হিল ভয়েস, ১২ জুলাই ২০২৪, বান্দরবান: সেনাবাহিনীর নিষেধাজ্ঞার কারণে বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার আদিবাসী বম জনগোষ্ঠীর কয়েক লক্ষ টাকার বিক্রিত ও বিক্রয়যোগ্য পাকা আনারস ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
সেনাবাহিনীর নিষেধের কারণে অনেক ব্যবসায়ী বম গ্রামবাসীদের কাছ থেকে আনারস কিনলেও সেগুলো নিয়ে যেতে পারেনি এবং অনেক বম গ্রামবাসী তাদের পাকা আনারস বিক্রি করতে পারেনি। সেসব আনারস হয় বাগানে, অথবা রুমা বাজারেই পঁচে যায়।
গত পরশু (১০ জুলাই) কেবল বাজারে পঁচে যাওয়া কয়েক লক্ষ টাকার আনারস এর মালিকরা রুমা বাজারের পার্শ্ববর্তী পলি পাড়া সংলগ্ন এক ঝিঁড়িতে অনন্যেপায় হয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। (ছবিতে নষ্ট হওয়া আনারসের স্তুপ দেখা যাচ্ছে)
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি আনারসের মৌসুমে অনেক বম গ্রামবাসী বিক্রির জন্য রুমা বাজারে আনারস আনেন। অনেক আনারস বাঙালি ও পাহাড়ি ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে বাজারে মজুত করে ট্রাকে বোঝাই করেন। পরে রুমা সেনা ক্যাম্প থেকে এএসইউ (আর্মি সিকিউরিটি ইউনিট)-এর একদল সদস্য এসে বমদের ঐ আনারস কেউ বাজার থেকে কোথাও নিয়ে যেতে বা বিক্রি করতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়। এই অবস্থায় আনারসগুলো পঁচতে শুরু করলে মালিকরা সেগুলো ঝিঁড়িতে ফেলে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আনারস বিক্রেতা জানান, সর্বমোট চার ট্রাক আনারস ছিল এবং ঐ আনারসের দাম আড়াই লাখ টাকার চেয়েও বেশি হবে।
জানা গেছে, বমদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে বিক্রিত আনারসের টাকাও পেয়েছেন, কেউ কেউ পাননি। আবার কেউ কেউ বিক্রয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আরও অনেক বম গ্রামবাসীর লক্ষ লক্ষ টাকার আনারস বাগানেই পঁচে গেছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য যে, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর মুসলিম জঙ্গী গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ততা ও সশস্ত্র তৎপরতার বিষয়টি ফাঁস হলে সেনাবাহিনী এক পর্যায়ে কেএনএফের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করতে বাধ্য হয়। অভিযানের এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী কেএনএফ-কে কোনঠাসা করার নামে সাধারণ বমদের নির্বিচারে ধরপাকড় সহ তাদের বিভিন্ন কাঁচামাল বিক্রিতেও বিভিন্ন সময় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও নিষেধ করে আসছে। সাধারণ বমদের উপার্জনের অন্যতম প্রধান উৎস বিভিন্ন ফল বাগান ও সবজি চাষ।
সেনাবাহিনীর নিষেধাজ্ঞার কারণে ইতিপূর্বেও একাধিকবার সাধারণ বম গ্রামবাসীরা আম, কাঠাল সহ বিভিন্ন ফল ও সবজি বিক্রি করতে না পেরে আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনিতেই অনেক গ্রামবাসী সেনাবাহিনী ও কেএনএফের নিপীড়ন ও হয়রানির ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এবং আত্মীয়-স্বজনের বাড়িয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।