হিল ভয়েস, ১৫ জুন ২০২৪, বিশেষ প্রতিবেদক: রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রায় সময় রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং আরাকান রোহিঙ্গা সালভাশন আর্মী (আরসা) বাহিনীর যুদ্ধের ঘটনা হয়ে থাকে। গত ১০ জুন ২০২৪ টেকনাফ রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আরএসও এবং আরসার তুমুল যুদ্ধ হয় এবং যুদ্ধে ৩ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী নিহত হয়েছে এবং ১০/১২ জন কক্সবাজার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এইসব যুদ্ধের কারণে নিরাপত্তার অভাবে শত শত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প ত্যাগ করে নিজ নিজ ইচ্ছামাফিক কক্সবাজার ও বান্দরবান পার্বত্য জেলায় ঢুকে পড়েছে। এই ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের নেই কোন তদারকি ও নজরদারি।
রোহিঙ্গা শরণার্থীর কারণে কক্সবাজার ও বান্দরবান পার্বত্য জেলায় চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, মাদক ব্যবসা, অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যকলাপ ইত্যাদি অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরএসও, আরসা, রোহিঙ্গা সকলে যার যার মতো স্বাধীনভাবে ইয়াবা পাচার, স্বর্ণ পাচার, গরু পাচার কাজে যুক্ত রয়েছে। এইসব বিষয়ে স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন জানলেও না-জানা ভান করে থাকেন।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, আরসা বাহিনীর সহযোগিতায় মায়ানমারের আরাকানে আরাকান আর্মী (এএ)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও রাখাইনদের উপর সহিংসতা ঘটনা করার জন্য শত শত শরণার্থী মায়ানমারের আরাকানে পাড়ি দিয়েছে এবং আরাকানে মায়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।
মায়ানমার জান্তার উদ্দেশ্য হচ্ছে, রোহিঙ্গা শরণার্থী ও আরসা বাহিনীকে এএ-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া এবং রাখাইনদের গ্রাম জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে ধ্বংস করা। কক্সবাজার শরণার্থী শিবির থেকে যে সকল রোহিঙ্গা আরাকানে পাড়ি দিয়েছে, তাদেরকে মায়ানমার সেনাবাহিনী লাল কার্ড দিয়ে থাকেন। যার লাল কার্ড রয়েছে, তার জন্য সকল প্রকার খাওয়া ও সুযোগ সুবিধা ফ্রী।
আরসা ও রোহিঙ্গাদের আরাকান পাড়ি দেয়ার বিষয়ে কক্সবাজার জেলার এপিবি, বিজিবি, আর্মি, এনএসআই, ডিজিএফআইয়ের সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং ইন্ধন দিয়ে থাকেন মর্মে জানা যায়।
আরাকান সুত্রে জানা যায়, মায়ানমার সেনাবাহিনী আরসা ও রোহিঙ্গাদেরকে লেলিয়ে দিয়ে রাখাইন ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ১৯৯১ ও ২০১৫ সালে মায়ানমার আরাকান থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ এবং বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় রোহিঙ্গাদের জন্য শরণার্থী ক্যাম্প তৈরী করে আশ্রয় দেয়া হয়, যার রোহিঙ্গা জনসংখ্যা ১৮ লক্ষ অধিক রয়েছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থীর ক্যাম্প আরসা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে এবং আরসাদের পরিচালনার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অসামাজিক, অনৈতিক, খুন, রাহাজানি, অপহরন, ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসা, চাঁদা আদায় ইত্যাদি চলে। এইসব অপরাধ কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আরসা বাহিনীর নিকট জিম্মি এবং পুলিশ, বিজিবি, প্রশাসন এইসব অপরাধ জেনেও না জানার ভান করে থাকতে হয়।
রোহিঙ্গা শিবিরের লক্ষ লক্ষ শরণার্থী সমগ্র কক্সবাজার জেলা এবং বান্দরবান জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দিনমজুর, হোটেল বয়, ইটভাটা শ্রমিক, রিকশা চালক ইত্যাদি কাজে যুক্ত হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভাসমান জীবন-জীবিকা গ্রহণ করে বসবাস করছে এবং অনেক অনেক রোহিঙ্গা স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলে মিশে যাচ্ছে।
বান্দরবানে প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় রোহিঙ্গাদের স্থায়ী বাসিন্দার সনদপত্র দেয়া হচ্ছে ও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। স্থায়ী বাসিন্দার সনদপত্র দিয়ে রোহিঙ্গারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভতি ও চাকরিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছে।