হিল ভয়েস, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ঢাকা: গতকাল ১০ নভেম্বর, ২০২৪ রবিবার, শ্রমজীবী মানুষের প্রিয় নেতা ও সাবেক আইন প্রণেতা, চির বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় জাতীয় কমিটির উদ্যোগে এক স্মরণসভা, প্রতিবাদী গান ও প্রদীপ প্রজ্বালন কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়।
মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির যুগ্ন আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক, ভূমি ও মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মী ও এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিষ্টার সারা হোসেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারী, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ-সভাপতি অজয় এ মৃ । স্মরণসভায় প্রয়াত নেতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ, প্রদীপ প্রজ্বালন ও প্রতিবাদী গান করা হয়। প্রতিবাদী গানে অংশগ্রহণ করেন স্বপ্নবাজ ও সমগীত।
স্মরণসভার শুরুতে প্রয়াত নেতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়িন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন,পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা মহানগর শাখা, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদ, বনফুল আদিবাসী গ্রীণহার্ট কলেজসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
স্মরণসভায় মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার স্মরণে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির সদস্য হেলেনা তালাং হিরামণ। তিনি মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাসহ তাঁর সাথে প্রয়াণ হওয়া বাকি ৮ সহযোদ্ধার প্রতিও বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
স্মরণসভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির যুগ্ন-আহ্বায়ক ডা: অজয় প্রকাশ চাকমা। প্রয়াত নেতাকে স্মরণ করে তিনি বলেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের একজন সাহসী সাংসদ। তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে শোষিত, নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন, মানুষের জন্যই রাষ্ট্র। এম এন লারমা মৃত্যুহীন প্রাণ নিয়ে এসেছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের শোষিত মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য বলেও ডা: অজয় মতামত ব্যক্ত করেন।
গণসংহতির নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা বাংলাদেশের শোষিত মানুষের কথা বলেছেন। তিনি একটি উগ্র বাঙালী জাতীয়তাবাদী চেতনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন।
স্মরণসভায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, এম এন লারমা ছাত্র জীবন থেকেই বামপন্থী রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন এবং পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে সচেষ্ট ছিলেন। তিনি শুধুমাত্র পাহাড়ী জনগণের নেতা ছিলেন না, তিনি সারা বাংলাদেশের শোষিত, নিপীড়িত মানুষের কথা বলে অচিরেই গোটা বাংলাদেশের নেতা হিসেবে অধিস্থিত হন। বজলুর রশীদ আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হয়েছিলো ১৯৯৭ সালে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য, সে চুক্তির এখনো সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ৫৩ বছর হয়েছে দেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু অন্তর্ভূক্তিমূলক সমাজ আমরা গঠন করতে পারিনি। দেশের অন্তর্বতীকালীন সরকার সংস্কার কমিটি গঠন করেছে ঠিকই কিন্তু বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠী তথা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোন কমিশন গঠন করা হয়নি। তিনি এ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেশের পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীর জন্য একটি স্বতন্ত্র কমিশন গঠন করার আহ্বান জানান।
স্মরণসভায় বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সমগ্র বাংলাদেশের মধ্যে একজন অন্যতম নেতা। তাঁর সমাজ-রাষ্ট্র গঠনের চিন্তা-চেতনা আলোচনা না করে বাংলাদেশ গঠনের চিন্তা করা উচিত হবে না। দেশের সংবিধান সংস্কার কমিটিতে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা এখনো প্রাসঙ্গিক। তিনি বলেন, সংবিধানে “বাংলাদেশের সকল জনগণ বাঙালী বলে পরিচিত হবেন” এ বাক্যটি সংস্কার করে সকল জাতিগোষ্ঠীর স্বীকৃতি সংবিধানে দিতে হবে। পাহাড়ী-বাঙালীর মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক আরো বেশী সুদৃঢ় করতে হবে। কেননা সকলে মিলেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করে যেতে হবে। এবং এক্ষেত্রে মূল স্রোতধারার বাঙালী জনগোষ্ঠীদের আগে এগিয়ে আসতে হবে। ৫০ বছর আগে এম এন লারমা যা ভেবেছিলেন, সেটা বর্তমানে রাষ্ট্র সংস্কারের অন্যতম লক্ষ্য বলেও তিনি মতামত ব্যক্ত করেন।
স্মরণসভায় বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ-সভাপতি অজয় এ মৃ বলেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা যদি ১৯৭২ সালে স্বাধিকার, অধিকার, জাতিস্বত্ত্বার কথা না বলতেন তাহলে আজকে আমরা আমাদের অধিকারের কথা বলতে পারতাম না। ১৯৬২ সালে মধুপুরের আদিবাসীদের ব্যবহৃত বনকে যখন সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয় ঠিক সেই সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামেও কাপ্তাই বাঁধের বিরুদ্ধে এম এন লারমা আন্দোলন করেছিলেন। তিনি সংসদে শুধুমাত্র আদিবাসীদের কথা বলেন নি, দেশের সকল খেটে-খাওয়া মেহনতি মানুষের কথা বলেছেন। তিনি শুধু পাহাড়ের নেতা নন, তিনি সমতলের মানুষের জন্যও অনুপ্রেরণার এক নাম।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য কে এস মং বলেন, দেশের এক ভিন্ন বাস্তবতায় আজকে আমরা এম এন লারমাকে স্মরণ করতে চলেছি। সমতল অঞ্চলের বাস্তবতার সাথে পাহাড়ের বাস্তবতার মধ্যে এখনো যথেষ্ট ফারাক রয়েছে। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে দীর্ঘ সময় ধরে লড়াই করে চলেছে। খন্দকার মোশতাক ব্যতীত দেশের সকল রাজনৈতিক দলের সাথে দীর্ঘ ২৬ বার বৈঠকের মাধ্যমেই পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের পক্ষে বাংলাদেশ সরকারের সাতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য অনেক রাজনৈতিক দলও সকল বিষয়গুলো বিবেচনা না করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে আওয়ামীলীগের সাথে চুক্তি বলে অপপ্রচার শুরু করেছে। এ অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হবে। তিনি সম্প্রতি ঢাকা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে সেনাবাহিনী প্রধানের দেওয়া বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে বলেন, সেনাপ্রধান পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীসহ দেশের আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি দেশের সম্পদ বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। দেশের আদিবাসীসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে সাথে নিয়ে যে দেশ গঠনের কথা তিনি বলেছেন তা যেন শুধুমাত্র কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, তা যেন সেনাপ্রধানের কার্যক্রমে ফুটে ওঠে বলে আহ্বান জানান পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির এ কেন্দ্রীয় নেতা।
তিনি আরো বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করলেও সে সরকারের আমলাদের এখনও সংস্কার করা যায়নি। যার ফলে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সংস্কার কমিটিগুলো গঠন করেছে সে কমিশনগুলো অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে পারে নি। এম এন লারমা যে অন্তর্ভূক্তিমূলক সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন সে সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করতে হবে। সংস্কার কাজে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নকে প্রাধান্য দিতে হবে বলেও তিনি মতব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার স্মৃতিতে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, এম এন লারমার স্মরণ শুধুমাত্র ব্যক্তি লারমাকে স্মরণ করার জন্য না, তার চিন্তাকে, তার আদর্শকে তুলে ধরার জন্য। তিনি আদিবাসী, দলিত, নারীসহ সকল শ্রেণীর মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি শোষণভিত্তিক অর্থনীতির কাঠামোকে ধ্বংস করার কথা বলেছেন। যতক্ষণ না পর্যন্ত দুর্বৃত্তায়িত অর্থনীতির চক্র ভাঙা যাবে না ততক্ষন পর্যন্ত আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন করতে পারবো না। এম এন লারমার নেতৃত্বে ৭২ সালের সংবিধান বিতর্কে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিলো । আজকে যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে সেখানে মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে কোন সংস্কার করা ঠিক হবে না। কেননা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিলো একটি অসাম্প্রদায়িক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন করা।
তিনি আরো বলেন, পাহাড়ে কেন এখনো সেনাশাসন চলমান থাকবে। অচিরেই সেনাশাসনের অবসান করে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য চুক্তির মৌলিক মৌলিক বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। তিনি আদিবাসী, প্রান্তিক মানুষের অধিকারের জন্য সংস্কার কমিশন গঠন করে আদিবাসী, প্রান্তিক, অধিকারহীন মানুষদের অন্তভুক্ত করতে পারলে আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন করতে পারবো বলে মতামত ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি ব্যরিস্টার সারা হোসেন প্রয়াত নেতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে করে বলেন, এম এন লারমার স্বপ্ন ছিলো সকল শ্রেণীর মানুষকে সাথে নিয়ে দেশ গঠন করা । তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কমিশনগুলোতে মুসলমান ভিন্ন অন্য কোন ধর্মের নেই, নারী নেই, আদিবাসী নেই। সংস্কার কমিটিতে বিভিন্ন জনের নাম শোনা গেলেও কোন এক কারণে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না। কেন, কিভাবে এ সংস্কার কমিটিগুলো হচ্ছে এ ব্যাপারে আমাদের প্রশ্ন করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের সংবাদপত্র, মিডিয়াতে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়গুলো উঠে আসে না। বিশেষ করে, সেখানকার মানুষদের উপড় নিপীড়ন-নির্যাতন, বৈষম্যের চিত্রগুলো উঠে আসে না। আদিবাসীদের উপড় ঐতিহাসিকভাবে চলে আসা শোষণ-নিপীড়নগুলো আরো বেশী মিডিয়ায় আসা উচিত। তিনি আরো বলেন, “রাষ্ট্র সকল মানুষদের জন্য“ এই সময়ে এসে এম এন লারমার এ উক্তিটি আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ, আরো বেশী প্রাসঙ্গিক। তিনি বলেন, আদিবাসী বাঙালীর মধ্যে যেন কোন বিভেদ না থাকে। রাজনীতি, লিঙ্গ, শ্রেণী প্রভৃতির ভিত্তিতে যেন কোন বৈষম্য করা না হয়। অতীতকে আমরা ভুলতে পারি না। অতীতকে স্মরণ করার মাধ্যমেই ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে হবে বলে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন।
জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, উগ্র বাঙালী জাতীয়তাবাদের উপড় প্রথম চপেটাঘাট দিয়েছিলেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা। তিনি বলেন, আমরা একটি চলমান লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। যেটি ১৯৪৭ সাল থেকে আমরা করে আসছি। এ লড়াইয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যেখানে মানবাধিকার বিঘ্নিত হবে সেখানে আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধ হবো। সকল দল মত নির্বিশেষে একসাথে কাজ করে যাবো বলেও তিনি সকলকে আহ্বান করেন।
মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক এবং ভূমি ও মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মী, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা তার সভাপতির বক্তব্যে বলেন, আমরা এক ক্রান্তিকালীন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের তরুণ সমাজ যে বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছেন তা অবশ্যই আশাব্যঞ্জক। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা সে চেতনাকেও ভুলে গেলে চলবে না।
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান একদিনে আসেনি। সুদীর্ঘকাল ধরে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর, নারী সমাজের, সম অধিকার আদায়ের জন্য যে সংগ্রাম সে সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় এ অভ্যুত্থান সফল হয়েছে। সংস্কারের জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়েছে সেগুলো পরিপূর্ণ হয়নি। কেন এ কমিশনগুলোতে নারীর প্রতিনিধিত্ব নেই, কেন আদিবাসী প্রতিনিধি নেই। এ বিষয়ে প্রশ্ন করতে হবে। এটা মনে রাখা দরকার, এ উপমহাদেশে ঐতিহাসিক সময় থেকে যে সংগ্রাম, বিদ্রোহ করেছে এদেশের মানুষ তার ধারাবাহিকতায় আজকের এই গণঅভ্যুত্থান।
তিনি বলেন, আমরা এখনও সমাজের শোষণ বঞ্চনাগুলো মুছে ফেলতে পারিনি। সে জায়গাগুলো চিহ্নিত করে মুছে ফেলতে হবে। এটি করার জন্য আমাদের সকলের কথা শুনতে হবে। পাহাড়ের ভূমি সমস্যার সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসনের অবসান চাই। আমরা চাই এম এন লারমার ঐতিহাসিক গণপরিষদ বিতর্ক, বক্তব্য মূল্যায়ন করা হোক, পাঠ করা হোক।
তিনি বলেন, এ সরকারের ভুলভ্রান্তিগুলোর সমালোচনা অবশ্যই করবো একই সাথে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বৈষম্যবিরোধী করে গড়ে তুলতে হবে। ছাত্র জনতার ঐক্য ধরে রাখতে হবে। তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নকে বৃথা হতে দেয়া যাবে না। সাধারণ মানুষ যারা এই অভ্যুত্থানে রক্ত দিয়েছেন তাদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। যে ধরণের অন্যায় আদিবাসী, প্রান্তিক মানুষদের উপড় করা হয়েছে তার অবসান করতে হবে। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েই সূচনা করতে হবে। এজন্য তরুণ প্রজন্মের সাথে আমাদের থাকতে হবে। তাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা চাই, আগামী ২রা ডিসেম্বর, ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের মধ্যে দিয়ে তরুণ প্রজন্মের বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের ভাবনার প্রতিফলন ঘটুক।
সভাপতির বক্তব্য শেষে প্রয়াত নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার স্মরণে প্রদীপ প্রজ্জ্বালন করা হয়। প্রদীপ প্রজ্জ্বালন শেষে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার স্মরণে বিপ্লবী গানের আয়োজন করা হয়। অংশগ্রহণ করেন স্বপ্নবাজ ও সমগীত।
উল্লেখ্য যে, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ১৯৩৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটির নান্যেচরের মাওরুম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর গিরি-দেবেন-পলাশ-প্রকাশ কুচক্রী মহলের বিশ্বাসঘাতকতামূলক অতর্কিত আক্রমণে খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ির উপজেলার খেদারাছড়ার থুমে নির্মমভাবে নিহত হন।