চট্টগ্রামে পাহাড়ী শ্রমিক ফোরামের উদ্যোগে এসএসসি উত্তীর্ণ আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা

হিল ভয়েস, ১ জুন ২০২৪, চট্টগ্রাম: গতকাল (৩১ মে) বিকাল ৪ টায় চট্টগ্রামের ব্যারিস্টার সুলতান আহমদ চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ আইটিসি ভবনের মিলনায়তনে চট্টগ্রাম শহরে বসবাসরত ২০২৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আদিবাসী শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক পরিচিতি সভা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরাম।

‘জুম্ম আদিবাসীদের ঘরে ঘরে শিক্ষার জন্য সোচ্চার হই, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনে সামিল হই’ শ্লোগান দিয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সভাপতি দিসান তঞ্চঙ্গ্যার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের নেতা এস জে চাকমা এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সহ-সভাপতি অনিল বিকাশ চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি হ্লামিও মারমা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্তর চাকমা। অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জগৎ জ্যোতি চাকমা এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী শ্রমিক ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক সন্তোষ বিকাশ চাকমা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি এস জে চাকমা বলেন, শিক্ষা হচ্ছে জাতির মেরুদন্ড, তাই আমাদের বাস্তবমুখী শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। আত্মমুখী শিক্ষা গ্রহণ না করে গণমুখী শিক্ষা গ্রহণ করা দরকার। কারণ পৃথিবীতে যোগ্যরাই টিকে থাকে।

তিনি আরও বলন, জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভাল। জন্ম আমাদের যেখানে হোক না কেন! পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রান্তিক এলাকাগুলোর মধ্যে যেমন-সাজেক দুর্গম এলাকা, জুরাছড়ির দুমদুম্যা এলাকাগুলোতে ভাল কোনো স্কুল নেই। আমাদের মত পিছনে পড়া জাতিরা টিকে থাকতে হলে যোগ্য হয়ে উঠতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ফলে জুম্ম ছাত্রদের বিদেশে গিয়ে পড়ালেখা করার সুযোগ হয়েছে। যেমন-অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে বড় বড় ডিগ্রী নিচ্ছে, আমাদের পারিবারিকভাবে সচেতন না হলে এই বয়সে তারা কিশোর গ্যাং-এ যুক্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

অনিল বিকাশ চাকমা বলেন, আজকে যারা এসএসসি পরিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছ, আমরা তোমাদের মা-বাবা পরিবারের সাথে দীর্ঘবছর পরিচিত। তোমাদের মা-বাবার বাস্তবতাকে উপলব্ধি করা দরকার। মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। এখন ভাল শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তোমার আর নিজের মাতৃভূমির চিন্তাও করতে হবে।

হ্লামিও মারমা বলেন, পৃথিবীতে মানুষ তার বিধাতার থেকে কিছুই নিয়ে আসে না। যারা আজকে এসএসসি পাস করেছেন তোমাদের আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে। মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় হয়। তুমি যত বড় স্বপ্ন দেখবে, তুমি ততবড় হতে পারো। তোমাদের লেখাপড়া হতে হবে এই পৃথিবীর জন্য, এই দেশের জন্য, এই জাতির জন্য এবং নিজের জন্য।

অন্তর চাকমা বলেন, তোমরা শহরে থেকে এসএসসি পাস করলেও নিজের শেকড়ের প্রতি টান রেখো। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্যালয়গুলোর অবস্থা বেহাল। মানুষ বড় স্বপ্ন দেখলে তবেই বড় হয়। নিজেকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করো এবং পাহাড়ের নিজের সমাজ এবং পরিস্থিতিকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে। আধুনিক যুগে প্রযুক্তি অনেকের আশীর্বাদ, আর কারও কাছে অভিশাপ বলে মনে করি।

সভার সভাপতি দিসান তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, মহান পার্টি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির অঙ্গসংগঠন হিসেবে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম শহরে আদিবাসী শ্রমিক মেহনতী মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে এই বছর এই মহৎ উদ্যোগটি গ্রহণ করা হয়। তবে বিগত সময়ে বিঝুর সময় কৃতি ছাত্র/ছাত্রী এবং আদিবাসী শিক্ষকদের সম্মাননা প্রদান করা হলেও এইভাবে কখনো হয়নি। এইবছর থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছর এই এসএসসিতে কৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া অব্যাহত থাকবে।

More From Author

+ There are no comments

Add yours