হিল ভয়েস, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কাঁকড়াছড়া পুঞ্জিতে বসবাসকারী গারো ও খাসিয়া আদিবাসীদের চলাচলের রাস্তায় রেহানা চা-বাগান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আবারও বাধা প্রদানের অভিযোগ উঠেছে।
এর আগের বছর ২০২৩ সালের মার্চ মাসে ঠিক একইভাবে বাধা দেওয়া হয়েছিল পুঞ্জির আদিবাসীদের। সম্প্রতি আবারও বাগানে নিয়োগকৃত পাহারাদাররা পুঞ্জির লোকদের চলাচলে বাধা দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নে কাঁকড়াছড়া পুঞ্জি অবস্থিত। স্থানীয়দের মতে এই পুঞ্জির গোড়াপত্তন ব্রিটিশ আমলের। ১৯৫০ সালে পাকিস্তান আমলে করা স্টেট একুইজিশন সার্ভের খতিয়ানেও এ কথার উল্লেখ রয়েছে। তখন পুঞ্জিতে অর্ধশতাধিক আদিবাসী পরিবার ছিল। পরবর্তী পাকিস্তান আমলেই উক্ত পুঞ্জির ঘেঁষে গড়ে উঠতে থাকে চা বাগান। এই রেহানা চা-বাগান তার মধ্যে একটি।
এদিকে চা বাগানগুলোর ক্রমাগত সম্প্রসারণের ফলে খাসি ও গারো আদিবাসীরা ক্রমাগত তাদের জমি হারাচ্ছেন এবং বাস্তুভূমি থেকে উচ্ছেদ হচ্ছেন। ফলে জমি হারাতে হারাতে কাঁকড়াছড়া পুঞ্জির অর্ধশত পরিবারের মধ্যে বর্তমানে এখন টিকে আছে মাত্র ২১ টি পরিবার। গত বছরের মার্চ মাসে পুঞ্জির আদিবাসীরা তাদের চলাচলের সুবিধার্থে কাঁচা রাস্তাটি সংস্কার করে। কিন্তু বাগানের লোকজন ওই রাস্তার মধ্যে ‘বড় বড় গর্ত খনন করে’ রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা চালায় চা বাগান কর্তৃপক্ষ। এমনকি উক্ত রাস্তায় নতুন ‘চা চারা’ রোপন করে। এতে এক পর্যায়ে উত্তেজনা দেখা দিলে দুই পক্ষের লোকজন দেশি অস্ত্র নিয়ে জড়ো হতে থাকে।
পরবর্তীতে তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেহেদী হাসান সরেজমিনে পুঞ্জি ও বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠক করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখতে দুই পক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এর পর থেকে পুঞ্জির আদিবাসীরা ওই রাস্তা দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করছিল। কিন্তু সম্প্রতি আবারও বাগানের পক্ষ থেকে ওই রাস্তায় চলাচল করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
পুঞ্জির হেডম্যান জনপল চিশিম বলেন, ‘গত বছরও ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে বাধা দেওয়া হয়েছিল।পরবর্তীতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের পর নিয়মিত যাতায়াত করি। বাগান কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়, বাগানের অভ্যন্তরে কারখানার পাশের রাস্তা দিয়ে যেন আমরা চলাচল করি। বাগানের ভেতরে কয়েকটি ফটক রয়েছে। অনেক সময় রাতে অসুস্থ রোগী নিয়ে সেই ফটক অতিক্রম করে যেতে হলে আমাদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়।’
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে চলাচলের রাস্তা উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়ে পুঞ্জির বাসিন্দা মিল্টন রকো বলেন, ‘২৬ আগস্ট থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাগানের পাহারাদার কাদির মিয়া, মানিক মিয়া, সহিত আলী, আলিম, সাজিদ আমাদের চলাচলে বাধা দেন। পুঞ্জির ১০২ বছরের বৃদ্ধাসহ অসুস্থ রোগীরা হাসপাতালে যেতে পারছে না। পুঞ্জির প্রায় ১৫-২০ জন শিক্ষার্থীও এই রাস্তা দিয়ে চলাচলে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।’
রেহানা চা-বাগান ব্যবস্থাপক এ কে আজাদ বলেন, ১৪ নম্বর সেকশনের রাস্তাটি বাগানের নিজস্ব রাস্তা। ওই রাস্তা দিয়ে শুধু বাগানের শ্রমিকরা চা পাতা সংগ্রহ করে। পুঞ্জির লোকজনকে আগেই বলা হয়েছে, তারা আগে যেভাবে বাগানের কারখানার পেছনের রাস্তা ব্যবহার করে আসছিল এখন যেন সেই রাস্তা ব্যবহার করে। বাগানের পক্ষ থেকে ওই রাস্তাটি মেরামতও করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সেটি না করে ১৪ নম্বর সেকশনের রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে। তা ছাড়া চা-গাছের অনেক চারাও তারা নষ্ট করেছে। তাই আমরা সেখানে চা গাছের নতুন চারা লাগিয়েছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, বাধা প্রদানের বিষয়টি শুনেছি। সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছি। দুই পক্ষকে নিয়ে বসে সমস্যার সমাধান করা হবে।
+ There are no comments
Add yours