হিল ভয়েস, ৬ আগস্ট ২০২৪, বিশেষ প্রতিবেদক: বর্তমানে সারা দেশে ও পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজ করছে অস্থিতিশীল ও অনিশ্চিত এক পরিস্থিতি। এহেন এক পরিস্থিতিতেই চুক্তিবিরোধী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্দোলনের নামে অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে রাঙ্গামাটি শহরে এসে উস্কানিমূলকভাবে মিছিলের আয়োজন করে। এলাকায় স্থিতিশীলতার স্বার্থে পার্বত্য চুক্তির পক্ষের পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির নেতা-কর্মীরা ইউপিডিএফের কর্মীদের বিরত করতে চাইলে তারা চুক্তির পক্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের উপর হামলা চালায়।
আজ (৬ আগস্ট) বিকাল ২টা থেকে ৩টার মধ্যে রাঙ্গামাটি শহরের পৃথক দুটি স্থানে এই হামলার ঘটনা ঘটে। সেনাবাহিনীর সামনে থেকেই ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা পিস্তল দিয়ে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে।
ইউপিডিএফের হামলায় চুক্তির পক্ষের অন্তত ১৮ জন ছাত্র-ছাত্রী আহত হয় বলে খবর পাওয়া যায়। আহত ৯ জন রাঙ্গামাটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে জানা যায়।
হামলার পর ইউপিডিএফের অপর একটি দল ভেদভেদি এলাকা থেকে রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের ছাত্রী ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙ্গামাটি জেলা শাখার দুই নেত্রীকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যায় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
অপহরণের শিকার দুই নেত্রী হলেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুষ্টি চাকমা এবং তথ্য ও প্রচার সম্পাদক কাঞ্চন মালা চাকমা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আজ হঠাৎ বিকাল ২:০০ টার দিকে প্রায় একই সময়ে ইউপিডিএফের কর্মীরা পিস্তল, কান্তা-গুলি ও লাঠিসোটা নিয়ে দুই দলে বিভক্ত হয়ে রাঙ্গামাটি শহরে প্রবেশ করে। একটি দল মানিকছড়ি এলাকা থেকে টিভি ভবন হয়ে ভেদভেদি এলাকায় চলে আসে। অপর একটি দল নানিয়ারচর-কুতুকছড়ি এলাকা থেকে ১৫ এর অধিক ট্রলারযোগে রাজবাড়িস্থ শিল্পকলা একাডেমি ঘাটে অবতরণ করে শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে জমায়েত হতে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এসময় টিভি ভবন এলাকায় অবস্থান করা এলাকাবাসী এবং চুক্তির পক্ষের পিসিপি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের একটি দলের উপর হামলা চালায় ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা। এতে উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হয় বলে জানা যায়। একপর্যায়ে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে সেখান থেকে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দুই নেত্রী সুষ্টি চাকমা ও কাঞ্চনা চাকমাকে অপহরণ করে কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া এলাকার দিকে নিয়ে যায় বলে জানা যায়।
অপরদিকে প্রায় একই সময়ে রাজবাড়ির শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে জড়ো হওয়া ইউপিডিএফের অপর দলটি মিছিল করতে চাইলে সেনাবাহিনী তাদেরকে বাধা প্রদান করে। এক পর্যায়ে কিছু দূরে অবস্থান করা চুক্তির পক্ষের পিসিপি, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও যুব সমিতির কর্মীদের উপর হামলা চালায় ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা। বিশেষ করে রাজবাড়ির স’মিল এলাকায় উভয়পক্ষের মধ্যে কিছুক্ষণ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে সেনাবাহিনী এসে উভয়পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এরপর ইউপিডিএফের দলটি তরিঘরি করে তাদের আনা ১৫টির অধিক ট্রলার বোটে উঠে এবং কিছুক্ষণ হ্রদ এলাকায় ভাসমান অবস্থায় থেকে রাজদ্বীপ এলাকা হয়ে নানিয়ারচরের দিকে ফিরে। যাওয়ার সময় তারা কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে বলেও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়। এর অতি সন্নিকটে রাঙ্গামাটি সেনা ব্রিগেড থাকলেও সেনাবাহিনী সশস্ত্র ইউপিডিএফ সদস্যদের আটকের চেষ্টা করেনি।
জানা গেছে, ভেদভেদি এলাকায় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হলে ইউপিডিএফের দলে আসা বেশ কয়েকজন সাধারণ গ্রামবাসী আটকা পড়ে যায়। এসময় ভেদভেদি এলাকাবাসী তাদেরকে কেন ইউপিডিএফের মিছিলে এসেছেন বলে জিজ্ঞেস করলে গ্রামবাসীরা জানান, ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা তাদেরকে জোর করে আসতে বাধ্য করে। প্রায় ক্ষেত্রেই ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা তাদেরকে বাধ্য করে। গ্রামবাসীরা জানান, ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা এই হুমকি দেয় যে, যদি তারা তাদের মিছিল-সমাবেশে যোগ না দেয় তাহলে প্রত্যেককে ৫০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে এবং বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে।
এছাড়া আরও জানা যায়, উক্ত ঘটনার পর মানিকছড়ি হয়ে রাঙ্গামাটি শহরে প্রবেশ করার সময় বেতারকেন্দ্র ও শিমুলতলী এলাকায় বেশ কয়েকজন সাধারণ জুম্ম ও সেটেলার বাঙালি হামলা ও মারধরের শিকার হয়। এতে তারা কয়েকজন আহতও হয় বলে জানা যায়। কিন্তু তারা ঘটনার ব্যাপারে কিছুই জানত না বলে জানায়। আহতদের মধ্যে দুইজনকে মোনঘর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলে খবর পাওয়া যায়।
+ There are no comments
Add yours