হিল ভয়েস, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ বান্দরবান: রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে সেনাবাহিনী ও সেটেলার বাঙালি কর্তৃক জুম্ম হত্যা, বৌদ্ধ বিহারে হামলা ও ভাংচুর, জুম্মদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের প্রতিবাদে বান্দরবানের থানছিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।
আজ সকাল ১০:০০ ঘটিকায় থানছি উপজেলা সদরে ‘থানছি আদিবাসী ছাত্র ও যুব সমাজ’- এর ব্যানারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অংসিং মার্মা সঞ্চালনায় এবং অংগ্য মার্মা সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন থংলে থুমী, মুক্ত ত্রিপুরা, উক্যবুং মার্মা, রেংহায় ম্রো, ফ্রান্সিস ত্রিপুরা, জ্যোতি বিকাশ ত্রিপুরা, সিংওয়াই মার্মা, মংমে মারমা।
সমাবেশে আদিবাসী ছাত্র ও যুব সমাজের পক্ষ থেকে ১০ দাবি উত্থাপন করেন অংগ্য মার্মা।
সমাবেশে বক্তারা রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে সেনাবাহিনী ও সেটেলার বাঙালি কর্তৃক জুম্মদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, “সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতিতেই সেটেলার বাঙালিরা জুম্মদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা আক্রমণকারী সেটেলার বাঙালিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী পদক্ষেপ না নিয়ে প্রতিবাদকারী জুম্মদের মিছিলে রাতের আঁধারে গুলিবর্ষণ করেন।”
বক্তারা বলেন, “রাঙ্গামাটিতে সেনা মদদে সেটেলার বাঙালি কর্তৃক পাহাড়ী ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে অতর্কিত হামলা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের কার্যালয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ, মৈত্রী বৌদ্ধ বিহারে ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা, পাহাড়ীদের দোকানপাট ও ঘর-বাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাগুলোই প্রমাণ করে পাহাড়ে পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটানো হচ্ছে। ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণেই সেটেলার বাঙালিরা এ ধরণের নিকৃষ্টতম হামলা সংঘটিত করছে।”
বক্তারা আরো বলেন” পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি লঙ্ঘন করে ২০০১ সাল থেকে পাহাড়ে অপারেশন উত্তরণ নামে সেনাশাসন জারি রয়েছে। সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পাহাড়ে সেটেলার বাঙালিদের পুনর্বাসন বৃদ্ধি পাওয়ায় আজকে সেটেলার বাঙালিরা সংখ্যাগুরু হয়ে গেছে। পাহাড়ীরা আজ নিজ ভূমিতে পরবাসী, সংখ্যালঘু ও অধিকারহীন হয়ে পড়েছে এবং পাহাড়ীদেরকে জাতিগতভাবে নির্মূলীকরণের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ির মতো আর যদি জুম্মদের উপর সামপ্রদায়িক হামলা করা হয় তাহলে পাহাড় ১৯৯৭ এর পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে বাধ্য হবে এবং এর দায়ভার সম্পূর্ণরূপেই সরকার ও সেনাবাহিনীকেই নিতে হবে।
সমাবেশে নিমোক্ত ১০ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়:
(১) রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও দিঘীনালায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় আক্রান্ত আদিবাসীসহ তিন পার্বত্য জেলার আদিবাসী জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ জানমালের নিরাপত্তা রাখতে হবে।
(২) জাতিসংঘের অধীনে তদন্ত কমিশন গঠন করে এই ঘটনার তদন্ত করে জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
(৩) সাম্প্রদায়িক হামলায় নিহতদের পরিবারবর্গকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের সুচিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
(৪) আদিবাসীদের ক্ষতিগ্রস্থ বৌদ্ধ বিহার, দোকানপাট ও বাড়িঘরের মালিকদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
(৫) পার্বত্য চট্টগ্রাম যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল নয়, তাই পার্বত্য চট্টগ্রাম সেনাশাসন বন্ধ করতে হবে।
(৬) পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা রাজনৈতিকভাবে সমাধান করাসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বাস্তবায়ন করতে হবে।
(৭) স্থানীয় সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের দায় বিভাগীয় অনুসন্ধান করে দায়ী ব্যক্তিদের বরখাস্ত এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(৮) অবিলম্বে আদিবাসীদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
(৯) আদিবাসীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী নামে উস্কানিমূলক বক্তব্য বন্ধ করতে হবে।
(১০) পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী স্থানীয় ভোটার তালিকা প্রণয়নপূর্বক জেলা পরিষদ নির্বাচন দিতে হবে।