হিল ভয়েস, ২ জুন ২০২৪, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং জনসংহতি সমিতির বড়থলি ইউনিয়ন শাখার সভাপতি আতোমং মারমাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২ জনকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে।
ঘটনার দিন যে দুইজন দুর্বৃত্ত চেয়ারম্যানকে গুলি করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় তাদেরকে ১নং ও ২নং আসামি করে তাদের আরও ৬ সঙ্গীকে আসামি হিসেবে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
গত ৩১ মে, রাত ৮ টার দিকে নিহত চেয়ারম্যানের বড় ভাই ক্যসিংমং মারমা (৬১) বাদী হয়ে বিলাইছড়ি থানায় মামলাটি দায়ের করেন। উক্ত বিলাইছড়ি থানার মামলা নং-০১, তাং-৩১/৫/২০২৪ ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড।
মামলায় নামভুক্ত আসামিরা হলেন- ৪নং বড়থলি ইউনিয়নের ১। সাহ্লাচিং মারমা (৪২), পিতা-সাহ্লাউ মারমা, সাং-বড়থলি মারমা পাড়া, ৫নং ওয়ার্ড, ২। গুনচন্দ্র ত্রিপুরা (৩৫), পিতা-এরাজন ত্রিপুরা, সাং-বড়থলি ত্রিপুরা পাড়া, ৪নং ওয়ার্ড, ৩। ফিলিপ ত্রিপুরা (৫৫), পিতা-বিদ্যারাম ত্রিপুরা, সাং-বড়থলি ত্রিপুরা পাড়া, ৪নং ওয়ার্ড, ৪। ওয়াইভার ত্রিপুরা (৫০), পিতা-বিদ্যারাম ত্রিপুরা, সাং-বড়থলি ত্রিপুরা পাড়া, ৪নং ওয়ার্ড, ৫। সাপ্রুচিং মারমা (৩৫), পিতা-সাহ্লাউ মারমা, সাং-বড়থলি মারমা পাড়া, ৫নং ওয়ার্ড, ৬। সাধুচন্দ্র ত্রিপুরা (৫৩), পিতা-প্রভাত ত্রিপুরা, সাং-প্রাংজা পাড়া, ৭নং ওয়ার্ড, ৭। সত্যচন্দ্র ত্রিপুরা (৪৯), পিতা-লক্ষীচন্দ্র ত্রিপুরা, সাং-পুকুর পাড়া, ৬নং ওয়ার্ড, ৮। সুজন ত্রিপুরা (৫৭), পিতা-সুগচান ত্রিপুরা, সাং-পুকুরপাড়া, ৬নং ওয়ার্ড।
মামলার এজাহারে গত ২১ মে ২০২৪ রাত আনুমানিক ১১:৩০ টায় নিহত আতোমং মারমার স্ত্রীর ভাই চিংহ্লা অং মারমার (৫০) মাচাং ঘরে ভাত খাওয়ার সময় মাচাং এর নীচে আসামিরা অবস্থান নেয় এবং সেখান থেকে ১নং ও ২নং আসামি আতোমং মারমাকে বন্দুক দিয়ে গুলি করে বলে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য যে, আসামীদের মধ্যে সাহ্লাচিং মারমা (৩৫) ছিলেন আওয়ামীলীগের মনোনীত ৫নং ওয়ার্ড সদস্য প্রার্থী, ওয়াইভার ত্রিপুরা (৫০) হচ্ছেন আওয়ামীলীগের বড়থলি ইউনিয়ন কমিটির সহ সভাপতি এবং ৪নং ওয়ার্ডের ওয়ার্ড মেম্বার। মামলার অপর আসামি ফিলিপ ত্রিপুরা (৫৫) হচ্ছেন ওয়াইভার ত্রিপুরার আপন বড় ভাই। সত্যচন্দ্র ত্রিপুরা (৪৯) হলেন বড়থলি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ কমিটির সভাপতি এবং সাধুচন্দ্র ত্রিপুরা (৫৩) হলেন বড়থলি ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ কমিটির সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া সুজন ত্রিপুরা (৫৭) স্থানীয় আওয়ামীলীগের কর্মী, সংস্কারপন্থী জেএসএসের সহযোগী এবং ২০১৫ সালের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আতোমং মারমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বলে জানা গেছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপরই গুরুতর আহত আতোমং মারমাকে স্থানীয় বড়থলি সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে উপস্থিত সেনা কর্মকর্তাদের নিকট চেয়ারম্যান আতোমং তাকে গুলি করার সাথে জড়িত চার জনের নাম উল্লেখ করেন। অভিযুক্তরা হলেন সাহ্লাচিং মারমা, ওয়াইভার ত্রিপুরা, গুণচন্দ্র ত্রিপুরা ও ফিলিপ ত্রিপুরা।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের অভিযোগ, এই হত্যাকান্ডের পেছনে ঐ দিন অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আওয়ামীলীগের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী অভিলাষ তঞ্চঙ্গ্যারও প্রত্যক্ষ ইন্ধন ও হাত রয়েছে।
উল্লেখ্য, ঘটনার দিন ছিল দেশের ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদের ২য় ধাপের সাধারণ নির্বাচনের আওতায় বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। বড়থলি ইউনিয়ন এলাকার নির্বাচন কার্যক্রম সমাপ্ত হওয়ার পর চেয়ারম্যান আতোমং মারমা বড়থলি মারমা পাড়া গ্রামে তার স্ত্রীর ভাই চিংহ্লা অং মারমার (৫০) মাচাং ঘরে ভাত খেতে বসেছিলেন। এমন সময় দুর্বৃত্তরা এসে পরপর গুলি করে চলে যায়।
ঐদিন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জনসংহতি সমিতি সমর্থিত প্রার্থী বীরোত্তম চাকমা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন।
২০১৫ সালে বড়থলি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জনসংহতি সমিতি সমর্থিত প্রার্থী আতোমং মারমা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত সে পদে বহাল রয়েছেন। মাঝখানে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত হয়ে যায়।
উল্লেখ্য যে, ২১ মে, রাতে বাম কাঁধে, বাম উরুতে ও বুকের ডান পাশে গুলি লেগে গুরুতর আহত হন আতোমং মারমা। ঘটনার পরপরই গুলিবিদ্ধ আতোমং মারমাকে প্রথমে স্থানীয় বড়থলি পাড়া সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসীরা মধ্যরাতেই আতোমং মারমাকে বান্দরবানের রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরদিন সেখান থেকে তাকে প্রথমে বান্দরবান জেলা সদর হাসপাতালে এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ট্রোপসারের পর আহত চেয়ারম্যানের শরীর থেকে চারটি গুলি বের করেন চিকিৎসকরা। এরপর থেকে তিনি সেখানে লাইফ-সাপোর্টে আইসিইউতে ছিলেন বলে জানা যায়।
এরপর গত ৩০ মে, রাত ১১:৩৮ টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন চেয়ারম্যান আতোমং মারমা।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ কর্তৃক এব্যাপারে কাউকে গ্রেপ্তার করার খবর পাওয়া যায়নি।