হিল ভয়েস, ৩০ জুন ২০২৪, ঢাকা: জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদের জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে ‘চাটার দলের’ হাত থেকে প্রধানমন্ত্রীকে রক্ষায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আশেপাশের সুবিধাবাদী লোকরা যাতে তাঁর ভালো কাজগুলো ধূলিস্মাৎ করতে না পারে তজ্জন্যে প্রধানমন্ত্রীরও ভাববার সময় এসেছে।
তিনি বলেন, রক্তার্জিত স্বাধীনতার পরেও সমঅধিকার ও সমমর্যাদা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছে। ড. মিজান বলেন, মুক্তিযুদ্ধে সংখ্যালঘুদের ত্যাগ ও অবদান কিছুতেই অস্বীকার করা যাবে না। তারা তাদের দেশপ্রেমের জন্য একাত্তরে পাকিস্তানী হানাদার দখলদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় এজেন্টদের টার্গেটে পরিণত হয়েছিল। আজও তাদের তা থেকে মুক্তি মেলেনি। একাত্তরে রক্তের আখরে যে বাংলাদেশের অভ্যুদয় তা রাজধর্মের বাংলাদেশ হতে পারে না।
গতকাল ২৯ জুন ২০২৪, শনিবার ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদের দ্বিতীয় জাতীয় ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্য দু’জন সভাপতি সাবেক সাংসদ ঊষাতন তালুকদার ও নির্মল রোজারিও এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে অ্যাড. সুব্রত চৌধুরী, কাজল দেবনাথ, মিলন কান্তি দত্ত, জে এল ভৌমিক, রঞ্জন কর্মকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়ন্তী রায়, মনীন্দ্র কুমার নাথ, জয়ন্ত কুমার দেব, অ্যাড. তাপস কুমার পাল, নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, অ্যাড. শ্যামল কুমার রায়, অ্যাড. কিশোর রঞ্জন মন্ডল, রমেন মন্ডল, উইলিয়াম প্রলয় সমাদ্দার বাপ্পী, ইঞ্জি. দিব্যেন্দু বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া ও মধুমিতা বড়ুয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) স্বাধীনতাত্তোর প্রথম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব জামান ও সাউথ এশিয়া ফোরাম ফর রিলিজিয়াস ফ্রিডম এন্ড বিলিফ-র ডাইরেক্টর স্যামুয়েল জয় কুমার শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।
তিন অধিবেশনে বিভক্ত এ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন যথাক্রমে পংকজ সাহা, রাহুল বড়ুয়া ও রবার্ট নিক্সন ঘোষ। সম্মেলনের শুরুতে এক বিশাল র্যালী ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা প্রদক্ষিণ করে সম্মেলনস্থলে এসে শেষ হয়। সভা সঞ্চালনা করেন ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল।
প্রধান অতিথির ভাষণে ড. মিজানুর রহমান আরো বলেন, রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে স্খলন ঘটে গেছে। তিনি সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়নসহ নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুত সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব অঙ্গীকারসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্যে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। তিনি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর স্বার্থ ও অস্তিত্ব রক্ষায় এবং সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় যুব সমাজের দৃঢ় ঐক্যবদ্ধ ভূমিকার উপর জোর গুরুত্ব আরোপ করেন।
ড. মিজানুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিলো একটি অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র হিসেবে। কিন্তু আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের উপর বিভিন্ন অত্যাচারের এবং জোরপূর্বক তাদের জমি দখলের তীব্র সমালোচনা করেন।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব জামান বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ পুণঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদারে মুক্তিযুদ্ধপ্রেমী সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সাউথ এশিয়া ফোরাম ফর রিলিজিয়াস ফ্রিডম এন্ড বিলিফ’র ডাইরেক্টর স্যামুয়েল জয়কুমার বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস ও স্বাধীনতার উপর জোর গুরুত্ব আরোপ করে এ লক্ষ্যে মানবিক অধিকারের সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপর জোর গুরুত্ব আরোপ করেন।
রাহুল বড়ুয়া ও রবার্ট নিক্সন ঘোষের সভাপতিত্বে পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদনের উপর আলোচনায় অংশ নেন রাহুল বড়ুয়া, অ্যাড. কিশোর কুমার বসু রায় চৌধুরী পিন্টু, বলরাম বাহাদুর, সুবল কুমার ঘোষ, শিমুল সাহাসহ বিভিন্ন জেলা ও মহানগর কমিটির প্রতিনিধিরা।
সম্মেলনে শিমুল কুমার সাহা, সজীব বড়ুয়া, মিল্টন সিভাস্টিন মন্ডলকে সভাপতি, সুবল কুমার ঘোষ, অধ্যাপক ড. সন্তোষ দেব, পিয়াস সরকারকে সহ-সভাপতি,ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বলকে সাধারণ সম্পাদক, হিল্লোল সরকার, দীপন বণিক ও সৈকত চৌধুরীকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সুজন রায়কে সাংগঠনিক সম্পাদক করে আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়।