হিল ভয়েস ,২৮ জুন ২০২৪, রাঙ্গামাটি: গত ২৭ জুন ২০২৪ রোজ বৃহস্পতিবার পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাঙ্গামাটি জেলা শাখার উদ্যোগে মনতোষ, সমর বিজয়, সুকেশ ও রুপম চাকমা’র ২৮ তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভা ও মোমবাতি প্রজ্বলন অনুষ্ঠিত হয়।
পিসিপি রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সহসাধারণ সম্পাদক রনেল চাকমার সঞ্চালনায় ও পিসিপি রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সহসভাপতি মিন্টু চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সদস্য রিতেশ চাকমা,হিল উইমেন্স ফেডারেশন, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এলি চাকমা, পিসিপি রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন চাকমা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, “লে: ফেরদৌসের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও ভিডিপির একদল সদস্য কর্তৃক ১৯৯৬ সালের ১২ জুন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমাকে অপহরণ ও ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে একই বছরের ২৭ জুন সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এবং ভি ডি পি ও সেটেলার বাঙালিদের আক্রমণে শহীদ হওয়া মনোতোষ, সমর বিজয়, সুকেশ ও রুপম চাকমা হত্যার ২৮ বছর পার হলেও উভয় ঘটনায় এখনও সুষ্ঠু বিচার হয়নি। এমনকি চারজন ছাত্রনেতা হত্যাকান্ডের ঘটনায় কোন ধরনের মামলাও হয়নি।
২৮ বছর ধরে বিচারের দাবিতে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলেও সরকার কিংবা শাসকগোষ্ঠী কোনো ধরনের কর্ণপাত করেনি। উল্টো ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে নানা ধরনের নাটক মঞ্চস্থ করতে চলছে। এই হত্যাকান্ডের অবশ্যই বিচারবিভাগীয় তদন্ত করতে হবে এবং হত্যাকান্ডে জড়িত ভি ডি পি সদস্য ও সেটেলার বাঙালিদের বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
বক্তারা আরও বলেন, “মনোতোষ-সুকেশ-সমরবিজয়-রুপন চাকমাকে হত্যার একটিমাত্র উদ্দেশ্য; সেটি হলো- জুম্ম জনগণের চলমান আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে গলা টিপে হত্যা করা, ছাত্রসমাজের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়ে রাজনীতি বিমুখ করা। কল্পনা চাকমার অপহরণের প্রতিবাদে গর্জে উঠা গণআন্দোলন যাতে গোড়াতেই স্তিমিত হয়ে যায় তার জন্যই এই হত্যাকান্ড।
শাসকগোষ্ঠী কল্পনা চাকমাকে অপহরণ ও চার ছাত্রনেতাকে হত্যা করে তাদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করতে সক্ষম হলেও তাঁদের যে চেতনা ও আদর্শ সেটিকে দমাতে পারেনি। বরং তাঁদের আর্দশ, সংগ্রামী চেতনা ও আত্মত্যাগ সমগ্র জুম্ম সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে যার ফলে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনে হাজার হাজার ছাত্র-যুব এগিয়ে আসছে এবং অধিকার ফিরিয়ে না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে।”
উল্লেখ যে, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন মধ্যরাতে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা অপহৃত হন তৎকালীন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদিকা কল্পনা চাকমা। তারই অপহরণের প্রতিবাদে ও কল্পনা চাকমার সন্ধান চেয়ে পাহাড়ী গণপরিষদ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন যৌথভাবে ১৯৯৬ সালের ২৭ জুন বাঘাইছড়িতে অর্ধদিবস নৌ- সড়ক পথ অবরোধ কর্মসূচি আহ্বান করে।
অবরোধ কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে রুপম চাকমা(১৬) নামে একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী ভিডিপি কর্তৃক নির্মমভাবে গুলিতে নিহত হন। পরে তার লাশ আর পাওয়া যায়নি।অন্যদিকে অবরোধ পালনকালে মনোতোষ চাকমা(২০), সমর বিজয় চাকমা(১৮) ও সুকেশ চাকমা(১৬) সেটেলার বাঙালি কর্তৃক গুমের শিকার হন। পরবর্তীতে তাদের লাশ আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও সেদিন কমপক্ষে ১৬ জন অবরোধকারী ভি ডি পি ও সেটেলারদের হামলায় আহত হয়। আজ অবধি এই চারজনের হত্যাকারীদের বিচার করা হয়নি।