হিল ভয়েস, ৩ মে ২০২৪, বিশেষ প্রতিবেদক: বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার ক্যাপলাং পাড়া এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি টহল দলের উপর কেএনএফ সশস্ত্র সদস্যদের অতর্কিত হামলায় সেনাবাহিনীর ১ সদস্য নিহত এবং ৬ সদস্য আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
অপরদিকে, ঘটনার পরপরই সেনাবাহিনীর একটি দল একই উপজেলার পাইনখ্যং পাড়ায় গিয়ে ঠান্ডা মাথায় ৫ বম নিরীহ গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল (২ মে) বিকালের দিকে পরপর উক্ত উভয় ঘটনা ঘটেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। তবে, এ পর্যন্ত উক্ত ঘটনার ব্যাপারে সেনাবাহিনী ও কেএনএফের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল বিকাল আনুমানিক ৩ টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল ক্যাপলং পাড়া এলাকায় টহল অভিযান চালানোর সময় কেএনএফের একটি সশস্ত্র দল হঠাৎ তাদের উপর হামলা চালায়। এসময় সেনাবাহিনীর ৭ সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের মধ্যে একজন সেনা সদস্য ক্যাপলাং এলাকাতেই মারা যায়। দ্রুত অবশিষ্ট আহত ৬ সেনা সদস্যকে রোয়াংছড়ি উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেই আহতদের রোয়াংছড়ি সেনা ক্যাম্প হতে হেলিকপ্টার যোগে চট্টগ্রামের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা যায়।
স্থানীয় সূত্র আরো জানায়, উক্ত হামলার শিকার হওয়ার কিছুক্ষণ পরই সেনাবাহিনীর একটি দল পার্শ্ববর্তী পাইনখ্যং পাড়া গ্রামে গিয়ে গ্রামটি চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। এসময় সেনাদলটি গ্রামে থাকা ২০ জন নিরীহ বম পুরুষকে আটক করে একটি স্থানে জড়ো করে। এরপর সেনা সদস্যরা ২০ জনের মধ্য থেকে ৫ জন গ্রামবাসীকে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করে।
হত্যার শিকার ৫ গ্রামবাসী হলেন- (১) পিটর বম, পীং-সানথক বম, তিনি পাইনখ্যং পাড়ার কার্বারি; (২) ভানলালথুয়াল বম, পীং-ভানচনহ বম, গ্রাম-পাইনখ্যং পাড়া; (৩) রামচনহ বম, পীং-লালডেং বম, গ্রাম-পাইনখ্যং পাড়া; (৪) লালচনসাং বম, পীং-নানকুপ বম, গ্রাম-পাইনখ্যং পাড়া এবং (৫) লালরেমসাং বম, গ্রাম-লাই পাড়া।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, কেএনএফ সদস্যদের হামলার শিকার হওয়ার পর সেনাবাহিনী প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ঠান্ডা মাথায় নিরপরাধ ও নিরীহ গ্রামবাসীদের গুলি করে হত্যা করেছে।
সেনাবাহিনী ৫ জনকে হত্যার কথা স্বীকার না করলেও কেবল নিহত লালচনসাং বম কেএনএফের সদস্য বলে প্রচার করেছে বলে জানা গেছে। তবে, গ্রামবাসীদের দাবি, লালচনসাং বমও কোনোভাবেই কেএনএফের সাথে জড়িত ছিলেন না।
উল্লেখ্য, গত ২ ও ৩ এপ্রিল পরপর রুমার সোনালী ব্যাংক শাখা এবং থানচির সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংক শাখায় ডাকাতি করে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা অর্থ সহ ১৪টি অস্ত্র লুট করলে সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআই-এর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী কেএনএফের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।
অভিযান চলাকালে গত ১৯ এপ্রিল ২০২৪ বান্দরবানের রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়ন এলাকায় কেএনএফ সন্ত্রাসীদের গুলিতে ১ সেনা সদস্য নিহত এবং ২ সেনা সদস্য গুরুতর আহত হওয়ার বলে খবর পাওয়া যায়।
অপরদিকে, গত ২৯ এপ্রিল, রুমা উপজেলার রেমাক্রি-প্রাংসা ইউনিয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ হলে তাতে কেএনএফের ২ সশস্ত্র সদস্য নিহত এবং ৩টি বন্দুক সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম সেনাবাহিনীর হস্তগত হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর চলমান কেএনএফ বিরোধী অভিযানে গত ৭ এপ্রিল থেকে এই পর্যন্ত মোট ১১৬ জনকে গ্রেপ্তার ও আটক করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে কেএনএফের সাথে ৫ জন সম্পৃক্ত থাকলেও বাকিরা সকলেই শিশু, নারী সহ নিরীহ সাধারণ নাগরিক। এছাড়া সেনাবাহিনী কর্তৃক একজন বম ছাত্রকে ক্রসফায়ারের নামে ঠান্ডা মাথায় গুলি হত্যা করা হয়েছে এবং একজন নারী মর্টারশেলের আঘাতে জখম হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং ভাগ করো শাসন করো উপনিবেশিক নীতির ভিত্তিতে একের পর এক সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ গঠনের ষড়যন্ত্র হিসেবে সেনাবাহিনী কর্তৃক কেএনএফ সৃষ্টি করা হয়। পরে অর্থের বিনিময়ে কেএনএফ কর্তৃক ইসলামী জঙ্গী গোষ্ঠীকে আশ্রয় ও সামরিক প্রশিক্ষণের তথ্য ফাঁস হলে আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে সেনাবাহিনী তথা বাংলাদেশ সরকার বাধ্য হয় কেএনএফের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে। এভাবে আজ কেএনএফ সেনাবাহিনীর বুমেরাং ইস্যতে পরিণত হয়েছে।