হিল ভয়েস, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ রোজ বুধবার, দুপুর ২.০০ টায় ফ্রান্সে বসবাসরত জুম্ম আদিবাসীদের সংগঠন La voix des Jumma (LVJ) ও European Jumma Indigenous Council (EJIC) এর যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট তুফান চাকমা’র ডিজাইনকৃত ব্যানারে, যার মূল শ্লোগান ‘বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী জুম্ম জনগণের প্রতি সহিংসতা ও হত্যার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধতা’ এবং ‘আমরা শান্তি, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র চাই, রক্তপাত নয়’ এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও তাদের মদদে সেটেলার বাঙালি কর্তৃক দশকের পর দশক চলা পাহাড়ি জুম্মদের উপর হত্যা, গুম, দমন-পীড়ন, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা, ভূমি বেদখল, ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদসহ অতি সম্প্রতি পাহাড়ে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর মদদে সেটেলার বাঙালি কর্তৃক ১৯-২০সেপ্টেম্বর ২০২৪ দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে নীরিহ ৪ জন জুম্ম আদিবাসীকে হত্যা, জুম্ম সম্প্রদায়ের উপর ন্যাংকারজনক হামলা, বৌদ্ধ মন্দির, ঘর-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, লুঠপাতের প্রতিবাদে বাংলাদেশ এ্যাম্বেসি, ফ্রান্সের সামনে এই শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
এতে ফ্রান্সে বসবাসরত সর্বস্তরের জুম্মরা প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন, লিফলেট, ব্যানার হাতে নিয়ে যে যেভাবে পারে দলে দলে যোগ দান করে সমাবেশটি একটি নতুন গণজোয়ারে রূপ দেয়। উল্লেখ্য, প্রতিবাদ সমাবেশটিকে ICRA ও Survival International নামক ফ্রান্সের স্বনামধন্য দুটি সংগঠন তাদের সমর্থন ও সংহতি জ্ঞাপন করেছেন।
অনুষ্ঠানটি শুরু করার প্রাক্কালে সম্প্রতি শহীদ হওয়া ধনঞ্জয় চাকমা, রুবেল ত্রিপুরা, জুনান চাকমা ও অনিক চাকমা’র স্মরণে সম্মিলিতভাবে ৩ মিনিট শোক নিরবতা পালন করা হয়। এরপর সমাবেশে উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন লা ভোয়া দে জুম্ম সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি পার্থ দেওয়ান, পরে কবিতা আবৃত্তি ও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন নারী অধিকার কর্মী, সাহিত্যিক এবং শিক্ষক স্মরনিকা চাকমা।
এরপর বক্তব্য রাখেন সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সন্তোষ বিকাশ চাকমা, মানবাধিকার কর্মী মেকসুয়েল চাকমা, ইউরোপিয়ান জুম্ম ইন্ডিজেনাস কাউন্সিল এর সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধার্থ তঞ্চঙ্গ্যা, ভাইস প্রেসিডেন্ট মানবেন্দ্র চাকমা, সাবেক সহ সভাপতি লালন চাকমা, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তরুণ কান্তি চাকমা, সাবেক সভাপতি সুদর্শন চাকমা, রিগ্যান দেওয়ান, উহ্লাচিং মারমা প্রমুখ এবং সর্বশেষ বক্তব্য প্রদান করেন লা ভোয়া দে জুম্ম সংগঠনের প্রেসিডেন্ট রেমি চাকমা।
উক্ত সমাবেশটিতে সভাপতিত্ব করেন রেমি চাকমা ও সার্বিক সহযোগিতার দায়িত্বে ছিলেন শোভন তঞ্চঙ্গ্যা এবং সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সন্তোষ বিকাশ চাকমা ও মেকসুয়েল চাকমা। আর পুরো অনুষ্ঠানটি ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করেন জনপ্রিয় ও সুপরিচিত জুম্ম ব্লগার রোমান চাকমা।
বক্তাদের পক্ষ থেকে অবিলম্বে পাহাড়ে সকল আদিবাসী হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ বিচার ও সেটেলার কর্তৃক আক্রমণের ফলে যারা ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন তাদের দ্রুত সরকারিভাবে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তার দাবি জানানোসহ জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিকট নিরপেক্ষ তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানানো হয়।
বক্তাগণ পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র চান, কোনোরকম মানবাধিকার লংঘন চান না এবং তারা পাহাড়ে কোনো ধরনের সেনাশাসন ও অবৈধ সেটেলমেন্ট চান না বলে জানান। তারা বলেন, আমরা চাই দেশের মহান সংবিধানে আমাদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সম্পৃক্ত রাখতে; যেন পাহাড়ে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার সমুন্নত হয়।
বক্তারা আরো বলেন যে, তারা পহাড়ে কোনো প্রকার বৈষম্য ভেদাভেদ চান না, নারী-পুরুষ, শিশু, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে মিলে-মিশে দেশটাতে যেন একটা সৌহার্দপূর্ণ অবস্থান সৃষ্টি হয় সেটা তারা চান। সর্বোপরি তারা বাংলাদেশ সরকারের নিকট পাহাড়িদের ভূমির অধিকার নিশ্চিত করে অতি দ্রুত পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন চান এবং পাহাড়ে জুম্মদের নিকট সকল ভেদাভেদ ভূলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া উদাত্ত আহ্বান জানান।
এছাড়া ফ্রান্সে বসবাসরত আদিবাসী জুম্ম প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে অতিসাম্প্রতিক পাহাড়ে হত্যা, আক্রমণ, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও সর্বোপরি চরমভাবে মানবাধিকার লংঘনের প্রতিবাদে মিসেস সমাপ্তি চাকমা, রেমি চাকমা ও পার্থ দেওয়ান সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশ এ্যাম্বেসি, ফ্রান্স এম্বাসেডর প্রতিনিধির নিকট দেখা করে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।