হিল ভয়েস, ২১ অক্টোবর ২০২৪, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে বাঙালি সেটেলারদের দ্বারা আদিবাসী জুম্ম জনগণের ওপর সহিংস সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে জুম্ম পিপলস নেটওয়ার্ক ইউকে (জেপিএনইউকে), অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনাল ও ফ্রেন্ডস অব সিএইচটির উদ্যোগে গত ১৯ অক্টোবর শনিবার লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কয়ারে এক শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পর্যায়ক্রমে ১৮, ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর সংঘটিত সহিংস হামলা এবং এরপর গত ১ লা অক্টোবর খাগড়াছড়িতে হামলার ভয়াবহ প্রভাবের বিবরণ তুলে ধরেন।
বক্তাদের মধ্যে ছিলেন উজ্জয়িনী রায়, জেরেমি অ্যালেন, ওম্বাশি গ্রেচ কাতো, রুমানা হাশিম এবং নোয়েল হিউম। সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র রিসার্চ অফিসার সোফি গ্রিগ এই বিক্ষোভে উপস্থিত থাকতে পারেননি, তার বক্তব্য পড়ে শোনান উজ্জয়িনী রায়।
জুম্ম পিপলস নেটওয়ার্ক ইউকে এর উজ্জয়িনী রায় সাম্প্রতিক বর্বরোচিত হামলার নিন্দা জানান এবং আদিবাসী জুম্ম সম্প্রদায়কে রক্ষায় সরকারের ব্যর্থতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সোফি গ্রিগ তার বিবৃতিতে বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামকে বেসামরিকীকরণ এবং জুম্ম জনগণের কাছ থেকে অবৈধভাবে দখলকৃত ভূমি পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি পূরণে বাংলাদেশ সরকার ব্যর্থ। এক্ষেত্রে এটাও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতা যে, তারা বাংলাদেশ সরকারকে তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে চাপ দিতে এবং সহিংসতার জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ব্রিটিশ সরকারকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে তাদের প্রভাব খাটিয়ে সহিংসতার এই চক্রের অবসান ঘটাতে, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সামরিক ক্যাম্প সরিয়ে নিতে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানাচ্ছি।
যুক্তরাজ্যের অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর পদে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী জেরেমি অ্যালেন বান্দরবানে বসবাস ও কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখল এবং আদিবাসী নারীদের উপর আক্রমণ প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি আরও বলেন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে গণ সহিংসতা বন্ধ করার এবং ওই এলাকায় সহিংসতা আরও বৃদ্ধি রোধে কাজ করার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, আগামী ২৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার হাউস অব কমন্সে একটি সর্বদলীয় পার্লামেন্টারি গ্রুপ বাংলাদেশের সর্বশেষ ইস্যু নিয়ে আলোচনা করবে। তবে সেখানে বাংলাদেশের আদিবাসীদের সমস্যাগুলি উত্থাপিত হবে না, কেবল প্রবাসী বাঙ্গালীদের সমস্যাগুলি উত্থাপিত হবে। আমি তাদের কাছে আমাদের আবেদন পাঠিয়েছি।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাতের আগে ও পরে লিঙ্গ সহিংসতার ওপর পিএইচডি করা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সমাজবিজ্ঞানী ড. রুমানা হাশেম বলেন, সম্প্রতি ১লা অক্টোবর খাগড়াছড়িতে ও ১৮ অক্টোবর বান্দরবানে আদিবাসী জুম্ম নারী ধর্ষণের ঘটনা জানতে পেরে তিনি মর্মাহত হয়েছেন। তিনি বলেন , তার গবেষণায় দেখা গেছে, সামরিকীকরণ ও আন্তঃজাতিগত সংঘাতের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে লিঙ্গ সহিংসতা বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, যে দেশে আদিবাসী জুম্ম জনগোষ্ঠী অনাদিকাল থেকে বসবাস করে আসছে সেখানে তাদেরকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, উপজাতি হিসেবে উপস্থাপন করাটা তার কাছে আপত্তিজনক বলে মনে হয়।
বিক্ষোভ শেষে উজ্জয়িনী রায়, জেরেমি অ্যালেন, ধর্মপ্রিয় শ্রমণ, ওমবাশি গ্রেচ কাতো এবং ভ্যালেন্টাইন হার্ডিং ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।