হিল ভয়েস, ১৭ জুলাই ২০২৪, রাঙ্গামাটি: আজ ১৭ জুলাই ২০২৪ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার নিন্দা ও জড়িতদের শাস্তির দাবি এবং সরকারি চাকরিতে আদিবাসীদের ৫% কোটা পুনর্বহালের দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) একটি বিবৃতি দিয়েছে।
পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অন্বেষ চাকমা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় এই বিবৃতির কথা জানানো হয়েছে।
বিবৃতির সম্পূর্ণ অংশ নিম্নে প্রদান করা হল:
“সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলার ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ তীব্র নিন্দা ও হামলায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছে এবং সেই সাথে হামলায় নিহত ও আহত শিক্ষার্থীদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।
কোটা একটি সাংবিধানিক অধিকার। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৯ নং অনুচ্ছেদের ৩(ক) তে বলা হয়েছে- ‘এই অনুচ্ছেদের যে কোন কিছুই- (ক) নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান-প্রণয়ন করা হইতে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।’
১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যকার স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ঘ (১০) এ উল্লেখ আছে- ‘চাকরি ও উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের অন্যান্য অঞ্চলের, সমপর্যায়ের না পৌঁছা পর্যন্ত সরকার আদিবাসীদের জন্য সরকারি চাকরি ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা ব্যবস্থা বহাল রাখিবেন।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ মনে করে, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত আদিবাসীরা এখনো আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে মূলধারার জনগোষ্ঠীর সমপর্যায়ে পৌঁছাতে না পারায় সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে এখনও কোটা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায় নি। কিন্তু ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিলের পরিপত্র জারি করায় এর পরবর্তীতে বিসিএসে পাহাড় এবং সমতলের আদিবাসীরা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। পিএসসি’র তথ্যমতে, ৪০, ৪১, ৪২ (বিশেষ) ও ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় ৯২ জন আদিবাসী উত্তীর্ণ হলেও মাত্র ০৪ জন সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে। আদিবাসীদের জন্য কোটা বরাদ্দ থাকলেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায় আদিবাসী শিক্ষার্থীরা সমান পাশ নাম্বার পেয়ে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে থাকে। ফলে আদিবাসী শিক্ষার্থীরাও মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। তাই আদিবাসী শিক্ষার্থীদের অমেধাবী বলাটা অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন।
যেকোন দাবিতে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করা একটি সাংবিধানিক অধিকার। সেই জায়গা থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবিকে আমলে নিয়ে ২০১৮ সালের ন্যায় সকল কোটা বাতিল না করে কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে বলে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ মনে করে। বাংলাদেশ সংবিধান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে উল্লেখিত অনুচ্ছেদ ও ধারা এবং সর্বশেষ বিসিএসে আদিবাসীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়াকে বিশেষভাবে বিবেচনায় নিয়ে অনগ্রসর হিসেবে আদিবাসীদের জন্য ৫% কোটা পুর্নবহাল করার জোর দাবি জানাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ।”
+ There are no comments
Add yours