হিল ভয়েস, ৯ অক্টোবর ২০২৪, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের ওপর চলমান সহিংসতা ও হামলায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এশিয়া ইন্ডিজেনাস পিপলস্ প্যাক্ট (এআইপিপি), পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন (সিএইচটিসি) ও ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্ক গ্রুপ ফর ইনডিজিনাস অ্যাফেয়ার্স (আইডব্লিউজিআইএ)।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালায় এবং ২০ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটিতে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে বাঙালি বসতি স্থাপনকারী সেটেলারদের সাম্প্রতিক হামলায় চারজন আদিবাসী ব্যক্তি (রাঙ্গামাটিতে একজন ও খাগড়াছড়িতে তিনজন) নিহত হয়েছেন এবং আদিবাসীদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বৌদ্ধ উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
মোটরবাইক চুরির চেষ্টাকারী এক সেটেলারকে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই সাম্প্রদায়িক হামলাগুলি পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।
গত ৮ অক্টোবর মঙ্গলবার তিনটি মানবাধিকার সংগঠন এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, গত ১ অক্টোবর খাগড়াছড়িতে সপ্তম শ্রেণির এক আদিবাসী ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে খাগড়াছড়ি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক সোহেল রানাকে গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনায় পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সোহেল রানার মৃত্যুতে সেটেলার বাঙালিরা আদিবাসী সম্প্রদায় ও তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপর ব্যাপক হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় প্রশাসন বিকেল ৩টায় চার বা ততোধিক ব্যক্তির বেআইনি জমায়েতের (ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারা, ১৮৯৮) ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা সত্ত্বেও সেটেলাররা নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক হামলা করে ধ্বংসযজ্ঞ অব্যাহত রাখে। নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে সেটেলাররা কয়েক ঘন্টা ধরে এই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যায় যা অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ। খাগড়াছড়ি সেনানিবাস (গ্যারিসন) থেকে মাত্র আধা কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে অবস্থিত পানখেয়্যা পাড়া এলাকায় সাম্প্রদায়িক হামলা হলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কোনো কার্যকরী ভুমিকা গ্রহণ করেনি।
প্রতিবেদনে জানা যায়, গত ১ লা অক্টোবর ২০২৪ সকালে অভিযুক্ত শিক্ষক সোহেল রানা এক কিশোরী আদিবাসী ছাত্রীকে প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষকদের কোয়ার্টারে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। মেয়েটির বন্ধুরা রানাকে তার বাড়িতে নিয়ে যেতে দেখলে তা দ্রুত জানাজানি হয়। খাগড়াছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ ও পাঁচ শিক্ষার্থী তাকে উদ্ধার করে। পরে ধর্ষণের শিকার কিশোরীটি ধর্ষণের সাক্ষ্য দেয় এবং মেডিকেল টেস্টে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়।
এঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু এবং রানা যখন অধ্যক্ষের কার্যালয়ে ঢুকে সোহেল রানাকে জনগন মারধোর ও লাঞ্ছিত করে। মারধোরের এক পর্যায়ে রানা পালিয়ে যাওয়ার সময় একটি টমটম গাড়ির সংঘর্ষে আহত হয় এবং হাসপাতালে মারা যান। উক্ত ঘটনায় উপস্থিত পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাকে জনতার হাত থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হন।
গণমাধ্যমের খবরে উল্লেখ করা হয়,পূর্বে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুলের আরেক আদিবাসী ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির অভিযোগের দীর্ঘ ইতিহাস থেকে সোহেল রানার প্রতি উন্মত্ত জনতার ক্ষোভের সূত্রপাত। গণপিটুনিতে মৃত্যুর মত সহিংসতা সমর্থনযোগ্য না হলেও এই ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী নারী ও মেয়েদের প্রতি নির্যাতনের দায়মুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে, যা জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি করছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে, সিএইচটি কমিশন বহিরাগত সেটেলার বাঙালি কতৃক একটি গণধর্ষণ এবং দুটি ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ নথিভুক্ত করেছে, যার মধ্যে একজন ৮ বছর বয়সী আদিবাসী শিশুও রয়েছে। এই প্রতিবেদন পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার উদ্বেগজনক প্রবণতা প্রতিফলিত করে।
গণপিটুনির ঘটনা শুধুমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রামেই সীমাবদ্ধ নয়। আশঙ্কাজনকভাবে বাংলাদেশের সর্বত্র গণসহিংসতার ঘটনা বার বার ঘটছে। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধুমাত্র ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরেই গণপিটুনিতে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা দেশের আর কোনো অঞ্চলে ঘটেনি। গত ১৮ সেপ্টেম্বর, যখন খাগড়াছড়িতে গণপিটুনীতে একজন বাঙালি সেটেলার নিহত হওয়ার অভিযোগে আদিবাসীদের উপর সেটেলারদের প্রাণঘাতী হামলা হলেও ঐ একই দিন বাংলাদেশের দুটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জনতার দাঙ্গায় আরও দুজন নিহত হলেও সেখানে কোন পাল্টা হামলা চালানো হয়নি। বলা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটেলাররা বারবার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটানোর অজুহাত হিসেবে এ ধরনের ঘটনাকে ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে বা তাদের মৌন সমর্থনে এসব সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত হয়।
আইডব্লিউজিআইএ এবং সিএইচটিসির সাম্প্রতিক এক যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এই অঞ্চলের আদিবাসীদের “আদিবাসী” বলে উল্লেখ করার পর থেকে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী সেটেলাররা পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং সেটেলাররা আদিবাসী শব্দটির তীব্র বিরোধিতা করেছিল। ৩১ আগস্ট, ২০২৪ বান্দরবানে এক গণজমায়েতে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের নেতা কাজী মুজিবুর রহমান ড. ইউনূসকে পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র আদিবাসী বাঙালিরা এবং আদিবাসী জুম্মরা বহিরাগত দাবি করে তার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘আল্লাহু আকবর’ ও ‘নারায়-ই-তাকবীরের’ ভূমিতে পরিণত করার ঘোষণা দেন এবং জুম্মো আদিবাসীরা এ অঞ্চলে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণ করার হুমকি দেন। এআইপিপি, সিএইচটিসি এবং আইডব্লিউজিআইএ মনে করে যে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটেলারদের কর্তৃক চলমান সহিংসতা এবং আক্রমণ এর সাথে সম্পর্ক রয়েছে ।
রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালায় সহিংসতার কারণ অনুসন্ধানে সরকার সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করলেও এআইপিপি, সিএইচটি কমিশন ও আইডব্লিউজিআইএ এই কমিটির উপর আস্থাশীল নয়। উল্লেখ্য পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপর প্রতিটি সাম্প্রদায়িক হামলার পর এরূপ কমিটি গঠন করা হলেও কোনদিনই বিচার হয়নি বা ফলাফল জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। বিগত সাম্প্রদায়িক হামলাগুলির অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই কমিটিগুলোর ম্যান্ডেট ছিল অপর্যাপ্ত এবং কমিটিগুলো স্বাধীন বা নিরপেক্ষ ছিল না এবং বর্তমানেও একই পরিস্থিতি বিদ্যমান।
এআইপিপি, সিএইচটিসি এবং আইডব্লিউজিআইএ আরও সাক্ষ্য প্রমাণ পেয়েছে যে রাঙামাটির সেনা সদস্যরা আদিবাসীদের সেল ফোন চেক করছে এবং সেটেলারদের আক্রমণের ফুটেজ মুছে ফেলছে। এ ধরনের কোনো ফুটেজ পেলে তারা জুম্মোদের মারধর করে। উপরন্তু এটা গভীর উদ্বেগের বিষয় যে, মূলধারার অনেক বাঙালি সেটেলারদের পক্ষ নিচ্ছে, জুম্মোদের বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করছে এবং মূলধারার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে. মিথ্যা দিয়ে ভরা পোস্ট এবং ভিডিওগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হচ্ছে, যা জুম্মো আদিবাসীদের প্রতি দেশব্যাপী ঘৃণা উস্কে দিচ্ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের আক্রমণের সময় জুম্মোদের পোস্ট করা লাইভ ভিডিওগুলি রিপোর্ট করা হয়েছে এবং ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বেশ কিছু আদিবাসী জুম্মো ব্লগার এবং পেজ যারা এই হামলার ভিডিও শেয়ার করেছে তারাও সাইবার আক্রমণকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে এবং তাদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হয়েছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
এআইপিপি, সিএইচটিসি এবং আইডব্লিউজিআইএ জরুরী ভিত্তিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে নোবেল শান্তি বিজয়ী হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি নিশ্চিত করার জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে:
১. পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে অব্যাহত সহিংসতার কারণগুলি স্বাধীনভাবে তদন্ত করার জন্য সরকারের অবিলম্বে জাতিসংঘ ও ম্যান্ডেটধারীদের আমন্ত্রণ জানানো উচিত, যেমনটি ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্তের জন্য জাতিসংঘের একটি দলকে আমন্ত্রণ জানানোর সময় করা হয়েছিল।
২. জাতিসংঘের এ ধরনের তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত সরকারের উচিত কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬ অনুযায়ী একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও পর্যাপ্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি কমিশন প্রতিষ্ঠা করা। এই ধরনের কমিশনের সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাকে তলব করা, সংশ্লিষ্ট সকল এলাকায় প্রবেশ এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র পর্যালোচনা এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কর্তৃক ফৌজদারি কার্যধারা সহজতর করার ক্ষমতাসহ দেওয়ানী আদালতের সকল ক্ষমতা থাকবে। চট্টগ্রামের একজন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে সরকার যে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে এবং আরও ছয়জন নিম্ন পর্যায়ের বেসামরিক প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, তার কোনো ক্ষমতা উপরে উল্লেখিত নেই। বলা যায়, এটি স্বতন্ত্র, নিরপেক্ষ বা বাধ্যতামূলক হিসাবে বিবেচিত হওয়ার জন্য খুব নিম্ন স্তরের। এই কমিটির সদস্যদের পদমর্যাদা পার্বত্য অঞ্চলে অঞ্চল/ব্রিগেড পর্যায়ে নিযুক্ত ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের চেয়ে অনেক নিচে, কার্যত এই কমিটি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তলব করতে এবং তাদের আচরণ খতিয়ে দেখতে অক্ষম হবে তা বলাবাহুল্য ।
৩. হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও স্বচ্ছ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের ওপর সহিংসতাকে ঘিরে বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসানে সরকারকে অবশ্যই চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। এআইপিপি, সিএইচটিসি এবং আইডব্লিউজিআইএ পার্বত্য চট্টগ্রামের গণহত্যাগুলির যথাযথ বিচার দাবি করে।
৪. শক্তিশালী আইনি সুরক্ষা বাস্তবায়ন এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার অপরাধীদের জবাবদিহিতার আওতায় এনে আদিবাসী নারী ও মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
৫. ১৪৪ ধারায় সহিংসতা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা অনুসন্ধান করা এবং জুম্মোদের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় ব্যর্থতার জন্য দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা।
৬. সরকারের উচিত পার্বত্য চট্টগ্রামে বেসামরিক প্রশাসন ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য নির্বাহী আদেশ প্রদানের মাধ্যমে ‘অপারেশন উত্তরণ’ অবিলম্বে বাতিল করা। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে নির্ধারিত ছয়টি স্থায়ী সামরিক ঘাঁটি ব্যতীত সকল অস্থায়ী সামরিক ও নিরাপত্তা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা।
৭. পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনী সম্পূর্ণরূপে বাঙালি সম্প্রদায়ের লোকদের সমন্বয়ে গঠিত হওয়ার কারনে প্রায়শই সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের সময় নিরপেক্ষ ভূমিকা বজায় রাখতে অপারগ। কাজেই আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা তৈরি এবং আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকারের উচিত এই অঞ্চলে একটি জাতিগতভাবে বৈচিত্র্যময় পুলিশ বাহিনী প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে আদিবাসী জনগণ এবং জাতিগত বাঙালি উভয়কেই অন্তর্ভুক্ত করা , যা ১৯৮৯ সালের পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনে (১৯৮৯ সালের ১৯, ২০ এবং ২১ নং আইন) স্পষ্টভাবে বিধান করা হয়েছে। এই মিশ্র পুলিশ বাহিনী বৈষম্যমূলক আচরণ রোধ করতে এবং আদিবাসী ও বাঙালি গোষ্ঠীগুলির মধ্যে উদ্ভূত অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে পক্ষপাতের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করবে।
৮. এআইপিপি, সিএইচটিসি এবং আইডব্লিউজিআইএ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উস্কে দেয় এমন ভুল তথ্য এবং ঘৃণাত্মক বক্তব্য ছড়ানোর জন্য মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি ব্যবহার করা না হয় তা নিশ্চিত করতে অনুরোধ করে ।
৯. পরিশেষে, এটা স্পষ্ট যে, সেটেলাররা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি এবং এ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি অর্জনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে। একমাত্র কার্যকর সমাধান হ’ল পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী সেটেলারদের সম্মানজনক স্থানান্তর। পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানান্তরিত হওয়ার পর থেকে সরকার যেভাবে তাদের রেশন, খাদ্যশস্য এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদান করে চলেছে অনুরূপভাবে সরকার তাদেরকে চট্টগ্রামের বাইরে স্থানান্তর করতে পারে এবং রেশন, খাদ্যশস্য এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদান করতে পারে।
এআইপিপি, সিএইচটিসি এবং আইডব্লিউজিআইএ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে যথাযথ পদক্ষেপ, জবাবদিহিতা এবং গণতান্ত্রিক সংলাপের মাধ্যমেই কেবল পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি ও ন্যায়বিচার অর্জন করা সম্ভব। সামরিকীকরণ পদ্ধতি সমাধান নয়; পরিবর্তে, এআইপিপি, সিএইচটিসি এবং আইডাব্লুজিআইএকে অবশ্যই এমন একটি পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে যা সমস্ত স্টোকহোল্ডারদের মধ্যে উন্মুক্ত যোগাযোগ এবং সহযোগিতাকে উৎসাহ দেয়। অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং সংঘাতের মূল কারণগুলি সমাধান করাই পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি ফিরিয়ে আনার একমাত্র সমাধান হতে পারে।