যৌথ বিবৃতি: দূর্গা পূজার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষা এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি

হিল ভয়েস, ৬ অক্টোবর ২০২৪, ঢাকা: গতকাল ৫ অক্টোবর ২০২৪ দেশের ৪০ জন নাগরিক ও অধিকার কর্মী আসন্ন দূর্গা পূজা বাধামুক্ত ও নিরাপদে উদযাপনের পরিবেশ সৃষ্টি এবং দূর্গা পূজাকে উপলক্ষ করে যে মহলটি বিভিন্ন ভয় ভীতি প্রদর্শন এবং উদ্দেশ্যমূলক শর্তারোপের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন।

বিবৃতি নিম্নরূপ:

“আমরা জানি, গত ২রা অক্টোবর মহালয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দূর্গা পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। সরকারি হিসেবে এবছর বাংলাদেশে ৩২৪৬০টি ম-পে দূর্গা পূজা পালিত হবে বলে ঘোষাণা দেয়া হয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশের মানুষ সকল ধর্মমতের মানুষকে নিয়ে সহিষ্ণুতা ও শান্তির সঙ্গে বাস করতে আগ্রহী। এখানে প্রতিটি ধর্মের উৎসব স্বাধীন ও নিরাপদে নিজস্ব ঐতিহ্য অনুযায়ী পালনের পূর্ণ অধিকার থাকতে হবে এবং সকল ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে তা পালিত হবার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। সকল ধর্মের সকল উৎসব পালনে নিরাপত্তা বিধানে রাষ্ট্রের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। কিন্তু আমরা গভীর দুঃখের সাথে লক্ষ করেছি বিগত কয়েক দশক ধরেই পূজার সময় আসলেই একটি মহল ধর্মভিত্তিক উত্তেজনা ছড়িয়ে এবং নানা ধরনের নাশকতার চেষ্টার মাধ্যমে পরিবেশকে অশান্ত করার অপপ্রয়াস চালিয়ে আসছে। এবারও এর ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে না। ধর্ম অবমাননার ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে বিভিন্ন পূজা মন্ডপে ভাংচুর চালানোর উদাহরণ আমরা অতীতে দেখেছি। তারই ধারাবহিকতায় বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ধর্ম বিদ্বেষী বক্তব্য প্রচার, ফেসবুকে নানা ধরনের সাজানো গল্প ছড়িয়ে উত্তেজনা তৈরী করে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার অপচেষ্টা শুরু হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় আমরা প্রতিমা ভাংচুর ও মন্দিরে হামলার তথ্যও পেয়েছি। সেই সাথে একটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিদ্বেষী মহল বেআইনী এবং নৈতিকতা বিরোধীভাবে পূজার সময় হিন্দু ধর্মাবালম্বীরা কি করতে পারবেন কি করতে পারবেন না তার একটি তালিকা প্রকাশ করেছে যা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং গর্হিত অপরাধ। আইন শৃংখলার অনিবার্য প্রয়োজনে কি করা যাবে বা যাবে না তা বলার এখতিয়ার সরকারের, অন্য কারো নয়।

ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছেন, দূর্গা পূজার সময় সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং তা বহাল থাকবে। সেই সাথে তারা জানিয়েছেন অনাকাক্সিক্ষত কোন ঘটনা ঘটার আগেই তারা যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে তার জন্য গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করতে চাই সরকার তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যথাপোযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সেই সাথে আমরা দাবি জানাচ্ছি যে, যারা এ সকল উত্তেজনা তৈরী করছে কিংবা কোন সহিংসতার উস্কানি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আগেভাগেই কঠোর আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং এ সকল ঘটনার পেছনে যারা আছে তাদেরকে তদন্তের মাধ্যমে সনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তা নাহলে ছাত্র জনতার বৈষম্য রিরোধী গণ অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্যকে বিঘ্নিত করার এই সকল অপপ্রয়াস জনগণ কোন অবস্থায়ই মেনে নেবে না।

সে জন্যই সরকার ও প্রশাসনের উপযুক্ত আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি দলমত ও ধর্ম/বর্ণ/গোত্র/লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল স্তরের নাগরিক ও ছাত্র-জনতাকে আমরা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির অপপ্রয়াসে লিপ্ত দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে সদা সতর্ক থাকা এবং প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলারও উদাত্ত আহবান জানাই।”

বিবৃতিতে স্বাক্ষরদানকারী নাগরিকগণ হলেন- ১. আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; ২. সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা; ৩. ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি; ৪. খুশি কবীর, সমন্বয়ক, নিজেরা করি; ৫. অ্যাড. জেড আই খান পান্না, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; ৬. পারভীন হাসান, উপাচার্য, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি; ৭. অ্যাড. সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; ৮. ব্যারিস্টার সারা হোসেন, অনারারি নির্বাহী পরিচালক, বাস্ট; ৯. গীতি আরা নাসরিন, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ১০. সামিনা লুৎফা, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ১১. ড. সুমাইয়া খায়ের, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ১২. রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ১৩. ড. খাইরুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ১৪. জোবায়দা নাসরিন, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ১৫. তাসনীম সিরাজ মাহবুব, সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ১৬. মির্জা তাসলিম সুলতানা, অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; ১৭. অ্যাড. তবারক হোসেন, সিনিয়র আইনজীবী; ১৮. ড. শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী; ১৯. রেহনুমা আহমেদ, লেখক ও গবেষক; ২০. নাসরিন খন্দকার, নৃবিজ্ঞানী ও মানবাধিকার কর্মী; ২১. শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি; ২২. সাঈদা গুলরুখ, সাংবাদিক; ২৩. ড. শাহনাজ হুদা, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ২৪. এড. সালমা আলী, নির্বাহী পরিচালক, বি এন ডব্লিউ এল এ; ২৫. অ্যাড. মিনহাজুল হক চৌধুরী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; ২৬. রোজিনা বেগম, গবেষক ও অধিকার কর্মী; ২৭. মাইদুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; ২৮. ড. স্বপন আদনান, ভিটিং প্রফেসর লন্ডন স্কুল অফ ইকোনোমিক্স এন্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স; ২৯. এনিন্দ্র কুমার নাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ; ৩০. রেজাউল করিম চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, কোস্ট ট্রাস্ট; ৩১. নোভা আহমেদ, অধ্যাপক, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়; ৩২. জাকির হোসেন, প্রধান নির্বাহী, নাগরিক উদ্যোগ; ৩৩. অ্যাড. সাইদুর রহমান, প্রধান নির্বাহী, এমএসএফ; ৩৪. ব্যারিস্টার আশরাফ আলী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; ৩৫. ব্যারিস্টার শাহদাত আলম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; ৩৬. অ্যাড. নাজমুল হুদা, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; ৩৭. অ্যাড. মো: আজিজুল্লাহ ইমন, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; ৩৮. দীপায়ন খীসা, মানবাধিকার কর্মী; ৩৯. হানা শামস আহমেদ, আদিবাসী অধিকার কর্মী; ৪০. মুক্তাশ্রী চাকমা, অধিকার কর্মী ও গবেষক।

More From Author

+ There are no comments

Add yours