জুম্ম জনগণের সংগ্রাম, সংঘাত, সমঝোতা এবং জেএসএস বিরোধিতা

জীবন চাকমা

পার্বত্য চট্টগ্রামের ১১টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম শুরু হয় তার প্রথম থেকে যুক্ত হয় ভ্রাতৃঘাতি সহিংসতা, একই সাথে বিভিন্ন সময়ে চলতে থাকে সমঝোতাও। সশস্ত্র সংগ্রাম আর সহিংসতার এক পর্যায়ে ১৯৮৩ সালের ১০ই নভেম্বর নির্মমভাবে নিহত হন এম এন লারমা ও তাঁর আট সহযোদ্ধা। এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয় নিজেদের মধ্যে ভিন্ন মতাবলম্বী অথচ স্বজাতির লোকেরাই এই পৈশাচিক আক্রমণ চালায়। এই মৃত্যুতে আমরা কেউ খুশী হতে পারিনি। মর্মাহত হয়েছে আপামর মানুষ। যারা হত্যাকান্ড চালিয়েছে তারাও কতটুকু উল্লসিত হতে পেরেছে আমার সন্দেহ আছে। তবে অনেকে জানে যে হত্যাকারীরা হত্যা পরিকল্পনার সাফল্যে খাসী-মুরগী যা হাতে পেয়েছে তা দিয়ে আনন্দ উল্লাস করেছে। তবে নিঃসন্দেহে আনন্দ উল্লাসটা ছিল নিতান্তই সাময়িক। রক্তক্ষয়ী ঐ হত্যাকান্ডের ফলে কোনো পক্ষ কি লাভবান হতে পেরেছে? আদতেই আমাদের কেউ লাভবান হয়নি। লাভবান করা হয়েছে শত্রুপক্ষকে। সামগ্রিকভাবে জুম্মজাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে একথা সবারই স্বীকার করতে হবে।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে আভ্যন্তরীণ কোন্দল আর সমঝোতার অভাব ছিল ১০ই নভেম্বর হত্যাকান্ডের ফলশ্রুতি? ১৪ জুন ১৯৮৩ সালের আভ্যন্তরীণ সংঘাত সমঝোতার মাধ্যমে সমাধানের ঘটনা আজো অনেক পার্টি কর্মীর স্মরণ থাকবে। গোলকপতিমা চেঙ্গী উপত্যকার একটি নিভৃত অরণ্যাঞ্চলে দ্রুত নিষ্পত্তিপন্থীদের সাথে দীর্ঘস্থায়ী লড়াইপন্থীদের মুখোমুখী সংঘর্ষ হয়। সমূহ পরাজয় দেখে দ্রুত নিষ্পত্তিপন্থীরা সমঝোতার প্রস্তাব দেয়। সমঝোতার প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ করা হয়। উক্ত অনাক্রমণ চুক্তি বা ‘ক্ষমা করা ও ভুলে যাওয়া’ নামের সমঝোতা কত বড় বেদনাদায়ক হয়ে ওঠে তার পরিণতি দেখা যায় ১০ নভেম্বরের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞে। ফলে সমঝোতা, আন্তরিকতা, উদারতা ইত্যাদি শব্দের অর্থ অনেকের কাছে আজ পানসে হয়ে গেছে। সমঝোতা মানেই এখন সংশয়। সেই বিভেদপন্থীরা ১৯৮৫ সালে ২৯ এপ্রিল রাঙ্গামাটির ষ্টেডিয়ামে এক সমর্পণ সমঝোতায় সমাপ্তি টানে সংগ্রামের। সেদিনও আমাদের ভাইবোনেরা ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে ওদের স্বাগত জানায়। ঠাট্টা-মসকরাও হয়েছে, হয়েছে অনেক বিদ্রুপ। তবুও সমাজ ওদের কাছে টেনে নিয়েছে। না নেবেই বা কেন। ওরাও আমাদের ভাই, আমাদের সমাজের সস্তান। ওদের হত্যা করে কি সেদিন পাঁচদফা অর্জন করা যেত! মোটেই না। অথচ ওদের দ্বারাও আন্দোলনের ক্ষতি কম হয়নি। কিন্তু জনসংহতি সমিতি হত্যার রাজনীতি থেকে দূরে ছিল বলেই সংঘাত থেমে গেছে।

আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের যে সংগ্রাম তাতে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে জনসংহতি সমিতি আর অংশ নিয়েছে কম বেশী সবাই। এদের মধ্যে দালালীপনা যেমন করেছে অনেকে আবার চরম বিশ্বাসঘাতকতাও করেছে। সংগ্রামে আত্মত্যাগ আর আত্মঘাত দুটোই হয়েছে। এই আত্মত্যাগ পার্টির কর্মীরা যেমন করেছে তেমনি পার্টির কর্মী নয় এমন সাধারণ মানুষও করেছে। অপরদিকে সবচেয়ে আত্মঘাতী ভূমিকা নিয়েছে পার্টির কর্মীরাই। আন্দোলনকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে পার্টি কর্মী, পার্টির সাথে সংশ্লিষ্ট সাধারণ মানুষ। পার্টির সাথে বেঈমানী করেছেও পার্টি কর্মীরা, পার্টি কর্মীর ভাই বন্ধু বা ছেলে মেয়ে, পার্টির পৃষ্ঠপোষকতায় জীবিকা নির্বাহ করেছে এমন মানুষ পার্টির বাইরে যারা আর্মীদের সাথে সম্পর্ক করে বা সরকারের সাথে নানাভাবে সহযোগিতা করে জেনে না জেনে বা স্বার্থের জন্য সামগ্রিকভাবে ক্ষতি করেছে তাদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। সামগ্রিক অর্থে আত্মমুখী সংঘাতের ফলে আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের যে সংগ্রাম তা বার বার সমঝোতার পথে ঠেলে দিয়েছে আমাদের। আর সমঝোতা মানেই হলো সমর্পণ। ক্ষুদ্র শক্তির সাথে বৃহৎ শক্তির সমঝোতার অর্থই হলো ক্ষুদ্র শক্তির সমর্পণ। আমাদের বেলায়ও তার ব্যতিক্রম নেই। অথচ দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে আভ্যন্তরীণ সংঘাতের ক্ষেত্রে আমরা সমঝোতা করতে ব্যর্থ হয়েছি। এজন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। এক অর্থে এই ব্যর্থতাই আমাদের আন্দোলনকে এগোতে দেয়নি।

সমঝোতার কথা আজ কে না বলছে। ছাত্র-যুবক, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, সাধারণ মানুষ সবাই চায় ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত নির্মূল করতে সমঝোতা হোক। জনসংহতি সমিতির কর্মীরাও সমঝোতার কথা বলছে না তা নয়। সমিতির নেতৃত্বও চায় সংঘাতহীন আবহাওয়া। আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে চলতেই হবে। এই সমঝোতাও বিবিধ রকমের হতে পারে, হতে পারে বিবিধ পরিস্থিতিতে। পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের অধিকারের জন্য রাজনৈতিক সংগঠনের মাধ্যমে সংগ্রাম গড়ে তোলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। জনসংহতি সমিতির এই আন্দোলনকে ঘিরে পরবর্তীতে গড়ে ওঠে নানা মতের নানা নেতৃত্বের সংগঠন। দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংগঠন গঠিত হয়। তার কোনটা পুরোপুরি রাজনৈতিক চরিত্রের আবার কোনটা সাংস্কৃতিক বা মানবাধিকারের জন্য।

যা কিছুই হোক, যে নামেই হোক সবার উদ্দেশ্য কিন্তু জুম্মদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক তথা রাজনৈতিক অধিকারের জন্য। বাংলাদেশ সরকারের নিপীড়ন থেকে জুম্মদের মুক্ত করার জন্য। বাংলাদেশ সরকারের নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রচারের জন্য। জুম্ম জনগণের দূঃখ দুর্দশার কথা দেশে-বিদেশে প্রকাশ করার জন্য। এদের মধ্যে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা সংগঠনও আছে যেগুলি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নানা কাজে জড়িত হয়। ট্রাইবেল কনভেনশন, ত্রিপুরা উন্নয়ন সংস্থা, পরবর্তীতে চাকমা উন্নয়ন সংস্থা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনকল্যাণ সমিতি, গণ প্রতিরোধ কমিটি, নয় দফা রূপরেখা বাস্তবায়ন কমিটি, শান্তি কমিটি, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, পাহাড়ি গণ পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, জুম্ম পিপলস নেটওয়ার্ক ইন ইউরোপ, জুম্ম পিপলস নেটওয়ার্ক ইন এশিয়া প্যাসিপিক, জুম্ম পিপলস এলায়েন্স ইত্যাদি অসংখ্য সংগঠন গড়ে তোলা হয়। অতি সম্প্রতি গড়ে উঠেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট। এদের কোনোটা জনসংহতি সমিতির সমর্থনে বা এর পরামর্শে, কোনোটা আর্মীর দ্বারা সরাসরি জনসংহতি সমিতির বিরোধিতার জন্য, আবার কোনোটা সরকার রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের জন্য, আবার কোনোটা স্বাধীনসত্তা নিয়ে গড়ে তোলা হয়।

জনসংহতি সমিতি চায় জুম্মদের সকল শক্তিকে সংঘবদ্ধ করতে। বিভিন্ন উদ্যোগ একত্রিত করতে। অথবা তার কর্মসূচীর সাথে সামঞ্জস্য রেখে সকল উদ্যোগের সমন্বয় সাধন করতে। কেননা আমরা দুর্বল আর শত্রু আমাদের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। সুতরাং নিজেদের মধ্যেকার সকল শক্তির একই জায়গায় সমাবেশ করা অত্যন্ত জরুরী। কিন্তু না তা হয়নি। বরং উল্টোটাই হয়েছে বেশী। কেবল বিভক্ত হইনি। হয়েছি বিক্ষতও। অর্থাৎ অধিকাংশ জুম্ম জনগণ মানতে পারলেও অনেকেই মূল শক্তি জনসংহতি সমিতির আন্দোলনকে মানতে পারেনি। কেবল মানতে না পারাই শেষ কথা নয়। আমরা চূড়ান্তভাবে ক্ষতি করেছি বা ক্ষতি করার চেষ্টা করেছি আন্দোলনের মূল শক্তিকে। অথচ মূল শক্তিকে আরো শক্তিশালী করা উচিত ছিল। নানা কারণে নানা পরিস্থিতিতে আমাদের সমাজের কিছু লোক জুম্ম জাতিকে ভালবাসলেও, জুম্ম জাতির জন্য ভালো কিছু করার মানসিকতা লালন করলেও এমন কি জনসংহতি সমিতির আন্দোলনকে স্বীকার করলেও তার নেতৃত্বকে মানতে পারেনি। পার্টির পরামর্শে পার্টিকে আমব্রেলা (মূল) সংগঠন মেনে নিয়ে জুম্ম জনগণের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করতে পারিনি আমরা। এজন্য কি কেবল জনসংহতি সমিতি দায়ী? আপনারা নিজেরাও কি মোটেই দায়ী নই?

কিন্তু বিষয়টা হচ্ছে নাকি একনায়কতন্ত্রের আর গণতন্ত্রের। জনসংহতি সমিতি নাকি চায় একনায়কত্ব। আর অন্য যারা দেশ জাত নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে তারা চায় গণতন্ত্র। তাদেরও আলাদাভাবে জুম্ম জাতির জন্য কাজ করার অধিকার রয়েছে। শুধু জনসংহতি সমিতি হলেই কেবল দেশ সেবা বা জাত সেবা করা যায় তাতো নয়। সুতরাং আলাদাভাবে, স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে নিজের মত করে জুম্ম জাতির জন্য কাজ করা চাই। যার যেমন খুশী তেমন সংগঠন করে জুম্ম জাতির সেবা করা আর কি। ক্ষুদ্র একটা জাতিসত্তার ভেতর আট দশটা এমনকি আরো বেশী দল করার অর্থই কিন্তু একটা। আর তা হলো বিভক্তি, ভাঙন। মূল আন্দোলনকে দুর্বল করা। এটাই যদি গণতন্ত্র হয় তাহলে আপাতত আমাদের তেমন গণতন্ত্র চর্চা না করাই উচিত। আর তা করতে গিয়ে যখন কোন কোন বিষয় মূল আন্দোলনের সাথে সংগতিপূর্ণ না হয় বা বিরুদ্ধে যায় তখন জনসংহতি সমিতি তার বিরোধিতা করতে বাধ্য হয়। আর তখনই জনসংহতি সমিতি খারাপ। পার্টি স্বৈরতান্ত্রিক। পার্টিকে গালিগালাজ। পার্টির চৌদ্দ পুরুষ উদ্ধার। পার্টি অগণতান্ত্রিক। পার্টি নেতৃত্ব অসহিষ্ণু। পার্টির নেতৃত্বে আন্দোলনের কেবল দুর্বল দিকগুলো নিয়ে যখন সমালোচনা করেন তা পার্টি একটু অখুশী তো হতেই পারে। তা অস্বাভাবিক তো কিছুই নয়। আন্দোলনের ভাল দিকগুলো নিয়ে সমালোচনা করতে আপনাদের বাঁধে কেন। পার্টির দ্বারা কোথায় কিভাবে কখন আপনি উপকৃত হয়েছেন তা সততার সাথে বলুন। স্বীকার করুন আন্দোলনের সুফলগুলো। খোলাখুলি বলুন আন্দোলনের দুর্বল দিকগুলো কী কী। পার্টির দুর্বলতা কী, কোথায়। কী করলে ভাল হয় আর কী করলেই বা ক্ষতি। সত্যিকার অর্থে এভাবেই তো আন্দোলনকে সহায়তা করতে পারেন।

পার্টি ঐক্য চায় না। পার্টি সমঝোতা চায় না ইত্যাদি ইত্যাদি। যাই হোক এখন প্রশ্ন হলো পার্টি কার সাথে সমঝোতা করবে? যারা পার্টির খেয়ে পার্টির বিরোধিতা করে, দ্রুত নিষ্পত্তির নামে জাতীয় নেতা ও নেতৃত্বকে হত্যা করে অবলীলায়, আন্দোলনের চরম বিরোধিতা করে যারা তৃপ্তি পায়, একটু আধটু আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে বিরাট কিছু করেছে বলে মনে করে অথবা আন্দোলনে কোনো অবদান নেই এবং আন্দোলনের সকল সুফল ভোগ করে অথচ নিজেকে বিরাট জাতপ্রেমিক বা দেশপ্রেমিক ভাবে আর সুযোগ পেলেই জনসংহতি সমিতিকে তুলোধুনো করতে ব্যতিব্যস্ত তাদের সঙ্গে? অথচ আন্দোলনের নামে কানাকড়িও এরা খরচ করেনি বরং পার্টির তথা আন্দোলনের সমস্ত প্রকার সুযোগটুকু তিলে তিলে ভোগ করেছে। প্রথম থেকে এরাই কিন্তু জনসংহতি সমিতি বিরোধী। কারণ পরিস্কার- জনসংহতি সমিতির বিরোধিতা না করলে সুযোগ কোথায়! উপরোক্ত সংগঠনগুলোর মধ্যে যেগুলি আর্মী বা সরকারের দ্বারা সৃষ্ট নয় সেগুলির ক্ষেত্রে পার্টি বরাবরই উদার দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে থাকে। এমনকি যাদের মধ্যে ১৯৮৩ সালের ষড়যন্ত্রের হোতা হিসেবে যারা খ্যাত সেই কুচক্রী নেতারাও কি আজ দিব্যি বেঁচে নেই! ওদেরও হত্যা করে প্রতিশোধ নেয়া যেতো। কিন্তু তাতে কী লাভ হতো! সুতরাং কেবল পার্টি নয় আমরাও চাই জুম্ম জনগণের স্বার্থে যতটুকু সম্ভব কাজ করে যেতে। যতটুকু সম্ভব সবাই মিলে-মিশে কাজ করতে পারলে খুবই ভালো ছিল। নেহায়েত তা না হলেও মোটামুটি নিজেদের মধ্যে সখ্যতা বজায় রেখে কাজ-কর্ম হোক। আর তা না হলেও অন্তত নিজেদের মধ্যেকার সংঘাত এড়িয়ে আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত থাকুক। বৃহত্তর স্বার্থে জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বের সাথে আলাপ আলোচনা করে নিজেদের কর্মকান্ড চালাতে দোষের কী আছে। আপনি হতে পারেন প্রাক্তন বা বর্তমান ছাত্র নেতা, জননেতা, এমপি, মন্ত্রী, উপদেষ্টা, জনপ্রতিনিধি, বিত্তবান, বিত্তহীন বা রাজা, প্রজা। হতে পারেন জনসংহতি সমিতির আন্দোলনের কারণে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। হতে পারেন পার্টি বিরোধী বা সমর্থক। হতে পারেন চুক্তি বিরোধী। চুক্তি করে নাকি সার্কাস দেখাচ্ছে এমন সাক্ষাৎকারও শুনেছি বিবিসিতে। তা হোক। কিন্তু নিজে কী করেছেন সে প্রশ্ন কি করেছেন কখনও? নিজে কী করেছেন তা নিয়ে কি কখনো লজ্জাবোধ হয়নি? অনুতাপ নেই নিজেদের সীমাবদ্ধতার জন্য? আপনারা কতটুকু গণতান্ত্রিক হতে পেরেছেন তা কী আত্মজিজ্ঞাসা করেছেন? জনসংহতি সমিতির বিরোধিতা করে ব্যক্তির বা সামগ্রিকভাবে লাভ কি কিছু হয়? নিজের ক্ষোভ প্রকাশের জন্যই কি কেবল পার্টি বিরোধিতা? মূল কথা হলো পাটি বা পার্টি নেতৃত্বকে পছন্দ হয় না আপনাদের। তা হলে কী করা? নিজেও বিশেষ কিছু করতে পারছেন না আর জনসংহতি সমিতি যা করছে তাতেও সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। তাই পার্টি বা পার্টি নেতৃত্বকে যত্রতত্র গালিগালাজ করে তৃপ্তি পান। তাহলে নিজে কতটুকু গণতান্ত্রিক বা সহিষ্ণু তা একটু ভেবে দেখুন। জনসংহতি সমিতির বিরোধিতারও একটা সামগ্রিক স্বার্থ রক্ষার ইতিবাচক ভূমিকা থাকতে পারতো পার্টি বিরোধীদের।

[বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই প্রবন্ধটি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার বিভাগ কর্তৃক সেপ্টেম্বর ২০০১ সালে প্রকাশিত জুম্ম সংবাদ বুলেটিনের সংখ্যা ২৩ থেকে নেয়া হয়েছে।]

More From Author

+ There are no comments

Add yours