হিল ভয়েস, ২ অক্টোবর ২০২৪ খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়িতে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন ও সেফটি বিভাগের চিফ ইনস্ট্রাক্টর সোহেল রানা কর্তৃক ৭ম শ্রেণির এক ত্রিপুরা স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ করার পর বিক্ষুদ্ধ ছাত্রদের মারধরের হাত থেকে বাঁচতে দেয়াল টপকে পালিয়ে যাওয়ার সময় গাড়িতে ধাক্কা লেগে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীর মাধ্যম জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সকাল ৯টার দিকে শিক্ষক সোহেল রানা ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া ঐ ত্রিপুরা ছাত্রীকে প্রলোভন দেখিয়ে ডেকে নিয়ে তার কোয়ার্টারে নিয়ে যায়। এটা তার সহপাঠীরা দেখে ফেললে কয়েকজন কলেজে উপস্থিত হয়ে অধ্যক্ষের কাছে যায় মেয়েটির খোঁজ নিতে।
পরে সেখানে পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজনের উপস্থিতিতে মেয়েটিকে ওই শিক্ষকের রুম থেকে উদ্ধার করা হয়। মেয়েটি জানায় যে, ওই শিক্ষক তাকে আটকে রেখে ধর্ষণ করেছে। তখন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের ওপর চড়াও হয় এবং তাকে মারধর করতে শুরু করে। এই সময় বিক্ষুদ্ধ ছাত্রদের মারধরের হাত থেকে বাঁচতে দেয়াল টপকে পালিয়ে যাওয়ার সময় টমটম (ব্যাটির চালিত গাড়ি) ধাক্কা লেগে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার মৃত্যু নিশ্চিত করে।
এই ঘটনার জের ধরে সেখানকার সেটেলার বাঙালিরা ছাত্রদের উপর হামলা চালায়। এতে ছাত্র ও সেটেলার বাঙালিদের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া হয়। এই সময় সেটেলার বাঙালিদের হামলায় একজন জুম্ম শিক্ষার্থী চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আহত হন। এছাড়া আরো বেশ কয়েকজন ছাত্র এবং সাধারণ জুম্ম আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আশে-পাশের বিভিন্ন স্থান থেকে আনুমানিক দুপুর ২টার দিকে সেটেলার বাঙালিরা একত্রিত হয়ে লাঠিসোটা ও দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে পাহাড়ি গ্রামে হামলা চালাতে আসে। এতে পাহাড়িদের সাথে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া হয়।
এর রেশ ধরে সেটেলার বাঙালিরা মহাজন পাড়ায় হামলার চেষ্টা করে। এসময় মহাজন পাড়ার যুবক ও স্থানীয় বাসিন্দারা সেটেলারদের হামলার প্রতিরোধ গড়ে তুলে। পরে সেখানে সেনাবাহিনীর ২টি গাড়ি আসলে স্থানীয় যুবক ও বাসিন্দারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এই সুযোগে সেটেলার বাঙালিরা সেনাবাহিনীর সামনেই দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় ও একটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। হামলার সময় সেনাবাহিনী ও পুলিশ অবস্থান করলেও হামলাকারী সেটেলারদের কোনোপ্রকার বাধা দিতে দেখা যায়নি, বরং সেটেলারদের সহযোগিতা করতে দেখা গেছে বলে জানান একজন প্রত্যক্ষদর্শী।
এ সময় বাজার থেকে ফেরার পথে দক্ষিণ খবংপুজ্জে আদর্শ বৌদ্ধ বিহারের সেবক উজ্জ্বল মারমাকে সেটেলাররা পিঠে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত উজ্জ্বল মারমার বাড়ি পানছড়ি উপজেলার লোগাংয়ের উল্টাছড়ি গ্রামে বলে জানা যায়। এছাড়া সেটেলার বাঙালিদের হামলায় আরো ২ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। তারা হলেন-কান্তা মনি চাকমা, সাবেক পৌরসভা কাউন্সিলর, পিতার নাম অরুণ কুমার চাকমা ও শ্যামল কান্তি চাকমা, পিতা-ভুজলাল চাকমা।
অন্যদিকে, সেটেলার বাঙালিরা চেংহ্লাউ পাড়ায় একজন রাখাইনের দোকানে অগ্নিসংযোগ করে। এতে দোকানে থাকা বুদ্ধমুর্তি ও অন্যান্য মালামাল পুড়ে যায়।
এছাড়াও সেটেলার বাঙালিরা, মধুপুর, কল্যাণপুর, পানখাইয়া পাড়া, কলেজ গেইট, স্লুইস গেইট সহ পাহাড়ি অধ্যুষিত অঞ্চলে হামলার চেষ্টা করে ।
হামলার পর প্রশাসন গতকাল বিকাল ৩টা থেকে শহরে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। বর্তমানে খাগড়াছড়ি শহর সহ আশেপাশের এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।