ইউপিডিএফ (প্রসীত গ্রুপ) কর্তৃক এইচডাব্লিউএফের দুই নেত্রী অপহরণে এইচডাব্লিউএফ ও পিসিপি’র নিন্দা ও মুক্তির দাবি

হিল ভয়েস, ৭ আগস্ট ২০২৪, রাঙ্গামাটি: আজ (৭ আগস্ট) পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ (প্রসীত গ্রুপ) এর সন্ত্রাসী কর্তৃক হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দুই নেত্রীকে অপহরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং দ্রুত নি:শর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে হিল ইউমেন্স ফেডারেশন (এইচডাব্লিউএফ) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।

পিসিপি’র তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অন্বেষ চাকমা স্বাক্ষরিত প্রেস বার্তায় প্রেরিত বিবৃতিটি নিম্নরূপ:

“গতকাল ৬ আগস্ট ২০২৪ খ্রি: রাঙ্গামাটি সদরস্থ ভেদভেদীর টিভি কেন্দ্র এলাকা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ (প্রসীত গ্রুপ) এর সন্ত্রাসী কর্তৃক হিল উইমেন্স ফেডারেশন, রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুষ্টি চাকমা এবং একই শাখার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক কাঞ্চনমালা চাকমাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এইচডাব্লিউএফের দুই নেত্রীকে অপরণের হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং দ্রুত নিশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছে।

গতকাল বিকাল আনুমানিক ২:০০ ঘটিকার সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ (প্রসীত গ্রুপ) রাঙ্গামাটি শহরে সহিংসতা ও নাশকতা সৃষ্টির অপচেষ্টার হীন উদ্দেশ্যেই পরিকল্পিতভাবে দেশীয় অস্ত্র, ইট, গুলতি, লাঠিসোটা নিয়ে মানিকছড়ি-রাঙ্গামাটি এবং রাজবাড়ি-শিল্পকলা একাডেমি এলাকা হয়ে দুইদিক থেকে প্রবেশ করে রাঙ্গামাটি শহরের জিমনেশিয়াম প্রাঙ্গণে কথিত গণসমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। এ উদ্দেশ্যে রাঙ্গামাটি জেলাস্থ কাউখালী, ঘাগড়া, কুতুকছড়ি, সাপছড়ি, নান্যাচর, বন্দুকভাঙ্গা প্রভৃতি এলাকা থেকে কয়েক হাজার সাধারণ জনগণকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ১০টির অধিক জীপ গাড়ি ও ১৫টির অধিক ট্রলার বোট নিয়ে রাঙ্গামাটি শহরে প্রবেশ করতে থাকে।

রাঙ্গামাটি শহরে স্থিতিশীলতা রক্ষা ও জুম্ম জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে পিসিপি ও এইচডব্লিউএফের দুইটি টিম তাদেরকে স্ব স্ব এলাকায় ফিরে যাওয়ায় আহ্বান জানায়। কিন্তু এ আহ্বান উপেক্ষা করে মানিকছড়ি থেকে সেনাবাহিনীর তিনটি গাড়ির সহযোগিতায় শহরে প্রবেশ করার সময় পিসিপি ও এইচডাব্লিউএফের দুইটি টিমের উপর জীপ ও ট্রলার থেকে অনবরতভাবে ইট-গুলতি নিক্ষেপ করতে থাকে এবং যানবাহন থেকে নেমে লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করতে থাকে। এ সময় অস্ত্রের মুখে এইচডব্লিউএফের দুই নেত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং অপরাপর কর্মীদের হামলা করলে যুব সমিতি, পিসিপি ও এইচডব্লিউএফের ২০ জনের অধিক নেতাকর্মী আহত হন এবং তারমধ্যে ১৭ জন কর্মী রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়।

১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইউপিডিএফ প্রতিষ্ঠার পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত দলিল পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করে দেয়ার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণকে জিম্মি করে দীর্ঘ দুইযুগের অধিক সময় ধরে অপহরণ, গুম, খুনের মতো অপকর্ম প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের অধিকারকামী সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপর এ পরিকল্পিত হামলা এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দুই নেত্রীকে অপহরণ করা হয়েছে বলে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন মনে করে।

পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন মনে করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণেই রাষ্ট্রের বিশেষ মহলের সহযোগিতায় চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ প্রসীতপন্থী সাম্প্রতিক সময়ে মাথাছাড়া দিয়ে উঠেছে এবং রাঙ্গামাটি শহর অস্থিতিশীল করার পায়তারা চালাচ্ছে। আমরা ইউপিডিএফের এ ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানাই ও সামগ্রিক স্বার্থে এ ধরনের অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে এবং ইউপিডিএফসহ সমগ্র জুম্ম জনগণকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে সামিল হতে আহ্বান জানাচ্ছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে সামগ্রিকভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অতিদ্রত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন আবারও দুই নেত্রীকে অতিদ্রুত নি:শর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছে।”

More From Author

+ There are no comments

Add yours