হিল ভয়েস, ২৮ জুলাই ২০২৪, চট্টগ্রাম: ‘আদিবাসী শ্রমিকদের সুষ্ঠু কর্ম পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত কর’, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়ন কর’ শ্লোগান নিয়ে চট্টগ্রামে পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের চারটি থানা, চারটি ইউনিট ও আদিবাসী মহিলা ফোরাম চট্টগ্রাম মহানগর শাখার একযোগে বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে।
গত ১৯ জুলাই ২০২৪ বিকাল ৩.৩০ ঘটিকায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবস্থ বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এই বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি দিসান তঞ্চঙ্গ্যা এবং অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জগৎ জ্যোতি চাকমা।
এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ, দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী, ঐক্য ন্যাপ চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক অজিত দাশ, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি হ্লামিও মারমা, সহ-সভাপতি সৌরভ চাকমা, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সদস্য অমর কৃষ্ণ চাকমা বাবু এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সুজন চাকমা।
অ্যাড. নিতাই প্রসাদ ঘোষ বলেন, ১৯৭১ সালে যুদ্ধে সকল জাতির অংশগ্রহণ ছিল, কিন্তু বর্তমানে সংখ্যালঘু জনগণের উপর নির্যাতন চরম পর্যায়ে। বর্তমান সরকার ১৫ বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত অবস্থায়, তবু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে সংখ্যালঘুরা। বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে একটি চরম নষ্ট রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সংখ্যালঘু জনগণ ঐক্যবদ্ধ ভাবে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বতমান সরকার চুক্তি করেছে কিন্তু বাস্তবায়ন করেনি।
অ্যাড. প্রদীপ কুমার চৌধুরী বলেন, আপনাদের সাথে আমাদের দেখা হয় মিটিং-মিছিলে অধিকার প্রতিষ্ঠা লক্ষ্যে। পাহাড়ের জুম্মরা অস্ত্র ধরেছে। দীর্ঘ বছর পর সরকারের সদিচ্ছায় ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু সেই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য এখনো লড়াই করতে হয়, এতাই সরকারের জন্য লজ্জাকর।
অজিত দাশ বলেন, সরকার সংকট সৃষ্টি করছে, এই সংকটের কারণে ৩৫ জন তাজা প্রাণ গেল। কোটা সংস্কারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে, সরকার যদি বাস্তবায়ন না করে তাহলে সংগঠিত ভাবে লড়াই সংগ্রাম হবে। শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে হবে।
হ্লামিও মারমা বলেন, পাহাড়ের জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের পাহাড়ের ইতিহাসকে জানতে হবে, চুক্তি পূর্ববর্তী পাহাড়ের জুম্ম জনগণ যে অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিল তা জানতে হবে।
সভার সভাপতি দিসান তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, সংগঠন হল লক্ষ্য পরিপূণের হাতিয়ার। মহান পার্টি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নীতি ও আদর্শকে ধারণ করতে হবে, পার্টির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে গ্রহণ করতে হবে। পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের বিভিন্ন থানা, ইউনিট ও আদিবাসী মহিলা ফোরামে অন্তর্ভুক্ত সকলকে তিনি আত্মকেন্দ্রিক চিন্তাধারা বাদ দিয়ে সামগ্রিক চিন্তা করতে আহ্বান জানা। তিনি আরও বলেন, আমাদের শেকড়কে মনে রাখতে হবে, আমাদের মাতৃভূমি ও অস্তিত্বকে ভুলে গেলে হবে না। আমাদের প্রাণপ্রিয় মানুষদের কথা চিন্তা করতে হবে, গভীর ভাবে চিন্তা করতে হবে আমার পায়ের নিচে মাটি আছে কিনা। আমাদের অস্তিত্ব যদি ঠিকে না থাকে তাহলে আমরা কোথায় গিয়ে দাড়াবো? তাই আমাদের অস্তিত্বকে ঠিকিয়ে রাখতে হলে চুক্তি বাস্তবায়ন সংগ্রামের বিকল্প নেই।
প্রথম অধিবেশন শেষে জুম্ম সাংস্কৃতিক শিল্পী গোষ্ঠীর শিল্পীদের পরিবেশনায় ৩০ মিনিট সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয় এবং এরপর দ্বিতীয় পর্ব কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কল্প চাকমা এবং অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বন্দর থানা শাখার সহ-সভাপতি জ্যোতিময় তঞ্চঙ্গ্যা ও বন্দর থানা শাখার সভাপতি সুজন চাকমা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সন্তোষ বিকাশ চাকমা।
এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিতি ছিলেন পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সিনিয়র সহ-সভাপতি অনিল বিকাশ চাকমা এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জগৎ জ্যোতি চাকমা, নারী বিষয়ক সম্পাদক শ্রীমতী সোনাবী চাকমা।
এতে স্ব স্ব সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে বক্তব্য রাখেন চান্দগাও থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক স্বপন খীসা, টেকবার ইউনিট শাখা সাংগঠনিক সম্পাদক যতন ত্রিপুরা, মাইল্যা মাথা ইউনিট শাখার সাধারণ সম্পাদক স্বপন চাকমা, নিউমুড়িং ইউনিট শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মিঠন চাকমা, ইপিজেড থানা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুজন চাকমা, বন্দর থানা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক অমর চাকমা, পতেঙ্গা থানা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামল ত্রিপুরা ও আদিবাসী মহিলা ফোরাম এর সভাপতি চিজিপুতি চাকমা।
সবশেষে বন্দর, ইপিজেড, পতেঙ্গা ও চান্দগাও থানা ও মাইল্যার মাথা, নিউমুড়িং, বোর্ডস্কুল ও টেক বাজার ইউনিট কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি দিসান তঞ্চঙ্গ্যা এবং আদিবাসী মহিলা ফোরাম চট্টগ্রাম মহানগর শাখাকে শপথ বাক্য পাঠ করান সংগঠনের নারী বিষয়ক সম্পাদক শ্রীমতী সোনাবী চাকমা।
নবাগত কমিটির সকল সদস্যদের শুভেচ্ছা জানান বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা এস জে চাকমা।
+ There are no comments
Add yours