হিল ভয়েস, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গতকাল (৩০ সেপ্টেম্বর), রবিবার, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় সম্প্রতি বাংলাদেশে একের পর এক সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় ও আদিবাসী জনগণের উপর ভয়ঙ্কর আক্রমণের প্রতিবাদে রাজ্যের বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজন ও বুদ্ধিজীবীদের অংশগ্রহণে এক মহমিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এই মহামিছিলের আয়োজন করে নবগঠিত একটি সংগঠন ‘ফোরাম ফর প্রোটেকশন অব মাইনোরিটিস ইন বাংলাদেশ’। জানা গেছে, যতদিন প্রতিবেশি দেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার চালানো হবে, এই সংগঠনও ততদিন তার আন্দোলন জারী রাখবে এবং সারাদেশে এই আন্দোলন ছড়িয়ে দেবে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মিছিলে রাজ্যের সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মী, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, শিল্পী, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, শিক্ষক, অধ্যাপক থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরের ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিবাদী মানুষ অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও গন্ডাছড়া, কাঞ্চনপুর,সাব্রুম, মোহনপুর, সীমানা সহ রাজ্যের অন্যান্য অংশ থেকেও শত শত মানুষ মহামিছিলে অংশ নিয়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনগণের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
রাজনৈতিক দলের বাইরে, কোনো রাজনৈতিক পতাকা ছাড়াই প্রতিবাদী মানুষের এতবড় মিছিল ইদানীংকালে আগরতলা শহরে দেখা যায়নি বলে প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক এই অরাজক পরিস্থিতিতে গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রতিবাদকারীরা। সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, বাংলাদেশে কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়া তথা শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সহ সমগ্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার নেমে এসেছে। বিশেষ করে বাংলোদেশে বসবাসকারী হিন্দু ও আদিবাসী জনগণের উপর ভয়ঙ্কর আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়েছে। খুন, ধর্ষণ, বাড়ি ঘরে আগুন, ভাঙচুর, জোর করে ধর্মান্তরকরণ, সম্পত্তি লুটপাট, মন্দির-উপসনাস্থল ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া, আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া, মারধর কিছুই বাদ যাচ্ছে না।
সংগঠনটির সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে এই সংগঠনের পক্ষ দুটো স্মারকলিপি তৈরি করা হয়েছে। একটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে প্রেরণ করা হবে এবং তার সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ দাবি করা হবে। অন্য স্মারকলিপিটি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে পাঠিয়ে উনাকে বলা হবে যে, অবিলম্বে সংখ্যালঘুদের উপর সবরকমের অত্যাচার বন্ধ করা না হলে এবং জঙ্গীদের সঙ্গে এই সরকারের যোগসাজস বন্ধ না হলে আরও তীব্র জনমত গঠন করা হবে এবং আন্দোলন সংগঠিত করা হবে।
মহামিছিলটি আগরতলা প্রেস ক্লাব সম্মুখ থেকে ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে শুরু হয়। এরপর দুর্গাবাজি, তলসীবতী স্কুল, কামান চৌমুহনি, প্যারাডাইস চৌমুহনি, আরএমএস চৌমুহনি হয়ে রবীন্দ্রভবনের সামনে এসে সমাপ্ত হয়।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি সারাদেশে একের পর এক সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা, মন্দিরে ভাঙচুর সহ ব্যাপক সহিংসতা এবং গত ১৯ সেপ্টেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও খাগড়াছড়ি সদরে এবং ২০ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটিতে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী কর্তৃক আদিবাসী জুম্মদের উপর হামলা, ৫ জনতে হত্যা, শতাধিক বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে এই মহামিছিলের আয়োজন করা হয়।