বাঙ্গালহালিয়ায় মগ পার্টিকে নিয়ে সেনাবাহিনীর ষড়যন্ত্র!

হিল ভয়েস, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বিশেষ প্রতিবেদক: সম্প্রতি রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নে সেনা মদদপুষ্ট মগ পার্টি সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ব্য বৃদ্ধি পেলে, বিশেষ করে বাঙ্গালহালিয়া বাজারে এক বয়স্ক দোকানদারকে চাঁদা নিয়ে মারধরের পর স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা মগ পার্টির ২ সন্ত্রাসীকে গণপিটুনি দেয় এবং মগ পার্টির আস্তানায় অগ্নিসংযোগ করে সন্ত্রাসীদের বাঙ্গালহালিয়া ত্যাগ করতে বাধ্য করে।

কিন্তু এর কয়েকদিন পরেই সেনাবাহিনী আবারও মগ পার্টির সন্ত্রাসীদের বাঙ্গালহালিয়ায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জেএসএস’র প্রসঙ্গ টেনে এনে কোনো কৃত্রিম সংঘাত বা সংকট তৈরি করে মগ পার্টিকে দিয়ে পরিস্থিতিকে অধিকতর অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে বলেও নানা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

সম্প্রতি বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আদুমং মারমা অপহরণ ঘটনা এবং মগ পার্টি সন্ত্রাসীদের কর্তৃক ১ কোটি টাকা মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টার পশ্চাতেও সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততা ও ষড়যন্ত্র থাকার প্রমাণ স্থানীয় সূত্রে পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, গতকাল ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সকালের দিকে রাজস্থলী সেনা সাব-জোন থেকে সেনাবাহিনীর ৬টি গাড়ি বাঙ্গালহালিয়া অভিমুখে রওনা দেয়। পথিমধ্যে গাইন্দ্যা বাজার (৫নং বাজার) থেকে ৩টি গাড়ি ফিরে যায় এবং অপর ৩টি গাড়ি বাঙ্গালহালিয়া সেনা ক্যাম্পে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৬টি গাড়ি বহরের মাঝখানে একটি সাদা মাইক্রোবাসও ছিল। তবে মাইক্রোবাসটিতে কারা ছিল, সেটি স্পষ্ট নয়। ধারণা করা হচ্ছে, সাদা মাইক্রোবাসটিতে মগ পার্টির সদস্য এবং সম্প্রতি অপহৃত ইউপি চেয়ারম্যান আদুমং মারমা ছিলেন।

স্থানীয় সূত্র আরো জানায়, মাইক্রোবাস সহ সেনাবাহিনীর গাড়ির বহর বাঙ্গালহালিয়া পৌঁছার সাথে সাথে সেনাবাহিনী কর্তৃক আশেপাশের গ্রামবাসীদের নিয়ে বাঙ্গালহালিয়া সেনা ক্যাম্পে একটি জরুরি সভা আয়োজন করা হয়। সভায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, অপহৃত চেয়াম্যানকে উদ্ধার করতে হলে জেএসএস (জনসংহতি সমিতি)-এর সাথে যুদ্ধ করতে হবে। এজন্য যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে, জনগণকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানানো হয়।

গত ৩১ আগস্ট, হিল ভয়েসের একটি প্রতিবেদনেও মগ পার্টি সন্ত্রাসীদের আবার বাঙ্গালহালিয়ায় নিয়ে আসতে সেনাবাহিনী ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য, গত ৩০ আগস্ট, সকালে বাঙ্গালহালিয়া ক্যাম্পের ৫৬ ইবি’র কমান্ডার সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ আশরাফ বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের সকল নির্বাচিত মেম্বার ও সংরক্ষিত আসনের মেম্বারদের ক্যাম্পে ডেকে একটি সভা করেন বলে জানা যায়। এসময় ক্যাম্প কমান্ডার মেম্বারদেরকে চেয়ারম্যানের অপহরণ ঘটনায় জেএসএস-এর হাত আছে বলে প্রচার করার নির্দেশ দেন এবং জেএসএস-এর বিরুদ্ধে মিছিল-সমাবেশ করতে বলেন।

তবে ক্যাম্প কমান্ডারের উক্ত মতের পক্ষে শুধুমাত্র ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান কামাল মত দিলেও বাকি সমস্ত মেম্বারগণ দ্বিমত পোষণ করেন বলে জানা যায়।

অপরদিকে, গত ২৫ আগস্ট, বিকাল আনুমানিক ৩ টার দিকে মগ পার্টির সন্ত্রাসীদের কর্তৃক চেয়ারম্যান আদুমং মারমা অপহরণের শিকার হওয়া এবং সর্বশেষ ১ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবির পেছনেও সেনাবাহিনীর যোগসাজস রয়েছে বলে স্থানীয় জনগণের অভিমত।

সূত্র আরও জানায়, অপহৃত হওয়ার আগে চেয়ারম্যান আদুমং মারমা রাজস্থলীতে তার ভাতা তুলতে যান এবং পরে সে ভাতাগুলো তার সহকারী ক্যশৈহ্লা মারমা (অবঃ পুলিশ সদস্য)-এর হাতে দেন। এরপর চেয়ারম্যানের সাথে পরিবারের লোকজনের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরে গত ২৯ আগস্ট, অপহৃত চেয়ারম্যান এর সহকারী ক্যাশৈহ্লা মারমা চেয়ারম্যানের ভাতাগুলো চেয়ারম্যানের স্ত্রীর হাতে দেন। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরেই সেনাবাহিনীর বাঙ্গালহালিয়া ক্যাম্পের ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ শাহীন চেয়ারম্যানের বাড়িতে গিয়ে চেয়ারম্যানের স্ত্রীর কাছ থেকে সেই ভাতাগুলো নিয়ে যান।

আরও উল্লেখ্য যে, গত ১ সেপ্টেম্বর, সকালের দিকে +৮৮০১৮৫৮০৩৯৬১৩-এই মোবাইল নাম্বার থেকে জেএসএস’এর লোক পরিচয় দিয়ে রাজস্থলী উপজেলার ৩ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির নিকট ফোন করে চাঁদা দাবি করা হয়। পরে ওই নাম্বার থেকে মগ পার্টির সন্ত্রাসীরাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জেএসএস’এর নাম ব্যবহার করে চাঁদা সংগ্রহ করছে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়।

এছাড়া, গত ২০ আগস্ট, চিংসু মারমা (৪০) ও মন্ডি মারমা (৩৫) নামে মগ পার্টির দুই চাঁদা সংগ্রাহক বাঙ্গালহালিয়া বাজারে গিয়ে আজিজ সওদাগর (৬৫) নামে এক দোকানদারকে মারধর করলে পরে উত্তেজিত জনতা চিংসু মারমা ও মন্ডি মারমাকে গণপিটুনি দিয়ে আহত করে।

উক্ত ঘটনায় সেনাবাহিনী মগ পার্টির দুই সদস্য চিংসু মারমা ও মন্ডি মারমাকে গ্রেপ্তার না করে উল্টো নিজেরাই একটি জীপ গাড়ির ব্যবস্থা করে চিকিৎসার জন্য চন্দ্রঘোনা মিশন হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।

More From Author

+ There are no comments

Add yours