হিল ভয়েস, ১৮ আগস্ট ২০২৪, বিশেষ প্রতিবেদক: আজকেও (১৮ আগস্ট) তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন উপজেলায় জুম্ম ছাত্ররা পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তবতা ও বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরে গ্রাফীটি অংকনে অংশগ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে। কোনো কোনো উপজেলায় সেনাবাহিনী বা সেটেলার বাঙালিদের কর্তৃক বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির খবরও পাওয়া যায়।
আজকে রাঙ্গামাটি জেলার মধ্যে লংগদু ও বরকল উপজেলায় স্থানীয় ছাত্র-ছাত্রীরা স্ব স্ব উপজেলা সদর এলাকায় গ্রাফীটি অংকন করার খবর পাওয়া যায়। লংগদু উপজেলা সদরে গ্রাফীটি অংকনের সময় প্রথমদিকে লংগদু সেনা জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর সালমান ছাত্রদের অপহৃত কল্পনা চাকমার ছবি অংকন না করার অনুরোধ জানান। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীরা এর প্রতিবাদ জানালে মেজর সালমান বাধা প্রদান থেকে বিরত থাকেন। গ্রাফীটিতে ‘আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি চাই’, ‘আমি বাংলাদেশী, বাঙালি নয়, আমি আদিবাসী, উপজাতি নয়’, ‘কল্পনা চাকমা কোথায়?’, ‘পাহাড়ে উন্নত চিকিৎসা চাই’, ‘অবিলম্বে পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে’, ‘পাহাড়ে উন্নত চিকিৎসা চাই’, ‘১৯৮৯ এর লংগদু গণহত্যার বিচার চাই’ ইত্যাদি নানা দাবি ও বক্তব্য তুলে ধরে হয়। লংগদু সদর এলাকা ছাড়াও পাশর্^বর্তী কাট্টলী, ভাসন্যাদম, বগাচতর, গুলশাখালী, আটরকছড়া, করল্যাছড়ি, লংগদু বড়াদম, মহাজনপাড়া সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৩-৪ শত ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করেন বলে জানা যায়।
অপরদিকে গতকাল থেকে শুরু করে আজকেও বরকল উপজেলা সদরে জুম্ম ছাত্র-ছাত্রীরা প্রাফীটি অংকনে অংশগ্রহণ করে। তাদের গ্রাফীটিতে ‘পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন কর’, ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব’, ‘আমার ভূমি আমার মা, কেড়ে নিতে দেব না’, ‘কল্পনা চাকমা কোথায়’ সহ বিভিন্ন দাবি ও শ্লোগান উঠে আসে। একইভাবে দ্বিতীয় দিনের মত আজকেও রাজস্থলী উপজেলার রাজস্থলী তাইতং পাড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন দেয়ালে সেখানকার জুম্ম ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন দাবি ও শ্লোগান সম্বলিত গ্রাফীটি অংকন করেন। এছাড়া জুরাছড়ি ও বিলাইছড়িতেও গ্রাফীটি অংকন করা হয় বলে জানা যায়।
এছাড়া রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার বড়ইছড়ি এলাকায় স্থানীয় জুম্ম ছাত্র-ছাত্রীরাও গ্রাফীটি অংকনে অংশগ্রহণ করেন বলে জানা যায়।
বান্দরবানের প্রত্যন্ত উপজেলা লামা সদরের মাতামুহুরি কলেজ সংলগ্ন এলাকায় সেখানকার মারমা সহ জুম্ম ছাত্র-ছাত্রীরা গ্রাফীটি অংকনে অংশগ্রহণ করে। তাদের গ্রাফীটিতে ‘কল্পনা চাকমা কোথায়?’, ‘আর নয় কালক্ষেপণ, এবার চাই চুক্তির বাস্তবায়ন’, ‘উপজাতি নয়, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নয়, আদিবাসী আমরা’, ‘উন্নয়নের নামে পাহাড় কাটা বন্ধ করুন’ প্রভৃতি শ্লোগান স্থান পায়। একইভাবে আলীকদম উপজেলার আলীকদম উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন দেয়ালেও অনুরূপ বিভিন্ন দাবিতে ছাত্র-ছাত্রীরা গ্রাফীটি অংকন করেন।
তবে বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে জুম্ম ছাত্র-ছাত্রীরা গ্রাফীটি অংকনের উদ্যোগ নিলে রুমা সেনা জোনের অধীন রুমা বাজার পাড়া সেনা ক্যাম্পের সেনা সদস্যরা প্রথমদিকে বাধা দেয় বলে জানা যায়। এক পর্যায়ে সেনা সদস্যরা গ্রাফীটি অংকন করতে চাইলে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সেনা ক্যাম্পের কমান্ডারের নিকট লিখিত দরখাস্ত পেশ করতে বাধ্য করে। এমনকি গ্রাফীটিতে কী কী বাক্য লেখা যাবে ও কী ছবি আঁকা যাবে তাও সেনাবাহিনী নির্ধারণ করে।
খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলায় গ্রাফীটি অংকনের সময় সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্য এবং সেটেলার বাঙালিদের একটি দল এসে ছাত্র-ছাত্রীদের বাধা প্রদান করে বলে জানা গেছে।
গানে গানে সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ
ছাত্রদের কর্তৃক গ্রাফীটি অংকনের পাশাপাশি, ইতিপূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে গ্রাফীটি অংকনে বাধা প্রদানের প্রতিবাদে আজ (১৮ আগস্ট) রাঙ্গামাটি শহরের জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণে রাঙ্গামাটির আদিবাসী সাংস্কৃতিক কর্মীদের আয়োজনে ‘গানে গানে হোক প্রতিবাদ’ শিরোনামে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট গীতিকার, সুরকার ও কন্ঠশিল্পী রনজিত দেওয়ান, পার্কি চাকমা, পনি চাকমা ও জোনাকি চাকমা সহ অন্যান্য শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন এবং নৃত্যশিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করেন। সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পাশাপাশি আয়োজকদের পক্ষ থেকে ‘আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে’, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ইনস্টিটিউট এর নাম আদিবাসী ইনস্টিটিউট করতে হবে’, ‘তুমি কে আমি কে, আদিবাসী আদিবাসী’, ‘পাহাড়ে কবে আলো ফুটবে?’ ইত্যাদি দাবি ও শ্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ডও প্রদর্শন করা হয়।