হিল ভয়েস, ১৮ আগস্ট ২০২৪, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গতকাল (১৭ আগস্ট) ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর ত্রিপুরা জেলার কাঞ্চনপুরে চাকমা ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (সিএনসিআই)-এর উদ্যোগে দিনটিকে চাকমা জাতির জন্য একটি ‘ব্ল্যাক ডে’ (কালো দিবস) হিসেবে পালিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে ত্রিপুরার বিভিন্ন এলাকার চাকমা জনসমাজের বিভিন্ন স্তরের নারী-পুরুষরা অংশগ্রহণ করেন।
দিবসটি উপলক্ষে সংগঠনটির ত্রিপুরা রাজ্যের সভাপতি শোভারঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিএনসিআই’র সহ-সভাপতি অনিরুদ্ধ চাকমা, সংগঠনটির কাঞ্চনপুর শাখার নেতা ভূবন চাকমা, পূণ্যধন চাকমা, ছাত্র সংগঠন ‘ছাত্রজধা’ এর ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সভাপতি সুবল কুমার চাকমা প্রমুখ।
বক্তরা বলেন, এই দিবসটি সারা বিশ্বের চাকমাদের জন্য একটি কালো দিবস। কেননা, ভারতবর্ষ প্রায় দুই শত পরাধীন থাকার পর যখন স্বাধীনতা লাভ করে, তখন সাধারণ তত্ত্ব ছিলো সংখ্যাগরিষ্ট হিন্দুরা সহ বৌদ্ধ, শিখ, খ্রিস্টান ও অন্যান্যরা ভারতে অন্তভুক্ত হবে, আর মুসলিমদের গঠিত হবে পাকিস্তান রাষ্ট্র। কিন্তু আমরা দেখলাম, ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ সালে ভারত যখন স্বাধীনতা লাভ করে, তখনকার সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে (বর্তমানে বাংলাদেশে) আমরা ৯৮.৫% ভাগ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী আর হিন্দু ছিলাম, যার ফলে সেই সময়ে স্নেহকুমার চাকমার নেতৃত্বে রাঙ্গামাটিতে সদর দপ্তরে ভারতীয় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। আমরা ভেবেছিলাম যে চাকমা অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামও ভারতে অন্তর্ভুক্ত হবে। কিন্তু আমরা দেখলাম ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর, ১৭ আগস্ট আমরা দেখলাম, বেতারের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হলো, পার্বত্য চট্টগ্রামকে পূর্ব পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার ফলে, চাকমা জাতির সেখানে যারা আছে তাদের অবস্থা আজ বিপন্ন।
বক্তারা আরও বলেন, আর আমরা ভারতে যারা আছি, মিজোরামের ওয়েস্টার্ন বেল্ট-এ যে চাকমারা আছে তারাও আজ পরিচয়ের সংকটে রয়েছে, আর ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গে, আসামসহ উত্তর ভারতে পাঁচটি রাজ্যে যে চাকমারা আছে তারা আমরা এসটি (সিডিউল ট্রাইব) স্বীকৃতি পেয়েছি। কিন্তু তারপরও আমাদের চাকমাদেরকে তকমা দেওয়া হয়, চাকমারা রিফিউজি (শরণার্থী), চাকমারা ফরেনার (বিদেশি)। উত্তরপূর্ব ভারতের পাঁচটি রাজ্যে একমাত্র চাকমা জনজাতিরাই এসটি স্বীকৃত। এর জন্য দায়ী সেই ভারত বিভাজন। ভারত বিভাজনে কোনো জাতি যদি বিপন্ন হয়, সেই জাতি হচ্ছে চাকমা জাতি। আজকে তারা ভূমিহীন, গৃহহীন এবং অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার পথে। এইজন্য আমরা বলছি, পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতের সাথে জুড়ে দেওয়া হোক।
সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় ৯৮.৫% ভাগ অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে অন্যায়ভাবে পাকিস্তানকে উপহার দেওয়ার প্রতিবাদে সিএনসিআই-এর উদ্যোগে ২০১৬ সাল থেকে প্রতিবছর ১৭ আগস্ট দিনটিকে কালো দিবস বা ব্ল্যাক ডে হিসেবে পালন করা হচ্ছে।