হিল ভয়েস, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সম্প্রতি বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলায় সেনাবাহিনী ও সেনা সহায়তায় মুসলিম বাঙালি কর্তৃক জুম্ম আদিবাসীদের উপর হামলা, হত্যা ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ব্যাপক বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বরাবরে স্মারকলিপি প্রেরণ করা হয়েছে।
আজ (২১ সেপ্টেম্বর) সকালের দিকে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাদের মধ্যে ত্রিপুরা ভিক্ষু সংঘ অভয়নগরস্থ বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের কার্যালয়ের সম্মুখে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে, তারপর আস্তাবল এলাকার স্বামী বিবেকানন্দ স্টেডিয়ামে গিয়ে জমায়েতে অংশ নেয়। সেখানে আগে থেকে আরও বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী ও আদিবাসী নারী-পুরুষরা জমায়েত হতে থাকেন।
পরে বিক্ষোভকারীরা স্বামী বিবেকানন্দ ময়দান থেকে বিভিন্ন শ্লোগান ও দাবি-দাওয়া সম্বলিত ব্যানার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে একটি মিছিল বের করে এবং আগরতলার প্রধান প্রধান সড়কসমূহ প্রদক্ষিণ করে।
আজ বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী সংগঠনসমূহ হল ত্রিপুরা চাকমা স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন (টিসিএসএ), ত্রিপুরা গাবুজ্যা জধা, ত্রিপুরা ভিক্ষু সংঘ, ত্রিপুরা চাকমা মিলে জধা, ত্রিপুরা রেজ্য পরিষদ, ত্রিপুরা ইন্ডিজেনাস স্টুডেন্টস ফেডারেশন (টিআএসএফ), মগ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন, ইয়থ তিপ্রা ফেডারেশন (ওয়াইটিএফ)।
বিক্ষোভকারীরা খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে আদিবাসীদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলাকে ‘বর্বরোচিত হামলা’ বলে উল্লেখ করেন। তারা হামলা ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং আদিবাসীদের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তার দাবি জানান।
মিছিলে পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী ও সংখ্যালঘু হিন্দু ধর্মাবলাম্বীদের উপর নির্যাতন ও জুলুম অতিসত্বর বন্ধ করা, খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটিতে সাম্প্রদায়িক হামলা ও হত্যার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের ব্যবস্থা করা, পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ বাংলাদেশের যেসব জায়গায় বৌদ্ধ বিহার এবং হিন্দু মন্দির পুড়িয়ে দেওয়া ও ভাংচুর করা হয়েছে, সেসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সরকার দ্বারা পুনঃনির্মাণ করে দেওয়া, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সকল অবৈধ সেটেলার মুসলিমদের অতিদ্রুত প্রত্যাহার করার দাবি জানানো হয়।
রাজ্যের ধলাই জেলা, গোমতী জেলা, দক্ষিণ জেলা, পশ্চিম জেলা, উনকোটি ও উত্তর জেলা সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আদিবাসী জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই মিছিল ও জমায়েতে অংশগ্রহণ করেন বলে উদ্যোক্তাদের সূত্র জানায়।
এছাড়াও, ইয়থ তিপ্রা ফেডারেশন, সংগঠনের সভাপতি সুরজ দেববর্মা স্বাক্ষরিত একটি জরুরি চিঠি বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনের সহকারী হাই কমিশনারের নিকট পেশ করেন। চিঠিতে বাংলাদেশের আদিবাসী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার আবেদন জানানো হয়।
অপরদিকে, ত্রিপুরা রেজ্য চাকমা গাবুচ্ছে জধা এর পক্ষ থেকে সংগঠনের সভাপতি রাজেশ চাকমা ও উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান সমীর চাকমা স্বাক্ষরিত ভারতের প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বরাবরে লিখিত স্মারকলিপিতেও উক্ত হামলার বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
সিওয়াইসিএ’র নিন্দা
এদিকে, মিজোরাম রাজ্যের চাকমা অটোনোমাস ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের কমলানগর থেকেও সেন্ট্রাল ইয়াং চাকমা এসোসিয়েশন (সিওয়াইসিএস) খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে আদিবাসী জুম্মদের উপর হামলার নিন্দা জানিয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের সভাপতি ড. জ্যোতি বিকাশ চাকমা বলেন, এসব অমানবিক হামলা কেবল সহিংসতার কাজ নয়, এগুলো আমাদের পরিচয় ও অস্তিত্বের উপর আক্রমণ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেখানে আমাদের ভাই-বোনদের লক্ষ্য করে সুপরিকল্পিতভাবে খুন করা হচ্ছে সেখানে আমরা চুপ থাকতে পারি না। এই ধরনের নিপীড়ন বন্ধ করার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান।