ইউপিডিএফ (প্রসীত গ্রুপ) সন্ত্রাসী কর্তৃক অপহৃত দুই নেত্রী মুক্ত, তবে অপহৃতদের নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির নিন্দা জানিয়েছে এইচডাব্লিউএফ

হিল ভয়েস, ১১ আগস্ট ২০২৪, রাঙ্গামাটি: পার্বত্য চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ (প্রসীত গ্রুপ) সন্ত্রাসী কর্তৃক অপহৃত দুইজন নেত্রী মুক্ত হওয়ার খবর জানিয়ে এবং সন্ত্রাসীদের কর্তৃক দুই নেত্রীকে কাপুরুষোচিত নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডাব্লিউএফ)।

বিবৃতিতে অবিলম্বে এইসব গণবিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ ও প্রতিহত করার জন্য ছাত্র-যুব সমাজসহ সচেতন জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয় এবং পার্বত্য এলাকায় শান্তি ও পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নের স্বার্থে এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের নিকট দাবি জানানো হয়।

গতকাল (১০ আগস্ট) সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক চন্দ্রিকা চাকমা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় এই বিবৃতি দানের কথা জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, “গত ৬ আগস্ট ২০২৪ খ্রি: রাঙ্গামাটি জেলা সদরস্থ ভেদভেদীর টিভি কেন্দ্রের শিমুলতলী এলাকা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ (প্রসিত গ্রুপ) এর সন্ত্রাসী কর্তৃক হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডাব্লিউএফ), রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুষ্টি চাকমা এবং একই শাখার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক কাঞ্চনা চাকমাকে অস্ত্রের মুখে জীপ গাড়িতে করে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়।

ছাত্র-জনসাধারণ ও সুশীল সমাজের ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে ও চাপে পড়ে বাধ্য হয়ে অবশেষে অপহরণের দুইদিন পর গত ০৮ আগস্ট ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ কুতুকছড়ি এলাকা থেকে অপহৃত দুই নেত্রীকে ছেড়ে দেয় সন্ত্রাসীরা।

শিমুলতলী এলাকার প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসী ও অপহরণের শিকার হওয়া দুই নেত্রীর বক্তব্য মোতাবেক, শিমুলতলী এলাকাতে শুধু কাঞ্চনা চাকমাকেই ২০-৩০ জন ইউপিডিএফের পুরুষ সন্ত্রাসী জনসমক্ষে ইট, লাঠি, ধারালো অস্ত্র দিয়ে বেধড়ক আঘাত করে। এসময় সন্ত্রাসীরা পাশবিক কায়দায় ভুক্তভোগীর পেটে, পাছায়, বুকে পা দিয়ে আঘাত করে, এমনকি পরিধান করা কাপড় খুলে দিয়ে পিঠে আঘাত করে। পায়ে পড়েও সন্ত্রাসীদের বর্বর আক্রমণ হতে রক্ষা পায়নি কাঞ্চনমালা চাকমা। কাঞ্চনমালা চাকমাকে অজ্ঞান অবস্থায় গাড়িতে তুলে অস্ত্রের মুখে নিয়ে যায়।

সুষ্টি চাকমাকেও ১০-১২ জন শুধু পুরুষ ইউপিডিএফ সন্ত্রাসী উপর্যুপরি আঘাত করেছে। ইট, লাঠি, কাঠ দিয়ে মাথায়সহ পুরো শরীরে আঘাত করে। উভয়ের শরীরের স্পর্শকাতর অংশেও আঘাত করেছে তারা।

সন্ত্রাসীরা মারাত্মক জখম অবস্থায় অপহৃতদের মানিকছড়ি-ঘাগড়া পার হয়ে কাউখালীর গহীন অঞ্চলে নিয়ে যায়। অপহরণ ঘটনাটি দ্রুত জানাজানি ও ব্যাপক প্রতিবাদ হলে তারা সেখান থেকে কুতুকছড়িতে নিয়ে আসে এবং সেখানে অপহৃত উভয়কে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। এরপর গত ৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখ জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে কুতুকছড়ি এলাকা থেকে সংগঠনের কাছে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয় সন্ত্রাসীরা।

শুধু তাই নয়, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকসহ ৬ জন নারীকে বেদড়ক মারধর করে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীরা দুই নারীকে অপহরণ করতে সক্ষম হলেও বাকিরা কোনোরকম প্রাণ নিয়ে ফিরে আসেন।

ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দুই নেত্রীকে মুক্ত করে দিলেও দুইজন নারীর উপর যে বর্বর হামলা ও নিপীড়ন চালিয়েছে তা ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের জঘন্য পাশবিকতা, হিংস্রতা ও বর্বর মানসিকতারই বহি:প্রকাশ।

ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা রাঙ্গামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের বাসভবনে হামলা এবং লাশ ফেলানোর পূর্বপরিকল্পনা নিয়ে দেশীয় অস্ত্র, ইট, গুলতি, লাঠিসোটা নিয়ে অস্ত্রের মুখে ও জোরপূর্বক রাঙ্গামাটি জেলাস্থ কাউখালী, ঘাগড়া, কুতুকছড়ি, সাপছড়ি, নান্যাচর, বন্ধুকভাঙ্গা প্রভৃতি এলাকা থেকে কয়েক হাজার সাধারণ জনগণকে নিয়ে আসে। রাঙ্গামাটি শহরে স্থিতিশীলতা রক্ষা ও জুম্ম জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দুইটি টিম তাদেরকে স্ব স্ব এলাকায় ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানোর সাথে সাথে তাদের উপর উপর্যুপরি হামলা করা ঘটনাই প্রমাণ করে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের মূল লক্ষ্য কী ছিল।

১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইউপিডিএফ প্রতিষ্ঠার পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত অধিকারের সনদ ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করে দেয়ার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণকে জিম্মি করে দীর্ঘ দুইযুগের অধিক সময় ধরে চাঁদাবাজি, অপহরণ, গুম, খুনের মতো অপকর্ম প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাচ্ছে। হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দুই নেত্রীকে অপহরণ সেই অপকর্মের চলমান অংশ বলে হিল উইমেন্স ফেডারেশন মনে করে।

হিল উইমেন্স ফেডারেশন মনে করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনে তরুণ সমাজের অংশগ্রহণের জোয়ারকে স্তব্ধ করতেই ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা এ ধরনের ন্যাক্কারজনক হামলা চালায় এবং নারীদের উপর সহিংস আক্রমণের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটায়।

হিল উইমেন্স ফেডারেশন অবিলম্বে এইসব গণবিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ ও প্রতিহত করার জন্য ছাত্র-যুব সমাজসহ সচেতন জনগণকে আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছে এবং পার্বত্য এলাকায় শান্তি ও পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নের স্বার্থে এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের নিকট দাবি জানাচ্ছে।”

More From Author

+ There are no comments

Add yours