হিল ভয়েস, ১ জুলাই ২০২৪, বিশেষ প্রতিবেদক: ২০২৪ সালের জানুয়ারি হতে জুন মাস পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সেনা-মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ, সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠী, মুসলিম বাঙালি সেটেলার ও ভূমিদস্যুদের দ্বারা ১০৭টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে এবং এসব ঘটনায় কমপক্ষে ৫,০০০ বম নারী-পুরুষসহ ৫,৪৪৮ জন জুম্ম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়।
সোমবার (১লা জুলাই) পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)-এর সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক কর্তৃক স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর অর্ধ-বার্ষিক (জানুয়ারি-জুন ২০২৪) প্রতিবেদনের এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতি এমনিতর নাজুক হয়েছে বলে উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকার এগিয়ে আসেনি। ফলে পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয় এই অর্ধ-বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে।
নিম্নে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর অর্ধ-বার্ষিক (জানুয়ারি-জুন ২০২৪) প্রতিবেদনটি হুবহু দেয়া গেল-
পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর অর্ধ-বার্ষিক (জানুয়ারি-জুন ২০২৪) প্রতিবেদন
গত ৩০ এপ্রিল ২০২৪ জাতীয় সংসদ ভবনে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির ৯ম সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে যে, চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির পূর্ববর্তী সভাগুলোতে গৃহীত কোনো সিদ্ধান্তই বাস্তবায়নে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এভাবেই আজ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটিকে অথর্ব অবস্থায় রেখে চলেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, তৃতীয় পক্ষ ছাড়াই স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি হচ্ছে উভয়পক্ষের স্বীকৃত একমাত্র গ্রহণযোগ্য কর্তৃপক্ষ, যার সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ চুক্তি স্বাক্ষরকারী দুই পক্ষ বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বাস্তবায়ন করতে বাধ্য। অথচ সরকার সেই বাধ্যবাধকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে চলেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক ও বিস্ফোরণোন্মুখ। শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরকারী আওয়ামী লীগ সরকার একনাগাড়ে প্রায় ১৬ বছরের অধিক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অবাস্তবায়িত বিষয়গুলো বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেনি। বর্তমানে সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রেখেছে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পার্বত্য সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের পরিবর্তে সরকার বর্তমানে পূর্ববর্তী স্বৈরশাসকদের মতো ব্যাপক সামরিকায়ণ করে দমন-পীড়নের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের নীতি গ্রহণ করেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের ব্যর্থতা এবং অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার ষড়যন্ত্র ধামাচাপা দিয়ে পার্বত্যাঞ্চলের পরিস্থিতিকে অন্যত্র ধাবিত করার হীনউদ্দেশ্যে সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সন্নিকটস্থ অঞ্চল নিয়ে একটি খ্রীষ্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার কল্পকাহিনী জোরালোভাবে অপপ্রচার চলছে। সেই অপপ্রচারে প্রথমদিকে রাষ্ট্রীয় কিছু সামরিক-বেসামরিক মহল সামিল থাকলেও অতি সম্প্রতি সেটি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত গড়িয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক সংশোধন না করে, সাম্প্রতিক কালে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্ম জনগণের ঐতিহাসিক, ঐতিহ্যগত, প্রথাগত ও বিশেষ অধিকারের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধিকে মৃত আইন ঘোষণা করা কিংবা বাতিল বা অকার্যকর আইনে পরিণত করার জোর ষড়যন্ত্র চলছে। জুম্ম বিদ্বেষী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী কর্তৃক পূর্বের দুটি মামলার হাইকার্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে এই ষড়যন্ত্রমূলক রিভিউ পিটিশন দায়ের করলেও খোদ বর্তমান সরকারের এ্যাটর্নি জেনারেল ষড়যন্ত্রকারীদের পক্ষ নেওয়ায় সেই ষড়যন্ত্র এখন বিপদজনক পর্যায়ে উপনীত করা হয়েছে। রিভিউ পিটিশন অনুসারে ২৭টি দফা বিলুপ্ত হলে শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি নয়, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি এবং এর অধীনে প্রণীত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক আইনের বিধানাবলী ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে জুম্ম জনগণের ভূমি অধিকার এবং সামাজিক রীতি-প্রথা।
এদিকে গত ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমা বেগম মুক্তার নেতৃত্বে রাঙ্গামাটির সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত অপহৃত কল্পনার হদিস, অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি এবং ভুক্তভোগী পরিবারের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত না করেই কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলাটি খারিজের আদেশ দিয়েছেন। প্রায় দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে মামলাটি চলার পর নি¤œ আদালতের এই আদেশ যেমন প্রশাসনকে অপহৃত কল্পনা চাকমার হদিস প্রদানের দায়িত্ব থেকে রেহাই ও কল্পনা চাকমা অপহরণকারীদের অপরাধ থেকে দায়মুক্তি দিয়েছে, তেমনি অপরদিকে ভুক্তভোগী কল্পনা ও তার পরিবারের মানবাধিকারকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যা পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচারহীনতার এক চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
‘অপারেশন উত্তরণ’-এর বদৌলতে সেনাবাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক জুম্মদের উপর রাত-বিরাতে সামরিক অভিযান পরিচালনা করা, ঘরবাড়ি তল্লাসী ও ঘরবাড়ির জিনিষপত্র তছনছ করা, অস্ত্র গুঁজে দিয়ে গ্রেফতার, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তকমা দিয়ে ক্রসফায়ারের নামে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করা, মিথ্যা মামলায় জড়িত করে জেল-হাজতে প্রেরণ করা, নির্বিচারে মারধর ইত্যাদি ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের জীবনে নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন একটি বৃহত্তর সেনানিবাস এলাকা ও নির্যাতন সেলে পরিণত হয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা এবং চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে জুম্ম জনগণের চলমান আন্দোলনের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনী তথা সরকার কর্তৃক সুবিধাবাদী ও জুম্ম স্বার্থ বিরোধী পাহাড়িদের দিয়ে একের পর এক সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সৃষ্টির ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সৃষ্টি করা হয়েছে বম পার্টি নামে খ্যাত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। সেনাবাহিনীর সৃষ্ট এই কেএনএফ এক পর্যায়ে তাদের আস্তানায় ইসলামী জঙ্গীগোষ্ঠীকে আশ্রয় ও সামরিক প্রশিক্ষণের কথা ফাঁস হলে আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে সেনাবাহিনী তথা সরকার কেএনএফের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে বাধ্য হচ্ছে।
আরো উল্লেখ্য যে, গত ২ ও ৩ এপ্রিল কেএনএফ কর্তৃক রুমা ও থানচিতে ব্যাংক এবং রুমা থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র লুটের ঘটনার ফলে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী কেএনএফের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের দোহাই দিয়ে নিরস্ত্র নিরীহ বম গ্রামবাসীদেরকে- নারী, শিশু, গর্ভবর্তী নারী নির্বিশেষে- ধর-পাকড়, শারিরীক নির্যাতন, গ্রেফতার ও জেলে প্রেরণ, কেএনএফ তকমা দিয়ে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা ইত্যাদি চালিয়ে যাচ্ছে। গত ৭ এপ্রিল থেকে সেনাবাহিনী নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর কেএনএফ বিরোধী অভিযানে এযাবত গুলি করে হত্যা করা হয়েছে একজন শিশুসহ ১২ জন নিরীহ বম ব্যক্তিকে এবং গ্রেফতার করা হয়েছে গর্ভবতী নারী ও শিশুসহ ১১১ জন নিরীহ বম গ্রামবাসীকে (কয়েকজন ত্রিপুরাসহ)। অত্যাচারের ভয়ে ৪৭টি গ্রামের কমপক্ষে ১,০০০ পরিবারের আনুমানিক ৫,০০০ বম গ্রামবাসী গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে গেলে তাদের মধ্যে দুই দফায় কমপক্ষে ১৯২ জন বম গ্রামবাসী প্রতিবেশী রাজ্যে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মিজোরামে সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত বম শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,৪৩৩ জন, যদিও বেসরকারি হিসেব মতে এই সংখ্যা দুই হাজারের অধিক হবে।
বাঘাইছড়ি উপজেলায় সীমান্ত সড়ক ও সীমান্ত সংযোগ সড়ককে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিজিবি স্থানীয় আদিবাসী জুম্মদের বিভিন্ন আবাসভূমিতে স্থানীয় নামের বিপরীতে মুসলিম ব্যক্তির নামে নামকরণ করে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিয়েছে। এধরনের সাইনবোর্ড স্থাপনের কয়েকটি উদাহরণ হল- বাঘাইছড়ির সার্বোয়াতলী এলাকার ভিজে হিজিং নামক স্থানের জায়াগায় ‘শাহীন টিলা’, সাজেক এলাকার কিংকরপাড়া স্থানের জায়গায় ‘মাহমুদ টিলা’, সাজেক এলাকার দুরবাছড়া স্থানের জায়গায় ‘এনামুল টিলা’, সাজেক এলাকার বটতলা নামক স্থানের জায়গায় ‘সজিব টিলা’, সাজেক এলাকার কিংকরপাড়ার স্থানে আরেকটি টিলার নাম ‘শামিম টিলা’, সাজেক এলাকার ভুইয়োছড়া নামক স্থানের জায়গায় ‘সাইদুর টিলা’, সাজেক এলাকার কিংকরপাড়ায় আরো একটি টিলার নাম ‘ইসমাইল টিলা (বিওপি পোস্ট)’, সাজেক এলাকার ভুইয়োছড়া নামক জায়গায় আরো একটি টিলার নাম ‘আল-আমিন টিলা’ ইত্যাদি নাম সম্বলিত সাইনবোর্ড। সেনাবাহিনী ও বিজিবি মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন এবং স্থানীয় জুম্মদের ভূমি বেদখল ও উচ্ছেদের লক্ষেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এইসব সাইনবোর্ড স্থাপন করেছে।
২০২৪ সালের জানুয়ারি হতে জুন মাস পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সেনা-মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ, সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠী, মুসলিম বাঙালি সেটেলার ও ভূমিদস্যুদের দ্বারা ১০৭টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে এবং এসব ঘটনায় কমপক্ষে ৫,০০০ বম নারী-পুরুষসহ ৫,৪৪৮ জন জুম্ম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়। এছাড়া কমপক্ষে ১,০০০ বম পরিবারসহ ১,২৮৪ পরিবার ও ৪৭টি বম গ্রামসহ ৭৬টি গ্রাম প্রত্যক্ষভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়। অপরদিকে ১,৮০৬ একর ভূমি বহিরাগত এনজিও, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সেটেলার কর্তৃক বেদখল করা হয়েছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাবলী নিম্নরূপ শ্রেণিতে বিভক্ত করা যেতে পারে:
প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর নিপীড়ন-নির্যাতন
২০২৪ সালের জানুয়ারি হতে জুন মাস পর্যন্ত সংঘটিত ১০৭টি ঘটনার মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ৭৩টি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এবং এতে কমপক্ষে ৫,০০০ বমসহ ৫,৩৯৪ জন, কমপক্ষে ১,০০০ বম পরিবারসহ ১,২৮৪ পরিবার ও ৪৭টি বম গ্রামসহ ৬৭টি গ্রামের লোক মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে। তার মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ১২ জন বমকে, গ্রেফতার করা হয়েছে ১১৭ জনকে, সাময়িক আটক করা হয়েছে ১২ জনকে, মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছে ১৬ জন, জুম ও বাগান-বাগিচা চাষে বাধা ও ক্ষতি করা হয়েছে ৪২ পরিবারকে, সীমান্ত সংযোগ সড়কে ক্ষতি করা হয়েছে ২৪২ পরিবারকে এবং পারিবারিক তথ্য ও ছবি প্রদানে নির্দেশ দেয়া হয়েছে ২০টি গ্রামকে। নিম্নে কিছু উল্লেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা গেল-
৪ জানুয়ারি হতে ৭ জানুয়ারির পর্যন্ত রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার বালুখালী ইউনিয়নে বাদলছড়ি জনকল্যাণ বৌদ্ধ বিহারের জায়গায় সুবলং সেনা ক্যাম্প থেকে ক্যাপ্টেন মো: শফিক ও জনৈক সুবেদারের নেতৃত্বে এক সেনা টহল দল কর্তৃক বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি অবমাননা ও পরিহানি করে থাকে। সেনা সদস্যরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিহারের জায়গাতেই সাউন্ড বক্স দিয়ে প্রতিদিন আজান দেয় এবং বিহারের আশেপাশে খোলা জায়গাতেই মলমূত্র ত্যাগ করে পরিবেশ দূষিত করে থাকে।
৫ মার্চ বিলাইছড়ি উপজেলার ৩নং ফারুয়া ইউনিয়নের ৮নং তাংকোয়তাং ওয়ার্ডের বিলাইছড়ি জোনের ৩২ বীর এর তাংকোয়তাং সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার কর্তৃক নতুন বাবু তঞ্চঙ্গ্যা (৪০) ও কাজল বাবু তঞ্চঙ্গ্যা (৩৮) নামে দুই নিরীহ জুম্ম ব্যাপক মারধরের শিকার হন।
আদিবাসী জুম্মদের গ্রাম উচ্ছেদ, ঘরবাড়ি ও বাগান-বাগিচা ধ্বংস, জুম চাষে বাধা প্রদান, সড়ক সংলগ্ন এলাকায় জুম্মদের ঘরবাড়ি নির্মাণে বাধা প্রদান করে সেনাবাহিনী কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামে সীমান্ত সড়ক ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। তারই সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে, মার্চ মাসে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের অধীন ২৬ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্যাটেলিয়ন কর্তৃক রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী-বিলাইছড়ি-জুরাছড়ি সীমান্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজে জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ির সীমান্তবর্তী গাছবাগান পাড়া ও থুম পাড়া নামে দুইটি জুম্ম গ্রামের ২৩ পরিবার জুম্ম পরিবার উচ্ছেদের পাঁয়তারা ও ১৭ পরিবারকে জুম চাষে বাধা প্রদান করা। পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের মূল উদ্দেশ্যেই সেনাবাহিনী উক্ত দু’টি গ্রাম উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়েছে।
বাঘাইছড়িতে সেনাবাহিনী কর্তৃক সীমান্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ২২২ পরিবার জুম্মদের আন্দোলন ও ক্ষতিপূরণের দাবির প্রেক্ষিতে একাধিকবার ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলেও সম্প্রতি সেনাবাহিনীর এক মেজর কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ উক্ত সীমান্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজের প্রকল্প কর্মকর্তা বিএ-১০০৬৯ মেজর মো: শামীম সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের তিনজন প্রতিনিধি ও স্থানীয় ইউপি সদস্যকে কচুইছড়ি সেনা ক্যাম্পে ডেকে ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার উক্ত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন।
৪ মে ২০২৪ রাঙ্গামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলা সদর এলাকা থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যক্ষাবাজার সেনা ক্যাম্পের সেনা সদস্য কর্তৃক রূপম চাকমা (২৫), সুরেন চাকমা (২৪) ও রনি চাকমা (২০) নামে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ৩ জন নিরীহ ছাত্র আটকের শিকার হয়েছেন। তাদেরকে ইয়াবা টেবলেট ও চাঁদার রসিদ গুঁজে দিয়ে সাজানো মামলা দায়ের করে জেল-হাজতে পাঠানো হয়।
২৪ মে ২০২৪ রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ধুপশীল সেনা ক্যাম্পের দায়িত্বরত ওয়ারেন্ট অফিসার জাভেদ কর্তৃক ধুপশীল, শালবাগান, লতাপাহাড়, ধুপশীল মধ্য পাড়া গ্রামের জুম্ম গ্রামবাসীদের ছবি ও পরিবারের তালিকা সেনা ক্যাম্পে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
১ জুন ২০২৪ রাঙ্গামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলার মৈদুং ইউনিয়নে বনযোগীছড়া সেনা জোনের ক্যাপ্টেন সাইদ ও ক্যাপ্টেন আসিফ-এর নেতৃত্বে একদল সেনা ইন্দ্র মোহন চাকমা (৫৫) নামে এক জুম্ম গ্রামবাসীর জুমের ধান ধ্বংস করে হেলিপ্যাড নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে।
৪ জুন ২০২৪ উক্ত সেনা দল কর্তৃক রাঙ্গামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলার মৈদুং ইউনিয়নে টহল অভিযান পরিচালনার সময় রিতু চাকমা নামে এক নিরীহ জুম্ম গ্রামবাসীকে আটক, গ্রামবাসীকে ব্রাশফায়ার করার হুমকি এবং বিনাপয়সায় গ্রামবাসীদের খাদ্যদ্রব্য কেড়ে নেয়া হয়।
সেনা-মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তৎপরতা
২০২৪ সালের জানুয়ারি হতে জুন মাস পর্যন্ত ১০৭টি ঘটনার মধ্যে সেনা-সৃষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক ২৬টি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এবং এতে ৩৮ জন ও ০৯টি গ্রামের অধিবাসীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার মধ্যে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, মারধর, হত্যা, গুলিতে আহত, তল্লাসী, হত্যার হুমকি, গবাদিপশু ও মুরগী ছিনতাই, টাকা ও মোবাইল ছিনতাই, চাঁদা দাবি ইত্যাদি ঘটনার ছিল। নিম্নোক্ত কিছু উল্লেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা উল্লেখ করা গেল-
১১ জানুয়ারি ২০২৪ কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়ন থেকে সেনামদদপুষ্ট মগ পার্টি সন্ত্রাসীদের কর্তৃক বিমল তঞ্চঙ্গ্যা (৪২) নামে এক নিরীহ জুম্ম গ্রামবাসী অপহরণের শিকার হয়েছে।
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নে সেনা-সৃষ্ট বম পার্টি খ্যাত কেএনএফ কর্তৃক ২ আদিবাসী মারমা গ্রামবাসীকে মারধর করে এবং অপর ৬ মারমা গ্রামবাসীকে দুই ঘন্টা ধরে জিম্মি করে রাখে।
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সেনাসৃষ্ট কেএনএফ সন্ত্রাসীদের গুলিতে রুমা উপজেলার রুমা সদর ইউনিয়নের এক নিরীহ মারমা গ্রামবাসী গুরুতর আহত হয়েছে। সন্ত্রাসীরা আরও এক মারমা গ্রামবাসীর কাছ থেকে জোরপূর্বক ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে।
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ কেএনএফ-এর সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে রুমা উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন শেষে বাড়ি ফেরার পথে চারজন মারমা গ্রামবাসী কেএনএফ সন্ত্রাসীদের দ্বারা মারধরের শিকার হয়েছেন।
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ বান্দরবানের রুমা উপজেলায় বমপার্টি খ্যাত কেএনএফ সন্ত্রাসী গাড়ি আটকিয়ে এবং কাজে যাওয়ার পথে কমপক্ষে ৮ জন লোককে মারধর করে।
৩ মার্চ ২০২৪ এক মিটিংয়ের মাধ্যমে লংগদু উপজেলায় সেনাবাহিনী মদদপুষ্ট সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীদের কর্তৃক স্থানীয় জুম্মদের কাছ থেকে জোরপূর্বকভাবে ব্যাপক চাঁদা আদায় করা হয়।
৪ মার্চ ২০২৪ সুবলং বাজার হতে সেনা ও ডিজিএফআইয়ের সহযোগিতায় উত্তরণ চাকমার নেতৃত্বে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও সংস্কারপন্থীদের ২২ জনের একটি সশস্ত্র দল দুটি জেটবোট যোগে বরকল বিজিবি জোন অতিক্রম করে ছোট হরিণা বাজার পর্যন্ত সশস্ত্র মহড়া দেয়।
১৫ মার্চ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মদদপুষ্ট ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীরা রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলা সদর এলাকার এক জুম্ম গ্রামবাসীর কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৮ মন পরিমাণ শুকনা হলুদ লুট করে নিয়ে যায়।
২ ও ৩ এপ্রিল ২০২৪ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৃষ্ট কেএনএফ সন্ত্রাসীরা রুমা উপজেলা সোনালী ব্যাংকে এবং থানচি উপজেলায় সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকে হামলা চালিয়ে প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা এবং নিরাপত্তা রক্ষীদের ১৪টি অস্ত্র ও ৪১৫ রাউন্ড গুলি লুট করে।
৬ এপ্রিল ২০২৪ বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের কর্তৃক এক নিরীহ ত্রিপুরা যুবক মারধরের শিকার হয়েছে।
২১ মে ২০২৪ বিলাইছড়ি উপজেলার ৪নং বড়থলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতোমং মারমা আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তের গুলিতে গুরুতর আহত হন এবং পরে ৩০ মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রামে মারা যান।
ভূমি বেদখল ও উচ্ছেদ এবং সাম্প্রদায়িক হামলা
২০২৪ সালের জানুয়ারি হতে জুন মাস পর্যন্ত ১০৭টি ঘটনার মধ্যে মুসলিমবাঙালি সেটেলার ও ভূমিদস্যু কর্তৃক ০৪টি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এবং এতে ০৭ জন জুম্ম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে এবং ১,৮০৬ একর ভূমি বেদখল করা হয়েছে। নিম্নোক্ত কিছু উল্লেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা উল্লেখ করা গেল-
১৩ জানুয়ারি ২০২৪ জুরাছড়ি উপজেলা সদর এলাকায় স্থানীয় সেনাবাহিনীর মদদে একদল বহিরাগত মুসলিম সেটেলার বাঙালি কর্তৃক এক জুম্ম গ্রামবাসীর ভূমি বেদখলের চেষ্টা করা হয়। যক্ষাবাজার সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন মোশাররফ এর নেতৃত্বে যক্ষাবাজার সেনা ক্যাম্পের সেনা সদস্যরা ভূমি বেদখলে প্রতিবাদকারী নারী-পুরুষদের মধ্যে থেকে ৫ জন জুম্মকে ক্যাম্পে ধরে নিয়ে ব্যাপক মারধর করে।
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সেটেলার বাঙালিদের একটি দল মোহাম্মদ মনির হোসেনের নেতৃত্বে বিলাইছড়ি উপজেলার কেংড়াছড়ি ইউনিয়নের রেইংখ্যং শাখা বনবিহারের পশ্চিম পাশে অবস্থিত ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার জ্ঞান রঞ্জন তালুকদারের রেকর্ডীয় প্রায় ২.০০ একর পরিমাণ ধান্য জমি বেদখলের চেষ্টা করে। এসময় উক্ত সেটেলাররা উক্ত জমিতে ধান রোপণের চেষ্টা করে।
লক্ষীছড়ি উপজেলার ২১৭নং জারুলছড়ি মৌজায় সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের নামে হেডম্যানের স্বাক্ষর সহ প্রত্যয়নপত্র জাল করে CDTO-CRCCII-CCECC-ERECBL CONSORTIUM নামক একটি বহিরাগত কোম্পানি কর্তৃক ১৭০০ একর ভূমি বেদখলের চেষ্টা করা হচ্ছে।
১৪ মার্চ ২০২৪ নানিয়াচর উপজেলার বগাছড়ি এলাকায় সেটেলার বাঙালি কর্তৃক ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালক জিকন চাকমা (২৬) নামে এক যুবককে হত্যা করা হয়েছে।
১৭ মে ২০২৪ কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং মডেল ইউনিয়ন এলাকার নাফ নদী থেকে আরএসও কর্তৃক অস্ত্রের মুখে দুই আদিবাসী যুবক অপহরণের শিকার হন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদেরকে মুক্তি দেয়া হয়নি।
স্থানীয় জনগণের আপত্তিকে উপেক্ষা করে আলিকদম উপজেলার ২নং চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ২৮৯নং চৈক্ষ্যং মৌজার সোনাইছড়ি এলাকায় পাহাড়ি ভূমিতে সরকারের বনবিভাগ কর্তৃক সামাজিক বনায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বান্দরবানের সুয়ালক ও লামার ডুলুছড়িতে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও মেয়ের নামে রয়েছে শত একর জমি। এসব জমিতে একসময় অসহায় পরিবারের বসবাস থাকলেও ছলে-বলে-কৌশলে নামমাত্র মূল্যে তাদের জমি বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়।
যৌন হয়রানি, সহিংসতা, ধর্ষণ ও হত্যা
২০২৪ সালের জানুয়ারি হতে জুন মাস পর্যন্ত ১০৭টি ঘটনার মধ্যে রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় পক্ষ কর্তৃক জুম্ম নারী ও শিশুর উপর ০৪টি সহিংস ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এবং এতে ৯ জন নারী মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে। নিম্নে কিছু উল্লেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা উল্লেখ করা গেল-
১০ জানুয়ারি ২০২৪ মাটিরাঙ্গা উপজেলার গোমতি ইউনিয়নের সেটেলার বাঙালি যুবক মো: বাবু কর্তৃক বিরেন্দ্র কিশোর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণিতে পড়ূয়া এক ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করে।
১৪ মার্চ ২০২৪ আলিদকম উপজেলার ১নং আলিকদম সদর ইউনিয়নে এক মুসলিম সেটেলার বাঙালি যুবকের হামলায় ছয় আদিবাসী নারী ও শিশু নির্মমভাবে মারধরের শিকার হয়।
১০ জুন ২০২৪ রাঙ্গামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলার ৪নং দুমদুম্যা ইউনিয়ন এলাকায় সীমান্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজে কর্মরত এক বহিরাগত বাঙালি শ্রমিক কর্তৃক স্থানীয় এক চাকমা তরুণী ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছে।
উন্নয়ন আগ্রাসন
সীমান্ত সড়ক ও সীমান্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের সময় সেনাবাহিনী ও বিজিবি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সড়কের আশেপাশে আকর্ষণীয় বহু জায়গা বাছাই করে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্দেশ্যে সেখানে ‘সংরক্ষিত এলাকা’ বলে উল্লেখ করে দখল করা হচ্ছে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবি কর্তৃপক্ষ ইচ্ছেমত কারো কারো জায়গায়, এমনকি স্কুল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জায়গায়ও সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে সাইনবোর্ড স্থাপন করতে দেখা যায়। এমনকি স্থানীয় জনগণকেও ঐ এলাকায় চলাচল করতে নিষিদ্ধ করছে।
১১ জানুয়ারি কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের কারিগড় পাড়া বাজার হতে বিলাইছড়ি উপজেলা সদর পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজের ফলে কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের আজাছড়ি ভাঙামুড়া পাড়া এলাকায় কোন ক্ষতিপূরণ ছাড়াই দুই জুম্ম গ্রামবাসী উচ্ছেদের শিকার হয়েছে।
জুম্মদের ঘরবাড়ি, বাগান-বাগিচা ও ভূমি ধ্বংস করে এবং উচ্ছেদ করে সেনাবাহিনী ও বিজিবি কর্তৃক তিন পার্বত্য জেলায় সীমান্ত সড়ক ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদেরকে কোনরূপ ক্ষতিপূরণ না দিয়ে। এমনকি ক্ষতিপূরণের দাবিতে ক্ষতিগ্রস্ত জুম্মদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে একাধিকবার ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলেও পরবর্তীতে সেনাবাহিনী কোনো ক্ষতিপূরণ প্রদানে অস্বীকার করে থাকে। অন্যদিকে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সেনাবাহিনী অনেক জুম্ম গ্রাম ও পরিবার জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে থাকে।