হিল ভয়েস, ৫ জুন ২০২৪, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলার মৈদুং ইউনিয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক টহল অভিযান পরিচালনার সময় এক নিরীহ জুম্ম গ্রামবাসীকে আটক, গ্রামবাসীকে ব্রাশফায়ার করার হুমকি এবং বিনাপয়সায় গ্রামবাসীদের খাদ্যদ্রব্য খাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল ৪ জুন ২০২৪, সকাল ১০টার দিকে চার দিনের টহল অভিযান শেষে ক্যাম্পে ফিরে যাওয়ার সময় সেনা সদস্যরা মৈদুং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পানছড়ি গ্রাম থেকে রিতু চাকমা (৩০), পীং-লাল মোহন চাকমা নামে এক নিরীহ গ্রামবাসীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। দুপুর ২টার দিকে সেনা সদস্যরা ওই গ্রামবাসীকে নিয়ে বনযোগীছড়া সেনা জোনে পৌঁছায়। পরে সেনা সদস্যরা এক সেনা সদস্যের ফোন দিয়ে রিতু চাকমাকে তার স্ত্রীকে ফোন করতে বলে এবং ফোনে বাড়িতে পন্দক চাকমা, ব্যাং চাকমা ও জনসংহতি সমিতির সদস্যরা এসেছে কিনা জিজ্ঞেস করতে বাধ্য করে।
আরো জানা গেছে, সেনা সদস্যরা ফেরার সময় বেলতলা এলাকায় যেখানে হেলিপ্যাড নির্মাণ শুরু করা হয়েছে তার আশেপাশে ৭ জুম্ম পরিবারকে কয়েকদিনের মধ্যে তাদের বাড়িঘর ও জায়গা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে নির্দেশ দিয়েছে। সেনা সদস্যরা হুমকি দিয়ে এও বলেছে, আগামীতে তারা এলে ওই পরিবারগুলিকে সেখানে দেখতে পেলে ব্রাশফায়ার করে সবাইকে শেষ করা হবে।
শুধু তাই নয়, বেলতলায় অবস্থানকালে সেনা সদস্যরা গরীব জুম্ম পরিবারগুলির মজুদকৃত চাউল, মুরগী সহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী বিনাপয়সায় খেয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
এই অবস্থায় জুম্ম পরিবারগুলো অত্যন্ত অসহায়ত্ব ও জীবন-জীবিকার অনিশ্চয়তা প্রকাশ করছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত ১ জুন থেকে ৪ জুন ২০২৪ পর্যন্ত জুরাছড়ির বনযোগীছড়া সেনা জোন হতে ক্যাপ্টেন সাইদ ও ক্যাপ্টেন আসিফ এর নেতৃত্বে ৮৫ জনের একটি সেনাদল ৩নং মৈদুং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বেলতলা এলাকায় এবং ১নং জুরাছড়ি সদর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের জনতা পাড়া গ্রামে টহল অভিযান পরিচালনা করে।
উক্ত জায়গায় অবস্থানকালে সেনা সদস্যরা বেলতলা ও জনতাপাড়ার জুম্ম গ্রামবাসীর সকল মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে নিজেদের হেফাজতে রাখে। এতে জনগণের প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ও দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাপক ব্যাঘাতের সৃষ্টি হয়।
এছাড়া সেনা সদস্যরা বেলতলা এলাকায় ইন্দ্র মোহন চাকমা (৫৫), পীং-মৃত নাঙ্গা চাকমা এর নতুন রোপন করা ধানের জুম ধ্বংস করে একটি হেলিপ্যাড নির্মাণ করেছে বলে জানা যায়।
গতকাল ৪ জুন সকাল ১০ টার দিকে সেনা সদস্যরা বেলতলা এলাকা ছেড়ে চলে যায়।
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেনা সদস্যরা আটককৃত রিতু চাকমাকে ছেড়ে দেয়নি বলে জানা গেছে।