হিল ভয়েস, ২০ আগস্ট ২০২৪, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলাধীন বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের বাঙ্গালহালিয়া বাজারে স্থানীয় বাঙালি-পাহাড়ি বিক্ষুব্ধ জনতার গণপিটুনিতে সেনামদদপুষ্ট সন্ত্রাসী সংগঠন মগ পার্টির দুই সদস্য গুরুতর আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া, বাজারের পাশর্^বর্তী সন্ত্রাসীদের আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত বাড়িটিতে উত্তেজিত জনতা অগ্নিসংযোগ করেছে বলে জানা গেছে।
আজ (২০ আগস্ট) সকাল আনুমানিক ৮:৩০টা-৯:৩০টার দিকে এই ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।
গণপিটুনিতে আহত মগ পার্টির দুই সদস্যের নাম চিংসু মারমা (৪০) ও মন্ডি মারমা (৩৫)। তারা উভয়েই মগ পার্টির কালেক্টর (চাঁদা সংগ্রাহক) ও সশস্ত্র সদস্য বলে জানা গেছে।
সেনাবাহিনীর সহায়তায় বর্তমানে আহত মগ পার্টির সদস্যরা চন্দ্রঘোনা মিশন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ সকাল আনুমানিক ৮:৩০ টার দিকে মগ পার্টির উক্ত দুই চাঁদা সংগ্রাহক বাঙ্গালহালিয়া বাজারে গিয়ে আজিজ সওদাগর (৬৫) নামে এক দোকানদারের সাথে চাঁদা সংগ্রহ নিয়ে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে মগ পার্টির সদস্যরা আজিজ সওদাগরকে বেদম মারধর করে।
এর পরপরই ঘটনাটি জানাজানি হলে, বাজারের অন্যান্য দোকানদারসহ স্থানীয় বাঙালি-পাহাড়ি জনতা সংগঠিত ও উত্তেজিত হয়ে বাঙ্গালহালিয়া বাজার সেনা ক্যাম্পে গিয়ে ক্যাম্প কর্তৃপক্ষের নিকট উক্ত মারধরের ঘটনার বিচার চায়। কিন্তু সেনা ক্যাম্প কর্তৃপক্ষের কাছে সন্তোষজনক কোনো জবাব ও সমাধান না পেলে, ক্ষুব্ধ জনতা বাজারে ফিরে আসে। এক পর্যায়ে বাজারেই মগ পার্টির উক্ত দুই সন্ত্রাসীকে দেখতে পেয়ে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে উত্তেজিত জনতা।
এসময় তাদের আশেপাশে কয়েকজন সেনা সদস্যকেও দেখতে পাওয়া যায়। সেনা সদস্যদের সামনেই উত্তেজিত জনতা মগ পার্টির দুই সদস্যকে লাঠিসোটা ও কিলঘুষি দিয়ে মারধর করে। এতে দুই সন্ত্রাসী গুরুতরভাবে আহত হয়।
এসময় জনগণের চাপে সেনা সদস্যরা দুই দিনের মধ্যে বাঙ্গালহালিয়া থেকে মগ পার্টির সদস্যদের সরিয়ে নিয়ে যাবে বলে অঙ্গীকার করে। পরে কাপ্তাই সেনা জোনের কমান্ডার সেখানে উপস্থিত হয়ে তিনিও দুই দিনের মধ্যে মগ পার্টির সদস্যদের বাঙ্গালহালিয়া বাজার এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাবেন বলে অঙ্গীকার করেন।
এরপর সেনা সদস্যরা নিজেরাই একটি জীপ গাড়ির ব্যবস্থা করে মগ পার্টির আহত দুই সদস্যকে চিকিৎসার জন্য চন্দ্রঘোনা মিশন হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
এদিকে ক্ষুব্ধ জনতা সেখানেই থেমে থাকেননি। তারা আবার সংগঠিত হয়ে বাঙ্গালহালিয়া বাজার সংলগ্ন মগ পার্টির আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত সেমি-পাকা ও টিনের চালা বাড়িতে গিয়ে বাড়িটিতে অগ্নিসংযোগ করে। এসময় ৭/৮ জন মগ পার্টির সদস্যকে সশস্ত্র অবস্থায় দেখা গেলেও, কয়েক হাজার জনগণের সমাবেশ দেখে সন্ত্রাসীরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
এরপর মগ পার্টির এই গ্রুপটি তাদের বাঙ্গালহালিয়ার আস্তানা ছেড়ে পার্শ্ববর্তী গাইন্দ্যা ইউনিয়নের পোয়াইতু পাড়ার মূল আস্তানার দিকে চলে যায় বলে জানা যায়।
জানা গেছে, রাজস্থলী উপজেলা সদরে সেনা ক্যাম্প, থানার পাশে বাস স্টেশনে মগ পার্টির একটি চাঁদা সংগ্রহ পোস্ট রয়েছে, সেখান থেকে তারা প্রকাশ্যে চাঁদা সংগ্রহ করে থাকে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ইতিপূর্বে রাজস্থলী উপজেলায় মগ পার্টি সন্ত্রাসীরা দুটি দলে দুটি আস্তানায় অবস্থান করে সেখান থেকে যাবতীয় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছিল।
এদের একটি আস্তানা হচ্ছে বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের বাঙ্গালহালিয়া বাজারের পেছনে নাইক্যছড়া সড়কের পাশে ললিত তঞ্চঙ্গ্যা নামে এক গ্রামবাসীর সেমিপাকা বাড়িতে। ঐ বাড়িটি তারা ইতিপূর্বে বাড়ির মালিকের কাছ থেকে জোর করে দখল করে এবং বাড়ির মালিককে বাড়িছাড়া করে। এপর্যন্ত তারা বাড়ির মালিককে কোনো বাড়ি-ভাড়া দেয়নি বলে জানা গেছে। সন্ত্রাসীদের এই আস্তানাটি বাঙ্গালহালিয়া বাজার সেনা ক্যাম্পের মাত্র ২ শত গজের মধ্যে অবস্থিত। আজই উত্তেজিত ঐ আস্তানাটি অগ্নিসংযোগ করে। এসময় সন্ত্রাসীদের তিনটি মোটর সাইকেলও পুড়ে যায় বলে জানা যায়।
মগ পার্টির মূল ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত অপর আস্তানাটি গাইন্দ্যা ইউনিয়নের পোয়াইতু পাড়ায় অবস্থিত বলে জানা গেছে।
দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে, সেনাবাহিনী, সাবেক পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর, কোনো কোনো সময় আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি দীপংকর তালুকদারের মদদে ও আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এই মগ পার্টি খ্যাত তথাকথিত মারমা ন্যাশনালিস্ট পার্টি (এমএনপি) এর সন্ত্রাসীরা রাজস্থলী এলাকায় অবস্থান করে জনসংহতি সমিতি ও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের খুন, অপহরণ সহ চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে।
+ There are no comments
Add yours