হিল ভয়েস, ১৯ মে ২০২৪, বান্দরবান: বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার রোনিন পাড়া এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি টহল দলের সদস্যদের ব্রাশ ফায়ারে তিন নিরীহ বম ছাত্র নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
আজ (১৯ মে) ভোর ৫ টায় এই হত্যাকান্ডটি ঘটেছে বলে জানা গেছে।
ঘটনার পর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কতিপয় গণমাধ্যমে নিহতদের কেএনএফের সন্ত্রাসী হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
ভুক্তভোগী বম ছাত্ররা হলেন- ১. এডি থাং বম (২৪), পীং-ভান মুন বম, ছাত্র, বিএ (অনার্স), বান্দরবান সরকারি কলেজ; ২. রুয়াল সাং নুয়ান বম (১৬), পীং-সিম কুয়াল বম, এস এস সি শিক্ষার্থী, রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং ৩. রুয়াল মিন লিয়ান বম (২০), পীং-জিরথন বম, ছাত্র, নুয়া পাড়া স্কুল এন্ড কলেজ। তাদের সকলের বাড়ি রোয়াংছড়ির রোনিন পাড়া গ্রামে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ ভোর রাতে সেনাবাহিনীর একটি টহল দল রোনিন পাড়া ও দেবাছড়া এলাকার মধ্যবর্তী পাইন্দু খাল এলাকায় কেএনএফের একটি সশস্ত্র দলের মুখোমুখি হয়। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় হলেও কোনো পক্ষ থেকে হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি।
উক্ত ঘটনার রেশ ধরে সেনা টহল দলটি দেবাছড়া পাড়ার কার্বারির ছেলে ভাজ্য কুমার তঞ্চঙ্গ্যা (৩৫), পীং- সুশীল কার্বারি-কে ধরে জোরপূর্বক রোনিন পাড়ায় নিয়ে যায়। এমন সময় সেনাবাহিনীর টহল দলটি একটি জুমঘরে উক্ত তিন ছাত্রকে দেখতে পেলে তাদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ ও মর্টারশেল নিক্ষেপ করে। এতে ছাত্ররা ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
বর্তমানে বম পার্টি খ্যাত কেএনএফ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর চলমান সামরিক অভিযানের ভয়ে গ্রাম থেকে পালিয়ে উক্ত তিন ছাত্র রোয়াংছড়ির রোনিন পাড়া এলাকায় একটি জুমঘরে অবস্থান করছিলেন।
পরে সেনবাহিনীর পক্ষ থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ওই ছাত্রদের ‘কেএনএফের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ৩ সন্ত্রাসী নিহত’ এবং ‘অস্ত্র, বেতার যন্ত্র ও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে’ বলে প্রচার করে।
লাশগুলো রোয়াংছড়ি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বম সম্প্রদায়ের এক অধিকারকর্মী সেনাবাহিনী কর্তৃক কেএনএন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানের নামে নিরীহ ছাত্রদের এভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ও ঠান্ডা মাথা গুলি করে হত্যা করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
এ নিয়ে গত ৭ এপ্রিল থেকে যৌথবাহিনী কর্তৃক কেএনএফের বিরুদ্ধে অভিযানের নামে নিরীহ ৯ জনকে গুলি করে হত্যা করা হলো। তার মধ্যে গত এপ্রিলের মাঝামাঝিতে সেনাবাহিনী কর্তৃক বিএ অনার্স পড়ুয়া এক নিরীহ বম ছাত্রকে, ২ মে রোয়াংছড়ির পাইনখ্যং পাড়া গ্রামে ৫ জন বম গ্রামবাসীকে এবং অদ্য (১৯ মে) ৩ জন ছাত্রকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
উল্লেখ্য, গত ২ ও ৩ এপ্রিল পরপর রুমার সোনালী ব্যাংক শাখা এবং থানচির সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংক শাখায় ডাকাতি করে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা অর্থ সহ ১৪টি অস্ত্র লুট করলে সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআই-এর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী কেএনএফের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।
আরো উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং ভাগ করো শাসন করো উপনিবেশিক নীতির ভিত্তিতে একের পর এক সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ গঠনের ষড়যন্ত্র হিসেবে সেনাবাহিনী কর্তৃক কেএনএফ সৃষ্টি করা হয়। পরে অর্থের বিনিময়ে কেএনএফ কর্তৃক ইসলামী জঙ্গী গোষ্ঠীকে আশ্রয় ও সামরিক প্রশিক্ষণের তথ্য ফাঁস হলে আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে সেনাবাহিনী তথা বাংলাদেশ সরকার বাধ্য হয় কেএনএফের সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে। এভাবে আজ কেএনএফ সেনাবাহিনীর বুমেরাং ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।