হিল ভয়েস, ১০ নভেম্বর ২০২৪, রাঙ্গামাটি: ১০ নভেম্বর ২০২৪ রোজ রবিবার, মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার (এম এন লারমা) ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জুম্ম জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বরকল উপজেলা সদরে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ বরকল থানা শাখার উদ্যোগে এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সদস্য বিধান চাকমা, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সদস্য শ্যামরতন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি বরকল থানা কমিটির সভপতি জ্ঞান জ্যোতি চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি বরকল থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুচরিতা চাকমা প্রমুখ।
শোক সভার শুরুতে শহীদের স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদীতে ফূল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাসহ আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শহীদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিধান চাকমা বলেন , ১৯৮৩সনের আজকের এই দিনে জুম্ম জাতির মহান নেতা এম এন লারমাকে তাঁর ৮জন সহযোদ্ধাসহ নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বিভেদপন্থী চার কুচক্রীর নেতৃত্বে এই জগণ্যতম ঘটনাটি ঘটানো হয়। সংগঠনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বিভেদপন্থী ও সুবিধাবাদী মানুষগুলো যদি সমগ্র জাতির মঙ্গলের জন্য চিন্তা ভাবনা করতো, তাহলে আমরা মহান নেতাকে আজকের এই দিনে হারাতাম না।
তিনি আরো বলেন ‘জাতির ক্রান্তিলগ্নে যারা আজ জাতির জন্য নি:স্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, তাদেরও তো পরিবার, মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে রয়েছে, কিন্তু তারা সেই চিন্তা ভাবনাকে উপেক্ষা করে আজকের লড়াই সংগ্রামে সামিল হয়েছেন।
জুম্ম জনগণের ইতিহাসের ব্রিটিশ, মোগল, পাকিস্তান এবং বর্তমান বাংলাদেশসহ অতীতের ইতিহাস জানাতে তরুণ ছাত্র সমাজ ও যুব সমাজকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, সামনের দিনগুলোতে ঐক্যবদ্ধভাবে কঠিন লড়াই সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষার কোন শেষ নেই; আজকে যারা এখানে এসেছেন এখান থেকে আপনাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। ছাত্র ও যুবকরা যদি সত্যিকার লড়াই সংগ্রামে সামিল হতে পারেন তাহলে একদিন জুম্ম জাতির অস্তিত্ব ও চুক্তি বাস্তবায়ন অবশ্যই হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্যামরতন চাকমা বলেন, ১৯৮৩ সালে পার্টির মধ্যে ছদ্মবেশে লুকিয়ে থাকা সুবিধাবাদী শ্রেণি ষড়যন্ত্র করে ঠিক এইদিনে মহান নেতাকে হত্যা করেন। এম এন লারমা যখন ১০ম শ্রেণিতে পড়াশোনা করতেন তখন পাকিস্তান সরকার রাংগামাটি জেলায় কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করলে হাজার হাজার মানুষের অবস্থা খারাপ হবে ভেবে প্রতিবাদ করেন। ১৯৭২ সালের সংবিধানে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী সহ, সারাদেশের কৃষক, শ্রমিকসহ সকল দুঃখী মেহনতী মানুষের অধিকারের কথা সংবিধানে না থাকায় তিনি তার প্রতিবাদ করেছেন।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসকে জানতে ও বুঝতে হলে এম এন লারমাকে জানাতে ও বুঝতে হবে। ইতিহাস জানা দরকার তো সেভাবেই অগ্রসর হওয়ার আহবান জানান। তিনি আরও তার বক্তব্যে বলেন, ইতিহাস আবারো পুনরাবৃত্তি ঘটে।পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটেলারদের নিয়ে আসার আসল হাত ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের। ১৯৭৩ সালে শেখ মুজিবুর রহমান রাঙ্গামাটি রিজার্ভ বাজারে এসে তার বক্তব্যে বলেন, এই পার্বত্য চট্টগ্রামে চার, পাঁচ লক্ষ বাঙালি নিয়ে আসবো। তারই কথানুসারে পরবর্তী সরকারগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামে তা বাস্তবায়ন করে চলেছে। দেশে যে দল ক্ষমতায় আসুক না কেন আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ী আদিবাসীদের জন্য তারা কোন উন্নয়ন আর চুক্তি বাস্তবায়ন করবেনা। এটা অতীতের মতো এখনও প্রকাশ পাই। তাই পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হলে আবারও এমএন লারমার আদর্শ বুকে ধারণ করে সামনের অধিকতর আন্দোলনের দিকে ধাবিত হতে বর্তমান তরুণ ছাত্র ও যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে।
শ্রীমতি সূচরিতা চাকমা বলেন, জুম্ম জাতির সকল অধিকার আদায়ের জন্য সর্বত্র লড়াই সংগ্রামে ছেলেদের পাশাপাশি অতীতে যেভাবে আমাদের নারী সমাজ সামিল হয়েছে ঠিক সেভাবেই বর্তমানেও এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে বর্তমান তরুণ নারী সমাজকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
জ্ঞান জ্যোতি চাকমা বলেন, ঘুমন্ত জুম্ম জাতিকে জেগে তোলার এক মহান নাম এম এন লারমা। মহান নেতা এম এন লারমা ছিলেন জুম্ম জাতীয় মুক্তির পথ প্রদর্শক ও জুম্ম জাতিকে অন্ধকার পথ থেকে আলোর পথে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পথিকৃৎ।
স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ বরকল রাগীব রাবেয়া কলেজ শাখার সভাপতি রিন্টু চাকমা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ বরকল থানা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মহেন্দ্র চাকমা।
উক্ত সভা পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ বরকল থানা শাখার সভাপতি মিন্টু চাকমার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ইলেন চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয়।
আইমাছড়ায় আলোচনা সভা
একই দিন জগন্নাথ ছড়া ও আইমাছড়া মুখ গ্রাম কমিটি’র উদ্যোগে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরকল আইমাছড়া ইউনিয়ন কমিটির তথ্য প্রচার সম্পাদক জ্ঞান চাকমা, আইমাছড়া মুখ গ্রাম কার্বারি ধন কুমার চাকমা সহ যুব ও গ্রাম প্রতিনিধিগণ। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন জগন্নাথ ছড়া গ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুনীল চাকমা।
আইমাছড়া মুখ যুব সমিতি সাধারণ সম্পাদক সবিনয় চাকমার সঞ্চালনায় স্মরণ সভাতে সভাপতিত্ব করেন জগন্নাথ ছড়া গ্রাম কমিটির সভাপতি ভুবন বিজয় দেওয়ান। আলোচনার শুরুতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দুই মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এছাড়া ভূষণছড়া ইউনিয়ন ও বড় হরিণা ইউনিয়নেও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হয়।
+ There are no comments
Add yours