পার্বত্য জেলার বিভিন্ন স্থানে জুম্ম নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে পিসিপি ও এইচডাব্লিউএফের বিক্ষোভ

হিল ভয়েস, ২৪ আগস্ট ২০২৪, রাঙ্গামাটি: তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন স্থানে বিগত মাত্র দুইদিনে বহিরাগত সেটেলার বাঙালি কর্তৃক পরপর তিন জুম্ম নারী ও শিশুকে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডাব্লিউএফ) আজ (২৪ আগস্ট), শনিবার, রাঙ্গামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। পাশাপাশি একই কারণে খাগড়াছড়ি জেলা শহরেও জুম্ম ছাত্র-যুব সমাজ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।

আজ সকাল ১০ টার দিকে রাঙ্গামাটিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দক্ষিণ ফটকে পিসিপি ও এইচডাব্লিউএফের রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির উদ্যোগে খাগড়াছড়ির রামগড়ে এক জুম্ম নারীকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণকারী সেটেলারদের, রাঙ্গামাটির বনরূপায় দ্বিতীয় শ্রেণির এক জুম্ম ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টাকারী মোঃ হাবিবুর রহমান এবং বান্দরবানে নাইক্ষ্যংছড়িতে এক জুম্ম নারীকে ধর্ষণ চেষ্টাকারী মোঃ ফারুককে অতিদ্রুত গ্রেপ্তারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ সঞ্চালনা করেন পিসিপির জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন চাকমা ও সভাপতিত্ব করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির অর্থ সম্পাদক হিরা চাকমা। উক্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা, পিসিপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক অন্তর চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক উলিচিং মারমা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা বলেন, দেশের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিতে যেখানে মানুষ সর্বহারা উদ্বাস্তু, সে জায়গায় পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় তিনটি ধর্ষণের ঘটনা সত্যিই নিন্দনীয়। সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র -জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের পর বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদেরর প্রত্যাশা বৈষম্যহীন সুষ্ঠু রাষ্ট্রের।

এই যুব নেতা সুমিত্র চাকমা আরো বলেন, এই ধরনের ঘটনার থেকে প্রশ্ন জাগে পার্বত্য চট্টগ্রামে কি আবারও সাম্প্রদায়িক শক্তি জেগে উঠছে কিনা? যদি জেগে উঠে তাহলে এই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নির্মূল করতে হবে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য তরুণ জুম্ম ছাত্র-যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহবান জানান। সেই সাথে নবগঠিত সরকারের কাছে তিনটি সংঘটিত ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান।

পিসিপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ছাত্রনেতা অন্তত চাকমা বলেন, অতীতের ন্যায় বলতে হয় ধর্ষকদের সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় তারা প্রতিনিয়ত এহেন ঘটনা ঘটানোর সাহস পাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ রাষ্ট্রেরও অংশ। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূরীকরণে বিশেষ দৃষ্টি আরোপ করার দাবি জানান। এই অন্যায় ও ধর্ষকদের সুষ্ঠু বিচার করা না হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জাগ্রত ছাত্র সমাজ বসে থাকবে না বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক উলিচিং মারমা বলেন, দেশের একদিকে মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত, অন্যদিকে পাহাড়ে চলছে ধর্ষণের ঘটনা। ছাত্র-জনতার যে গণঅভ্যুত্থান তার মধ্য দিয়ে দেশে গণতান্ত্রিক বৈষম্যহীন যে রাষ্ট্র গঠন হওয়ার কথা তার সুফল পাহাড়বাসীরাও আশা করে। কিন্তু অল্প কদিনে পাহাড়ের মানুষ টের পেয়েছে। ঘটে যাওয়া তিনটি ঘটনা প্রমাণ করে, আজও জুম্ম নারীরা নিরাপদ নয়। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীর নিরাপত্তা এবং জনমানুষের নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানান।

সভাপতির বক্তব্যে হিরা চাকমা তিন জেলায় তিনটি সংঘটিত ধর্ষণ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি ও পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও পরবর্তী প্রতিবাদ সমাবেশ সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

উল্লেখ্য, গত ২২ আগস্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের তালতলী পাড়া এলাকায় ৭/৮ জন সেটেলার বাঙালি কর্তৃক এক চাকমা নারীকে (৪০) ধর্ষণ করার অভিযোগ পাওয়া যায়। সেখানে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করার খবর পাওয়া যায়নি। ভুক্তভোগী নারী ও তার মেয়ে ৮ জন সেটেলার বাঙালির মধ্যে ৩ জনকে চিনতে পেরেছেন বলে জানা গেছে। তারা হল- (১) মোঃ ইউসুফ (২২), পিতা-মোঃ ইসমাইল, (২) রানা ও (৩) মোশাররফ। তাদের সকলের বাড়ি পাতছড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের নাকাবা রসুলপুর এলাকার কুমিল্লা কলোনিতে বলে জানা গেছে।

এছাড়া, গতকাল ২৩ আগস্ট, আনুমানিক বিকাল ৪ টায় রাঙ্গামাটির শহরের ব্যস্ততম বাজার বনরূপা বাজারে মোঃ হাবিবুর রহমান (৫৫) নামে এক সেটেলার বাঙালি কর্তৃক দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া এক জুম্ম ছাত্রী (৭) ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। ধর্ষণের চেষ্টাকারী প্রথমে তার নাম রাইছ মিয়া বলে মিথ্যা পরিচয় দেয়। পরে থানায় সঠিক নাম বেরিয়ে আসে। ঐদিনই এলাকাবাসী মোঃ হাবিবুর রহমানকে ধরে পুলিশের নিকট হস্তান্তর করে।

অপরদিকে, গতকাল (২৩ আগস্ট), শুক্রবার, বিকাল আনুমানিক ৩ টার দিকে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিবাহিত এক তঞ্চঙ্গ্যা নারী (৪০) ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধর্ষণের চেষ্টাকারী বহিরাগত সেটেলার বাঙালিটির নাম মোঃ ফারুক (২৫), পীং-বশর উদ্দিন, গ্রাম-শিকদার বিল, রাজাপালং ইউনিয়ন, উখিয়া উপজেলা, কক্সবাজার জেলা।

More From Author

+ There are no comments

Add yours