় ঢাকায়। যাদের কোথাও যাবার জায়গা নেই তারা চাপ সৃষ্টি করে প্রসিতকে সমঝোতা করার জন্য। সমঝোতা প্রস্তাব দিতে বাধ্য হয় প্রসিত। জনসংহতি সমিতির পক্ষ থেকেও তাদের প্রস্তাবে সাড়া দেয়া হয়। কারণ জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক নীতি হচ্ছে- ‘শত্রুকে নিরপেক্ষ করা, নিরপেক্ষকে সক্রিয় করা এবং সক্রিয়কে আরো অধিকতর সক্রিয় করা।’ পার্টির সাংগঠনিক এই নীতি অনুযায়ী প্রসিত চক্রের সাথে সমঝোতার জন্য বৈঠক করে ২০ ফেব্রুয়ারি ২০০০ তারিখে খাগড়াছড়ির নারারখাইয়ার অনন্ত বিহারী খীসার বাড়ীতে। সেখানে জেএসএস এর পক্ষে নেতৃত্ব দেন তাতিন্দ্র লাল চাকমা (মেজর পেলে)। প্রসিত চক্রের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দীপ্তি শংকর চাকমা। উভয় পক্ষ একমত হয়ে সমঝোতা চুক্তি করেন যে-
১. ইতিমধ্যে যারা অপহৃত হয়েছেন তাদের উদ্ধারকল্পে উভয় পক্ষ পারস্পরিক সহযোগিতা প্রদান করবে।
২. উভয় পক্ষ চলাফেরা কালীন কোনো প্রকার বাধা, ধর-পাকড় করবে না এবং মিটিং মিছিলে কোনো পক্ষ প্রতিপক্ষকে কোনো বাধা প্রদান করবে না।
৩. যোগাযোগের মাধ্যমে ভবিষ্যতে আলোচনায় বসার দিন, তারিখ ও জায়গা ঠিক করা হবে।
কিন্তু সমঝোতা চুক্তির ১২ ঘন্টার পর প্রসিত চক্র সমিতির একজন সদস্য সুখেন্দু বিকাশ চাকমাকে খাগড়াছড়ির দাঁতকুপ্যা এলাকায় গুলি করে হত্যা করে। ফলে চুক্তি কাগজে লেখা ছাড়া বাস্তবে আর কিছুই হয়নি। প্রসিত চক্রের সমঝোতা চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল সমঝোতার নামে পার্টির সদস্যদের খুন করা এবং সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করা। যেভাবে করেছিল আশির দশকে বিভেদপন্থী গিরি-প্রকাশ-দেবেন-পলাশ চক্ররা। তারাও সমঝোতার কথা বলে জুম্ম জাতীয় চেতনার অগ্রদূত এম এন লারমাকে ’৮৩ সালের ১০ নভেম্বরে নির্মমভাবে হত্যা করে। এরপর প্রসিত চক্র আবারো সমঝোতার প্রস্তাব দেয় যখন পার্টির সদস্য জীবন প্রদীপ দেওয়ানকে অপহরণ করেও স্থানীয় জনগণের চাপের মুখে হত্যা করতে পারেনি কিংবা টাকার বিনিময়ে তার আত্মীয়-স্বজনরা তাকে ছাড়িয়ে আনেননি। তিন পার্বত্য জেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছে প্রস্তাব দেয় যে, জনসংহতি সমিতি যদি সমঝোতা বৈঠকে বসতে রাজী হয় তাহলে তারা জীবন প্রদীপ দেওয়ানকে নিঃশর্ত মুক্তি দেবে। তিন পার্বত্য জেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের আহ্বানে জনসংহতি সমিতি সাড়া দিয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর ২০০০ সমঝোতা বৈঠকে বসতে রাজী হয়। সেই বৈঠকে জেএসএস এর পক্ষে ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক লক্ষ্মী প্রসাদ চাকমা ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সত্যবীর দেওয়ান। অপরপক্ষে প্রসিত চক্রের পক্ষে ছিলেন সঞ্চয় চাকমা, অভিলাষ চাকমা ও অনিমেষ চাকমা। তিন পার্বত্য জেলা থেকে গৌতম দেওয়ান, মুথুরা লাল চাকমা, উপেন্দ্র লাল চাকমাসহ অনেকেই ছিলেন। প্রসিত চক্রের পক্ষ থেকে সেই বৈঠকে আবারও প্রস্তাব দেয়া হয় যে, উভয়ের মধ্যে আক্রমণ না করা ও ন্যুনতম কর্মসূচীর ভিত্তিতে আন্দোলন করা। সেই বৈঠকে জেএসএস এর পক্ষ থেকে বলা হয় যে, প্রসিত চক্র যে সকল অস্ত্র দিয়ে চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণ ইত্যাদি করে থাকে সে সকল অস্ত্র তৃতীয় কোনো পক্ষের হাতে জমা দিতে হবে এবং জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে সকল সশস্ত্র তৎপরতা বন্ধ করতে হবে। এছাড়া জনসংহতি সমিতি যেহেতু চুক্তি করেছে চুক্তি বাস্তবায়নই হচ্ছে আমাদের আপাততঃ কর্মসূচী। কাজেই চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসলে সমঝোতা হতে পারে। কিন্তু প্রসিত চক্র কোন প্রস্তাবেই সাড়া দেয়নি। ফলে কোনো প্রকার সিদ্ধান্ত ছাড়াই সেই বৈঠকের অপমৃত্যু ঘটে।
প্রসিতের অনেক অগুণের মধ্যেও কিছু কিছু গুণ আছে। তার মধ্যে একটি হলো মানুষের দেশপ্রেম ও জাতীয় চেতনার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করা। তিনি এটা প্রয়োগ করে চলেছেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের জন্মের পর থেকে আজ অবধি। যে কথা আমি শুরুর দিকে বলেছি, পিসিপি’র প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্য হিসেবে প্রসিতকে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে চবি’র অনেক ছাত্রনেতৃবৃন্দের দ্বিমত ছিল। তারপরও বৃহত্তর ঐক্যের কথা ভেবে ধীরাজ চাকমা ও ধীমান চাকমারা তাকে অন্তর্ভুক্ত করে সদস্য হিসেবে। দ্বিতীয় কমিটিতে সে যখন ভালো কোনো পদে যেতে পারলো না তখন দ্বিতীয় কমিটির অনেক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে গ্রুপিং করতে থাকলো। সে সময় কাজে লাগালো এডভোকেট শক্তিমান চাকমাসহ বেশ কয়েকজনকে। বিশেষ করে কাজে লাগিয়েছে জনসংহতি সমিতির ভাবমূর্তিকে। জনসংহতি সমিতির পৃষ্ঠপোষকতায় ও এডভোকেট শক্তিমান চাকমাদের সহযোগিতায় তৃতীয় কমিটিতে প্রসিত সভাপতির পদটি দখল করে নেয়। তৃতীয় কমিটির মেয়াদ যখন শেষ প্রান্তে তার কিছু পকেট কর্মী দিয়ে প্রচার করলো সে আর কমিটিতে থাকছে না। এমনি কি গলায় শিকল দিয়ে বেঁধে রাখলেও থাকবে না। অথচ ভিতরে ভিতরে করলো লবিং ও গ্রুপিং। ফলে কাউন্সিলে এসে সে আবার দখল করে নিলো সভাপতির পদটি। সে যখন বিদায় নিয়ে যাচ্ছে তখন সভাপতি হওয়ার কথা ছিল এডভোকেট শক্তিমান চাকমার। কিন্তু কাউন্সিলের ৩/৪ মাস আগে কোনো একটা ব্যক্তিগত বিষয়ে শক্তিমান চাকমার সাথে বিরোধ লেগে যায় তার। তখন তিনি কে এস মং মারমাকে সভাপতি করার প্রস্তাব দেন। কে এস মং মারমা যেহেতু মারমা সম্প্রদায়ের সেহেতু বৃহত্তর স্বার্থে শক্তিমান চাকমা তার জন্য সভাপতির পদটি ছেড়ে দেন। কে এস মং কমিটির সভাপতি হলেও খুব বেশী দিন কাজ করতে পারেননি। প্রতিটি ক্ষেত্রে তাকে অসহযোগিতা করা হয়েছে। ফলে তিনি দায়িত্ব নেয়ার কয়েক মাস পর পরই বান্দরবানে চলে যান। কেন্দ্রীয় দপ্তর ছেড়ে কেন বান্দরবানে অবস্থান করছেন-এই প্রশ্ন কে এস মং মারমাকে প্রতিনিধি সম্মেলনে করা হলে তিনি জবাব দেন, ‘আমি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হয়েও আমি জানি না কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তগুলো কখন-কোথায় হয়, কিভাবে আসে?’ অপরদিকে প্রসিত পিসিপি থেকে বিদায় নেয়ার পর পাহাড়ী গণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রধীর তালুকদারকে কৌশলে সরিয়ে ঐ পদটি দখল করে নেয়। প্রসিতের রাজনীতির ক্ষেত্রে একটা লক্ষ্যণীয় বিষয় ছিল প্রসিত যখনই সর্বোচ্চ পদে আসীন হন তখন অর্থ সম্পাদক পদটি দেবাশীষ চাকমা বাবলুকে দেন। ইউপিডিএফ গঠনের আগ পর্যন্ত প্রসিত পাহাড়ী গণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদটি দখল করে রাখে এবং দেবাশীষ চাকমা আমেরিকা যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রসিতের অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
জনসংহতি সমিতির ঢাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য সমীরণ চাকমা প্রসিতের খপ্পরে পড়ে পাহাড়ী গণ পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক থাকাকালীন সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের দিন প্রসিতের নির্দেশে তিনি বিবিসিতে এক সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারে বলেন, চুক্তি করে আমরা কিছুই পাইনি। অথচ ’৯৮ এর ২৬ ডিসেম্বর যখন ৫ সদস্য বিশিষ্ট ইউপিডিএফ এর আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হলো সেই কমিটিতে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হলো না। প্রয়োজন শেষে এক পর্যায়ে তাকে সংগঠন থেকে দূরে সরে রাখা হলো। ফলে তিনি পরবর্তীতে নিজের ভুল বুঝতে পেরে পার্টির সাথে হাত মেলায়। এভাবে অসংখ্য মানুষকে নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করার জন্য প্রসিত ব্যবহার করেছে এবং প্রয়োজন শেষে দূরে ঠেলে দিয়েছে। বর্তমানে যারা আজ ব্যবহৃত হচ্ছে তাদেরকেও একদিন প্রসিত দূরে ছুড়ে ফেলে দেবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
প্রসিত বিকাশ খীসা একেবারে জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রেমিক নয়- একথা ঠিক নয়। তিনিও একসময় জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রেমিক এবং জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের পথিক ছিলেন। অনুরূপভাবে ’৮৩ সালে গৃহযুদ্ধের মূল হোতা জুম্ম জাতির মহান নেতা এম এন লারমার হত্যাকারীরাও দেশপ্রেমিক ছিলেন। তারাও জুম্ম জাতির মুক্তির জন্যে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তাদের জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেম সে সময়ে শাসকগোষ্ঠীর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়ে দেশ ও জাতির ক্ষতি সাধন করেছিল একথা কারো অজানা নয়। প্রসিত খীসার রাজনৈতিক জীবন পর্যালোচনা করলে বিশেষ করে ৯৭ থেকে আজ পর্যন্ত তার রাজনৈতিক কার্যকলাপগুলি বিশ্লেষণ করলে এটাই প্রমাণিত হয় যে, তার জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেম জুম্ম জাতিকে প্রতিনিয়ত ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। জুম্ম জনগণ তিল তিল করে বহু রক্ত, শ্রম ও মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে যে সংগ্রামী ঐতিহ্য গড়ে তুলেছিল প্রসিতের হঠকারী কার্যকলাপের জন্য তা আজ চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তার সেই জাতীয় মুক্তির আকাঙ্খা জাতিকে ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণতা লাভ করতে চলেছে। প্রসিত খীসার এই বিষয়গুলো সঠিকভাবে অনুধাবন করে সঠিক কর্মপন্থা নির্ধারণ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অনুরূপভাবে প্রসিতের পক্ষ হয়ে যারা জাতিকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে তাদেরও বিষয়টা গভীরভাবে উপলব্ধি করার সময় এসেছে বলে মনে করি।
(চলবে..)
লেখক: সাবেক সভাপতি, পিসিপি, কেন্দ্রীয় কমিটি