পলাশ খীসা
১০ আগষ্ট ’৯৬ ঢাকায় অবস্থানরত কেন্দ্রীয় কমিটির সকল নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটি জরুরী মিটিং জগন্নাথ হলের উপাসনালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সেই মিটিং-এ সভাপতিসহ ৭ জনের পদত্যাগকে হঠকারী সিদ্ধান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় এবং পরবর্তী কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভা না হওয়া পর্যন্ত থোয়াই অং মারমা এবং পলাশ খীসাকে যথাক্রমে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। পাশাপাশি সভাপতিসহ ৭ জন নেতার পদত্যাগ এবং ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব কারা পালন করবেন এসব বিষয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। মিটিং শেষ হওয়ার আগে (তখন রাত ৮টা) ট্রাইবেল হোষ্টেল থেকে ১০/১২ জন ছেলে মিটিংএর স্থলে আসে। তাদের কেউ কেউ হাফ প্যান্ট পরিহিত ছিল। তারা এসে সরাসরি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে কৈফিয়ত চায় যে, কেন ৭ জন নেতাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে? কাউন্সিলের রেজাল্ট কী ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা ঠান্ডা মাথায় তাদেরকে বুঝাতে চেষ্টা করি। ইতিমধ্যে জগন্নাথ হলের ছাত্ররা খবর পেয়ে ২০/৩০ জন তাদের কাছাকাছি এসে গেলে অবস্থা বেগতিক দেখে হোষ্টেলের উত্তেজিত ছাত্ররা চলে যায়। পরে জানা যায় সঞ্চয় হোষ্টেলে গিয়ে ছেলেদের ভুল বুঝিয়ে উত্তেজিত করে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে মারার জন্য পাঠিয়েছে। সেদিনের মিটিং-এ ২২ ও ২৩ আগষ্ট তারিখে কেন্দ্রীয় কমিটির জরুরী বর্ধিত সভা আহ্বান করা হয়। সেই বর্ধিত সভার আগে ১৭ আগষ্ট দীপ্তি শংকর চাকমা ও খুশীরায় ত্রিপুরা তথাকথিত সম্পাদকমন্ডলীর নাম দিয়ে একটি সার্কুলারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভা আহ্বান করে এবং নিজেদেরকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা দেয়। কিন্তু সভাপতিসহ ৬ জন সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য পদত্যাগ করার পর বাস্তবিক অর্থে সম্পাদকমন্ডলী অকার্যকর হয়ে যায়। কেননা সম্পাদকমন্ডলীর মোট সদস্য হচ্ছে ১১ জন। সেখান থেকে ৬ জন পদত্যাগ করলে বাকী থাকে ৫ জন। এই ৫ জনের মধ্যে মৃগাঙ্ক খীসা ১০ আগষ্টের মিটিংয়ে উপস্থিত থেকে তার মূল্যবান মতামত রেখেছিলেন। এছাড়াও গঠনতন্ত্র অনুসারে কোনো সহ-সভাপতি এবং কোনো সহ-সাধারণ সম্পাদক সম্পাদকমন্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত হবেন তা কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক তখনো পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল না। ফলে বাকী থাকে মাত্র ২ জন। এই ২ জন কোনোদিন সম্পাদকমন্ডলীর প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। ২২-২৩ আগষ্ট কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, রাঙ্গামাটিতে ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে ২ দিন ব্যাপী কেন্দ্রীয় বিশেষ প্রতিনিধি সম্মেলন করা হবে। অপরদিকে দীপ্তিশংকর ও খুশীরায় এক সার্কুলারের মাধ্যমে জানায় যে, কেন্দ্রীয় বিশেষ প্রতিনিধি সম্মেলন ২২-২৩ সেপ্টেম্বর তারিখে মহালছড়িতে অনুষ্ঠিত হবে। ফলে স্পষ্টতঃ সংগঠন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এহেন অবস্থায় সমীরণ চাকমা ও শক্তিপদ ত্রিপুরা খবর নিয়ে আসেন যে, “উভয় প্রতিনিধি সম্মেলন স্থগিত ঘোষণা করতে হবে এবং ৫ জন করে (উভয় পক্ষ থেকে) প্রতিনিধি গিয়ে পার্টির (জেএসএস) নেতৃবৃন্দের সাথে ২ অক্টোবর ’৯৬ দেখা করতে হবে।”
আমাদেরকে নিয়ে যাওয়ার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিভাস দেওয়ানকে। আমরা জলিমং মারমা, মৃগাঙ্ক খীসা, লয়েল ডেভিড বম, জিতেন চাকমা, বিভাস দেওয়ান ও আমি ২৯ সেপ্টেম্বর’৯৬ খাগড়াছড়িতে সৌখিন চাকমার বাসায় পৌঁছে যায়। ৩০ সেপ্টেম্বর খুব ভোরে রওয়ানা হয়ে ধুদুকছড়ার দিকে হারুবিলে গিয়ে আমরা শুনি, যে রাস্তা দিয়ে যাবো সে রাস্তায় আর্মীরা তল্লাসী অভিযান চালাচ্ছে। ফলে সারাদিন সে এলাকায় কাটালাম। দুপুরে খাবার হিসেবে জুটলো কলা আর পাউরুটি। বিকেল বেলায় জলি মং এর জ্বর আসে। ধুদুকছড়ায় কোনো গাড়ী না থাকায় খাগড়াছড়ি ফিরে আসতে পারছিলাম না। তাছাড়া পাবলিক গাড়ীতে আসা সম্ভব নয় প্রসিত চক্রের সন্ত্রাসীদের কারণে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে একটা জীপের শব্দ শুনে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ালাম। গাড়ীটা ধুদুকছড়ায় যাচ্ছে। গাড়ী থামিয়ে দেখি সঞ্চয়রা যাচ্ছে। গাড়ীর ড্রাইভারকে ফিরে আসার জন্য বলে অপেক্ষায় থাকলাম। গাড়ী ফিরে আসলে আমরা খাগড়াছড়িতে সৌখিন দা’র বাসায় চলে আসি। খবর পাঠানোর জন্য বিভাস দেওয়ান চিঠি লিখে এলেন। কাজেই অপেক্ষায় থাকতে হলো। ১ অক্টোবর’৯৬ সারাদিন সৌখিন দা’র বাসায় কাটালাম। মৃগাঙ্ক খীসা ও আমি আমার বোনের বাসা মধুপুরে গেলাম। বিভাস দেওয়ান, জিতেন চাকমা ও ডেভিড বম খাগড়াপুরে শক্তিপদ ত্রিপুরার বাসায় বেড়াতে যায়। সৌখিন চাকমার বাসায় কেবল জলিমং মারমা ছিলেন। তার শরীর খুব বেশী ভালো না থাকায় তিনি বের হননি।
আকাশের অবস্থা ভালো নয়, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। যে কোনো মুহূর্তে বৃষ্টি হতে পারে। জলিমং তখন হারমোনিয়াম নিয়ে ভূপেন হাজারিকার একটি গান গাইছে- “মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটুখানি সহানুভূতি মানুষ কি পেতে পারে না …..”। ঠিক সেই মুহূর্তে বাইরে থেকে মুখোশ পরিহিত একদল যুবক এসে একজন তাকে ডাকলো – “জলিমং দা’ আপনি একটু বাইরে আসুন, আপনার সাথে আমাদের কথা আছে।” বিদ্যুৎ চমকানিতে জলিমং মারমা দেখেছেন মুখোশ পরিহিত অবস্থায় একদল যুবক কিরিচ, হকিষ্টিক হাতে নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। সংখ্যায় ১৫/২০ জনের কম নয়। অবস্থা বুঝে তিনি বললেন – “তোমাদেরকে তো চিনি না, কথা থাকলে একজন ভিতরে এসে বললে ভালো হবে।” যুবকরা তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে বলে – “জলি মং বাইরে চলে আয়, না হলে অসুবিধা হবে।” তখন আর দাদা ডাকছে না। জলি মং মারমা উঠে যাওয়ার ভান করে দরজাটা বন্ধ করে দেয় এবং “সৌখিন দা, সৌখিন দা, এরা কারা” বলে চিৎকার করে ডাকতে থাকে। তখন সৌখিন দা বাড়ীতে ছিলেন না। তার ডাকে সৌখিন দা’র স্ত্রী আর হ্যাপি এগিয়ে আসেন। মৃগাঙ্ক খীসা ও আমি মধুপুরের বোনের বাসা থেকে রওনা হয়েছি। রিক্সা ষ্টেশনে পৌঁছার আগেই বৃষ্টি শুরু হলে নিপুলিকা চাকমার বাসায় উঠি। সেখানে প্রায় ঘন্টা খানেক ছিলাম। বৃষ্টি থামলে রিক্সা নিয়ে সৌখিন চাকমার বাসার দিকে যেতে থাকি। শাপলা চত্বর ফেলে গিয়ে ব্রিজটা পার হওয়ার সাথে সাথে আমার নাম ধরে একজন ডাকলেন। আমরা তারপরও যাচ্ছি। কারণ খাগড়াছড়িতে তখন একদিকে মুখোশ বাহিনী এবং অন্যদিকে প্রসিত চক্রের সন্ত্রাসীরা রয়েছে। তাই খুব সাবধানে না চললে বিপদের সম্ভাবনা অনেক বেশী থেকে যায়। কিছুদূর অগ্রসর হতেই একটা মোটর সাইকেলে করে বিভাস দেওয়ান আর রনি আমাদের রিক্সার গতিরোধ করেন এবং বলেন অবস্থা খারাপ, রিক্সা ঘুরাও। আমরা রিক্সা ঘুরিয়ে তাদের পিছু নিলাম। পানখাইয়া পাড়া রোডে বাজারের এক হোটেলে খাওয়া-দাওয়া সেরে যোগাযোগ কমিটির আহ্বায়ক বাবু হংসধ্বজ চাকমার বাসায় গেলাম রাত্রি যাপনের জন্যে। সেখানে বিষয়টা বিস্তারিত শুনলাম যে, সৌখিন দা’র বাসা ঘেরাও করেছে প্রসিত চক্র। আমাদেরকে খুঁজছে। জলি মং মারমার অবস্থা কী হয়েছে রনি চাকমা জানে না। সে আমাদেরই এক শুভাকাঙ্খী। খবর পেয়ে সে মোটর সাইকেলে করে রাস্তায় আমাদের অপেক্ষায় ছিল। বিভাস দেওয়ানদের পেয়েছে খবংপয্যা ঢুকার রাস্তায়। তারপর আমাদেরকে বহু সময় অপেক্ষা করার পর আমাদের সাথে তাদের দেখা।
অনেক অনেক দিন পরে খবর পেলাম সেদিন ১ অক্টোবর’৯৬ পুলক চাকমা ও তাপস দেওয়ানের নেতৃত্বে ১৫/১৬ জনের একটা গ্রুপ সৌখিন দা’র বাসা ঘেরাও করেছে আমাদের হামলা করার জন্য। তাদের উপর নির্দেশ ছিল পলাশ খীসা, জিতেন চাকমা ও বিভাস দেওয়ানকে হত্যা করা এবং অন্যদেরকে কিছু উত্তম-মধ্যম দেয়া। পুলক চাকমা ও তাপস দেওয়ান আমার স্কুলের জীবনের বন্ধু। ৮৪-৮৫ সাল পর্যন্ত তিন বছর আমরা সহপাঠী ছিলাম। কোনোদিন তাদের কারোর সাথে ঝগড়া তো দূরের কথা, কথা কাটাকাটি পর্যন্ত হয়নি। অথচ সেদিন তারা এসেছে প্রসিত চক্রের নির্দেশে নিজেদের বিবেক বুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে বন্ধুকে মেরে ফেলার জন্য। আমি জানি না সেদিন আমাকে পেলে মেরে ফেলতে পারতো কিনা। পুলক চাকমা পরবর্তীতে ভুল বুঝতে পেরে প্রসিত চক্র ত্যাগ করে চলে এসে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে। অন্যদিক তাপস দেওয়ানের কোনো খবর আমি জানি না। সম্ভবতঃ সে এখনো প্রসিত চক্রের সাথে রয়েছে। পরের দিন সকালে আশীষ চাকমা (প্রভাষক, পানছড়ি কলেজ) হংসধ্বজ চাকমার বাসা থেকে আমাদেরকে সৌখিন চাকমার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে আরেক বন্ধু দেবোত্তম চাকমার (পানছড়ি) সাথে দেখা হয়। সৌখিন চাকমার বাসা যখন সন্ত্রাসীরা ঘেরাও করে ঠিক সে সময়ে তারা রিক্সায় করে আসছিলেন। বাড়ীর কাছাকাছি পৌঁছতে না পৌঁছতে তাদেরকেও ঘিরে ফেলে সন্ত্রাসীরা। তাদের নাম, কোথায় যাচ্ছে ইত্যাদি জিজ্ঞাসা করে ছেড়ে দেয় তাদেরকে। পার্টির পক্ষ থেকে দেবোত্তম চাকমাকে পাঠানো হয়েছে আমাদেরকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
সেদিন ২ অক্টোবর আমরা নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম সূর্য প্রায় ডুবু ডুবু অবস্থায়। পরের দিন থেকে আলোচনা শুরু। প্রথম দিনে আমাদের উভয় পক্ষের কথা শুনলেন এবং কথা বললেন পার্টির নেতৃবৃন্দের মধ্যে সুধাসিন্ধু খীসা, চন্দ্রশেখর চাকমা ও প্রধীর তালুকদার। শেষ দিনে আসলেন পার্টি লিডার জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমাসহ অন্য নেতৃবৃন্দ। তিনি বেশ কিছু সময় ধরে আলোচনা করার পর বললেন যে, “সঞ্চয়দের পদত্যাগ করা ঠিক হয়নি। আন্দোলনে তাদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পার্টি মনে করে আন্দোলনের স্বার্থে তাদের স্ব স্ব পদে ফিরে আসা উচিৎ। কাজেই তারা যদি স্ব স্ব পদে ফিরে আসতে চায় তাহলে তোমরা (আমাদের পক্ষ) গ্রহণ করতে পারবে কিনা?” তিনি প্রথমে আমার মত জানতে চাইলেন। আমি বললাম- আমরা তো তাদেরকে পদত্যাগ করতে বলিনি। তারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছে। এখন যদি স্বেচ্ছায় তারা আবার ফিরে আসতে চায়, আমরা গ্রহণ করবো না কেন? তখন তাদের কাছ থেকে লিডার জানতে চাইলেন তারা ফিরে আসতে চায় কিনা? সঞ্চয় হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানালে লিডার বলেন, এখান থেকে যাওয়ার পরপরই লিখিতভাবে ফিরে আসার জন্য সঞ্চয়রা আবেদন জানাবে। বর্তমানে যারা রয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটিতে তারা তা গ্রহণ করবে। সকল প্রকার মতভেদ ভুলে গিয়ে একই সাথে দেশ-জাতির জন্য কাজ করার আহ্বান জানালেন তিনি। এই সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর সঞ্চয় সুস্থ হয়ে উঠলেন। উল্লেখ্য যে, সেখানে যাওয়ার পরপরই সঞ্চয় নিজেকে অসুস্থ বলেছিলেন। অসুস্থতার কথা বলে মিটিং-এ খুব বেশী কথা বলেনি সঞ্চয়। বেশীর ভাগ কথাগুলো বলেছিল খুশীরায় ত্রিপুরা। লিডার যখন রাজনৈতিক বিষয়ে আলাপ করছিলেন বিশেষ করে পিসিপি, পিজিপি ও এইচডব্লিউএফ এর কথা তথা প্রসিতের হঠকারী কার্যকলাপের কথা, তখন খুশীরায় জানতে চান যে, প্রসিতকে দিয়ে আন্দোলন বা জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা? তখন লিডার বলেছিলেন, “হ্যাঁ, অনেক অনেক ক্ষতি করছে প্রসিত, অনেক গোপন তথ্য সে প্রকাশ করেছে। ভবিষ্যতে আরো বেশী ক্ষতি করতে পারে।” লিডারের সেইদিনের সেই ভবিষ্যত বাণী আজ সত্যে পরিণত হয়েছে। প্রসিত একটি বিভেদ চক্র সৃষ্টি করে অপূরণীয় ক্ষতি করলো জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে।
সেদিন আরো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, সঞ্চয়রা পদত্যাগের পর উভয় পক্ষ থেকে যে সমস্ত সার্কুলার শাখাসমূহে পাঠানো হয়েছে যৌথভাবে উভয় পক্ষ স্বাক্ষর করে সার্কুলারের মাধ্যমে সেগুলো বাতিল ও পুড়ে ফেলার নির্দেশ দিবে। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক যৌথ স্বাক্ষরে ৬ অক্টোবর ’৯৬ একটা সার্কুলার শাখাসমূহের বরাবরে পাঠানো হয়। দুপুরে খাবারের বিরতির পর এবার ঢাকা মহানগর কাউন্সিলের ভোটের রেজাল্ট নিয়ে লিডার আলোচনা শুরু করেন। তিনি বলেন, “আমার হাতে যে কাগজগুলো (হাতে একগাদা কাগজ দেখিয়ে) দেখছেন, এগুলো সব ঢাকা মহানগর শাখার কাউন্সিলের উপর বিভিন্ন কর্নার থেকে পাওয়া রিপোর্ট। তা ছাড়া এ বিষয়ে আমাদের পার্টির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ আপনাদের সাথে আলাপ আলোচনা করে তাদের মতামতও দিয়েছেন। সব দিক আলোচনা পর্যালোচনা করে আমাদের পার্টি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, ঢাকা মহানগর কাউন্সিলে অনুষ্ঠিত ভোটে জীতেন-বিবিসুৎ প্যানেল জয়যুক্ত হয়েছে। কাজেই গণতান্ত্রিক এই মতামতকে তোমাদের (সঞ্চয়দের উদ্দেশ্য করে) মেনে নেয়া উচিৎ হবে বলে আমরা মনে করি।” পার্টি লিডারের এই বক্তব্যের পরও সঞ্চয়রা মেনে নিতে চায় না। তারা আবারও তাদের যুক্তি উপস্থাপন করতে চেষ্টা করে। তখন লিডার আবারও বলেন, “আমি শুরুতেই বলেছি আমরা অনেক নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করেছি এবং তোমাদের সবার বক্তব্যও শুনেছি। সবকিছু জেনেই আমরা বলছি, তোমাদের এই মতামত মেনে নেয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।” তখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও সঞ্চয়রা সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়।
এরপরের কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং-এ প্রসিত চক্রের দীপ্তি শংকররা আরো কিছু সমস্যা সৃষ্টি করে। কথা ছিল সঞ্চয়সহ যারা পদত্যাগ করেছে তারা ফিরে আসার জন্য লিখিতভাবে কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানাবে। কিন্তু মিটিং-এ দীপ্তি শংকরদের দাবী হচ্ছে, কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে পদত্যাগকারীদেরকে ফিরে আসার জন্য লিখিতভাবে আহ্বান জানাতে হবে। ঐক্যের স্বার্থে আমরা রাজী হলে লেখাটা কী রকম হবে তা নিয়ে দীপ্তি শংকর ও শুভাশীষ বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। শেষে কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বানে সঞ্চয়রা ফিরে এসে তাদের দায়িত্ব পালন করতে শুরু করে।
(চলবে..)
লেখক: সাবেক সভাপতি, পিসিপি, কেন্দ্রীয় কমিটি
+ There are no comments
Add yours