হিল ভয়েস, ৪ মে ২০২৪, রাঙ্গামাটি: পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মদের উপর সংঘটিত অন্যতম বর্বরোচিত গণহত্যা ‘লংগদু গণহত্যা’র ৩৫তম দিবস উপলক্ষে রাঙ্গামাটি জেলার লংগদুতে এক স্মরণ সভা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্মরণ সভায় গণহত্যায় জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের চিহিত করে বিচারের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি বিধানের দাবি জানানো হয়েছে।
আজ (৪ মে) সকাল ৯ টার দিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), লংগদু থানা শাখার উদ্যোগে লংগদু উপজেলার ৪নং বগাচতর ইউনিয়নের অন্তর্গত চিবেরেগা গ্রামে দিবসটি উপলক্ষে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
পিসিপি’র লংগদু থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক রিন্টুমনি চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন পিসিপি’র লংগদু থানা শাখার সহ-সভাপতি সুদীর্ঘ চাকমা। স্মরণসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জনসংহতি সমিতির লংগদু থানা শাখার কৃষি ও ভূমি বিষয়ক সম্পাদক বিনয় প্রসাদ কার্বারি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জনসংহতি সমিতির লংগদু থানা কমিটির সদস্য তপন জ্যোতি কার্বারি, জনসংহতি সমিতির লংগদু থানা কমিটির সদস্য বিধান চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির লংগদু থানা কমিটির সভাপতি দয়াল কান্তি চাকমা, চিবেরেগা গ্রামের মুরুব্বি সুভাষ চাকমা, চাল্যাতুলি গ্রামের মুরুব্বি শান্তিলাল চাকমা প্রমুখ। এছাড়া স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র লংগদু থানা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সাধন জীবন চাকমা।
স্মরণ সভার শুরুতে গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে ২ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। স্মরণ সভায় বক্তাগণ, শহীদদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। আলোচনায় বক্তাগণ গণহত্যায় জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।
অপরদিকে একই সময়ে লংগদু উপজেলা সদরস্থ তিনটিলা বন বিহারে শহীদ পরিবারদের পক্ষ থেকে শহীদের স্মরণে পারলৌকিক সুগতির উদ্দেশ্যে মহতী পূণ্যানুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।
উল্লেখ্য যে, লংগদু গণহত্যা পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী ও অবৈধ অনুপ্রেবশকারী মুসলিম বাঙালি সেটেলারদের কর্তৃক আদিবাসী জুম্মদের উপর সংঘটিত অন্যতম মানবতাবিরোধী ভয়াবহ গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। ১৯৮৯ সালের এই দিনে প্রায় সন্ধ্যার দিকে এই গণহত্যাকান্ড ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা শুরু হয়। ৪ মে শুরু হয়ে ৬ মে পর্যন্ত অব্যাহত থাকে এই পাশবিক ধ্বংসলীলা। শিশু, নারী ও বৃদ্ধসহ ৩২ জন জুম্ম নিহত হয় এই গণহত্যায়, আহত হয় অন্তত ১১ জন এবং লংগদু সদরসহ লংগদুর আশেপাশের ৯টি গ্রামের ১০১১টি ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে ছারখার করে দেয়া হয় এবং লুটপাট চালানো হয়। একটি সরকারি প্রাথমিক ও একটি উচ্চ বিদ্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ৬টি বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ধ্বংসলীলা চালানো হয়। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয় এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়। অনেকেই প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।
জানা যায়, হামলার মূল হোতা ও নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিরা হলেনঃ- (১) মেজর জাকির হোসেন, ১৪ ই বি আর, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, মাইনীমুখ সেনা জোন হেডকোয়ার্টার্স, লংগদু, (২) ইউসুফ আলী (সেটেলার), ঠিকানা- ইসলামাবাদ (সেটেলার বসতি), সোনাই এলাকা, লংগদু, (৩) রুহুল আমিন (সেটেলার), মেম্বার, মাইনীমুখ ইউনিয়ন পরিষদ, সোনাই এলাকা, লংগদু, (৪) নূরুল ইসলাম তালুকদার, ঠিকানা- সোনাই এলাকা, (৫) সিরাজ (সেটেলার), চেয়ারম্যান, আটরকছড়া ইউনিয়ন পরিষদ, লংগদু।
দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব ও মহলের উদ্যোগে নানাভাবে উক্ত গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝর ওঠে। কিন্তু এরপরও এবং এখনও পর্যন্ত লংগদু গণহত্যার বিষয়ে কোনো প্রকার তদন্ত এবং দোষীদের উপযুক্ত শান্তি প্রদানের জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসমূহকেও যথাযথ ক্ষতিপূরণের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।