হিল ভয়েস, ২৪ আগস্ট ২০২৪, ঢাকা: খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং রাঙ্গামাটিতে দ্বিতীয় শ্রেণির এক বালিকাকে ধর্ষণের চেষ্টায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে আজ (২৪ আগস্ট) রাজধানীর শাহবাগে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) উদ্যোগে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়।
অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যার সঞ্চালনায় উক্ত মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন পিসিপির ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাগাছাসের (বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংসদ) ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জনজেত্রা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন শুভ, সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের প্রতিনিধি অন্তু রায় ও সুকান্ত বর্মণ। এছাড়াও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি পাহাড়ী শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সৈসানু মারমা তার বক্তব্যে ২২ ও ২৩ আগস্টে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে ঘটা ধর্ষণের তীব্র নিন্দা জানান ও অভিযুক্তদের দ্রুত বিচারের দাবি জানান। পার্বত্য জেলাগুলো বাংলাদেশের বিচ্ছিন্ন কি না এই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, যদি পার্বত্য জেলাগুলো বাংলাদেশের অংশ হতো তাহলে সেখানে পাহাড়ীরা সমতলের বাসিন্দাদের মত সুযোগ সুবিধা পেত। তিনি আরও বলেন, “জুম্ম তরুণরা জেগে উঠেছে। তারা তাদের দাবি আদায়ে রাজপথে নেমে এসেছে। ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বরে করা পার্বত্য শান্তিচুক্তি যথাযথ বাস্তবায়িত হলে পাহাড়ীরা অধিকার ফিরে পাবে”। বক্তব্যের শেষে তিনি খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে ঘটা ধর্ষণের অভিযুক্তদেও গ্রেপ্তার করার দাবি জানান।
সৈসানু মারমার মত ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অভিযুক্তদের প্রচলিত আইনে শাস্তির দাবি করে বাগাছাসের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জনজেত্রা বলেন, “বন্যাকবলিত এলাকায় ধর্ষণের ঘটনা খুবই দুঃখজনক ও হতাশার”। এ ব্যাপারে তিনি আইন উপদেষ্টার অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন যাতে ধর্ষকদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়। ৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্বাধীনতা লাভ করেছে বলা হলেও আদিবাসীরা এখনো পরাধীন বলে মনে করেন জনজেত্রা।
সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের প্রতিনিধি অন্তু রায় ও সুকান্ত বর্মণ আজকের প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিলে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
অন্তু রায় বলেন, হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা, লুটপাট করা হচ্ছে। এমনকি ধর্ষনের মত ঘটনাও ঘটছে বলে জানান তিনি। তিনি এমন একটি সরকারের দাবি করেন যে সরকারে ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সমান সুযোগ সুবিধা পাবে। অন্তু রায় আরো যোগ করেন, “সমতল থেকে রাঙ্গামাটিতে যারা ঘুরতে যায়, তারা কাপ্তাই লেকের সৌন্দর্য থেকে মোহিত হয়ে যায়। কিন্তু আমরা জানি না যে সেখানে (কাপ্তাই লেকে) কত পাহাড়ী ভাই বোনদের চোখের জল মিশে আছে”। দেশের এই ক্রান্তিকালেও পাহাড়ে ধর্ষণের ঘটনায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের আরেক প্রতিনিধি সুকান্ত রায় গণমাধ্যমের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “সরকার কোচ, রাজবংশীর মত আদিবাসীদেরকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে না। তাদেরকে বাঙালি বলে দাবি করছে সরকার”। সমতল থেকে পাহাড়ে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ ও বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।
প্রতিবাদসভায় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন শুভ পাহাড়ে ঘটে যাওয়া ধর্ষণের এবং ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় পিসিপি আয়োজিত প্রতিবাদ মিছিলের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “দেশের এই দুর্ভোগের মধ্যে আজকে আমাদের আদিবাসী বোনদের ধর্ষণ করা হচ্ছে এবং তার প্রতিবাদে আমাদেরকে রাজপথে নামতে হচ্ছে, এমন স্বাধীনতাই কি আমরা চেয়েছি? অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের পথে হেঁটে পাহাড়ীদের দমন পীড়ন না করার আহবান জানান”। বাহাউদ্দিন শুভ সমান ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের আশা করেন। এছাড়াও তিনি পাহাড়ী তথা আদিবাসীদেরকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, পাহাড় থেকে সেনাশাসন হটানো, রিসোর্টের নামে আদিবাসীদের জায়গা দখল বন্ধের দাবি তুলেন। পাহাড় এবং সমতলে সম্মিলিতভাবে সকল অন্যায় ও অবিচারকে প্রতিহত করা হবে বলেও জানান বাহাউদ্দিন শুভ।
অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা পার্বত্য দুই জেলায় সংঘটিত ধর্ষণের সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, “পাহাড়ে অঘোষিত সেনাশাসন চলা সত্ত্বেও সেখানে ধর্ষণের ঘটনা কেন ঘটছে? বিচারহীনতার অপসংস্কৃতির কারণে বার বার ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে।” পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই বলে মনে করেন জগদীশ চাকমা। এছাড়াও তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে পার্বত্য শান্তিচুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করেন। তিনি আরও বলেন, “ফ্যাসিবাদি সরকার পতনের পর আদিবাসীরা নতুন আশা বুকে নিয়ে বসে আছে। তারা আশা করছে পাহাড়ে সেনাশাসন অবসান ঘটানোর জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করবে। বেদখল হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধারের জন্য ভূমি কমিশন অতিসত্বর কার্যকর করা হবে”। এছাড়াও তিনি ২৮ বছর আগে সেনাবাহিনী কর্তৃক অপহৃত হওয়া কল্পনা চাকমার খোঁজ চান। পরিশেষে তিনি প্রতিবাদ সমাবেশে সংহতি জানানোর জন্য সমাবেশে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে কর্মসূচীর ইতি টানেন।
+ There are no comments
Add yours