হিল ভয়েস, ৩ জুন ২০২৪, বিশেষ প্রতিবেদক: রাখাইন পল্লীর বেদখল হওয়া ভূমি, শ্মশানের জমি ও পুকুর পুনরুদ্ধার করে আদিবাসী রাখাইনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে নাগরিক প্রতিনিধিদল।
গতকাল রবিবার (২ জুন) পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসন, কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসন, ভূমি কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই আহ্বান জানান রাখাইনপল্লীতে সরেজমিন পরিদর্শন করে আসা নাগরিক প্রতিনিধিদল।
পটুয়াখালী জেলায় বসবাসরত রাখাইনদের চলমান ভূমি সমস্যার ধরন পর্যবেক্ষণের জন্য ১২ সদস্যের নাগরিক প্রতিনিধিদল ১ ও ২ জুন কয়েকটি রাখাইন পল্লী সরেজমিনে পরিদর্শন করেন এবং পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কয়েকটি গ্রামের স্থানীয় রাখাইন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।
সেখানে তারা প্রবীন রাখাইন নেতৃত্বের সঙ্গে মত বিনিময় করে জানতে পারেন যে, ১৭৮৪-১৯০০ সালের দিকে বরিশাল উপকূলীয় অঞ্চলে ৫০ হাজারের বেশি রাখাইন বসবাস করত। ১৯০০-১৯৪৮ সালে এই সংখ্যা হয় ৩৫ হাজার।
কারিতাসের বর্তমান সময়ে করা জরিপ থেকে জানা যায় যে, রাখাইন জনসংখ্যা ১ হাজার ১৬৯। কলাপাড়ায় এখন মাত্র ৩০৬টি রাখাইন পরিবার আছে। অথচ বর্তমানে তাদের ভূমি সংক্রান্ত মামলা রয়েছে ৩৭৩টি।
প্রতিনিধিদল প্রথমে নয়াপাড়া বৌদ্ধবিহার পরিদর্শন করে জানতে পারে সেখানে বৌদ্ধবিহারের জন্য দান করা জমি বেদখল হয়েছে। মামলার উচ্চ আদালতের রায় বিহারের পক্ষে রয়েছে। কিন্তু সেই রায়ের তোয়াক্কা না করে সেটি দখলের জন্য অবৈধ স্থাপণা তৈরী করছে বেখলকারীরা। সেখানকার ভিক্ষুর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। সেই বিহারের পাশে এখন মাত্র ৬টি রাখাইন পরিবার রয়েছে। বাকীরা এলাকা ছেড়ে চলে গেছে।
এরপরে প্রতিনিধিদল শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শন করে। ১৭৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই উপাসনালয়ের দেয়াল ভেঙ্গে দখলীয় রাখাইন মার্কেট সংলগ্ন ভূমিতে কুয়াকাটা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ পাবলিক টয়লেট নির্মানের চেষ্টা করা হয়েছিল। এর বিপক্ষে বিহার কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করলে উচ্চ আদালত এখানে স্থগিতাদেশ দেন। সেটি প্রদর্শন করলে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ কাজ বন্ধ রাখেন।
কিন্তু গত ২৪ ফেব্রুয়ারি অতি দ্রুত গতিতে অনেক শ্রমিক নিয়োগ করে টয়লেটের ঢালাইয়ের কাজ দ্রুত শেষ করে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ও নাগরিকদের ধারাবাহিক প্রতিবাদের মুখে সেখানে টয়লেট স্থাপন আপাতত বন্ধ রয়েছে।
নাগরিক প্রতিনিধিদল রাখাইন জনগোষ্ঠীর বৌদ্ধ বিহারের জমি অবৈধ দখল বন্ধ হওয়া এবং সেখানে অবৈধভাবে স্থাপণা ও টয়লেট তৈরী বন্ধ করা এবং এই বিষয়গুলোর প্রতি আরও সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা, মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।
এগুলো বন্ধের আহবানের পাশাপাশি বাংলাদেশে এ্সব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নাগরিক প্রতিনিধিদলে ছিলেন, বাংলাদশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরিন কনা, অনুবাদক ও গবেষক মুহাম্মদ হাবিব, গবেষক ও লেখক হাসিব মাহমুদ, সাংবাদিক, এএলআরডি এবং মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন এর প্রতিনিধিবৃন্দ।